মানবিকতার অনন্য এক উপমা তিনি। প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি, অসীম সাহস আর দুর্দান্ত নেতৃত্বগুণেও অতুলনীয়। উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা নিজ বাহিনীর কনিষ্ঠদের কাছেও সমানভাবে জনপ্রিয়। নেতৃত্ব দিয়েছেন যেখানে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন সেখানেই। মানবসেবার মহান ব্রত নিয়েই অব্যাহত রেখেছেন তাঁর অহর্নিশ পথচলা। একেবারেই ধ্রুব সত্য। ঠিক যেন জানেন সর্বজয়ী হওয়ার মহামন্ত্র।
গোটা পুলিশ বাহিনীতে একজন ‘চেঞ্জ মেকার’ হিসেবেই স্বীকৃত। ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েই খ্যাত হয়েছেন স্বনামে। তিনি পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। কর্মের মাধ্যমেই সমসাময়িকদের সঙ্গে নিজের পার্থক্য গড়েছেন। কুশলী নেতৃত্ব, দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে মানবিক মূল্যবোধের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন। সুনাম, নানান কীর্তি ও কৃতিত্বে ঠাঁই করে নিয়েছেন সেরাদের তালিকায়।
ছকে বাঁধা জীবনের বাইরে এসে আলোকময় ঝর্ণাধারায় স্নাত হয়েই একজন ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিনির্মাণ করেছেন নিজেকে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বেদে সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করেছেন। অনেকটাই ‘অচ্ছুত’ যৌনপল্লীর শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন। মেধাবৃত্তির আওতায় এনেছেন। নিজের একক প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে টেলিকম ভবনে গড়ে তুলেছেন ঐতিহাসিক স্থাপনা পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সব কর্মেই অদ্ভুত বিশালত্বের এক মায়াবি বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন। উজ্জ্বল করেছেন নিজ বাহিনীর সুনাম-সুখ্যাতি। সিক্ত হয়েছেন সাধারণের ভালোবাসায়।
গোপালগঞ্জের সুমৃত্তিকায় জন্ম নেওয়া ডিআইজি হাবিবুর রহমান ইতিহাসের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন আদর্শে নিজেকে বলীয়ান করেছেন দুরন্ত শৈশবেই। ইতিবাচক কর্মযজ্ঞের দ্যুতিতে আস্থা কুড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। স্নেহসিক্ত হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আপত্য স্নেহে। অনেক সাকসেস স্টোরির এই জনক লেখালেখিতেও সমানভাবে হাত পাঁকিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে তাঁর সম্পাদিত প্রথম গ্রন্থ ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’। ২০১৮ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা উপস্থাপন করে রচনা করেন ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’। ইতোমধ্যে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণও বাজারে রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) হিসেবে এক সময় দায়িত্ব পালন করেছেন হাবিবুর রহমান। ২০১৯ সালের ১৬ মে থেকে সামলাচ্ছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির গুরুদায়িত্ব। এরপর থেকেই ঢাকা রেঞ্জের প্রতিটি থানাকে পুলিশী সেবার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছেন। পুলিশী সেবাকে জনবান্ধব, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত করতে কার্যকর বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সেবা প্রত্যাশীদের মন থেকে থানা ভীতি দূর করতে সক্ষম হয়েছেন।
ঢাকা রেঞ্জের ৯৮ থানাকে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে এসেছেন। অডিও-ভিডিও সাপোর্টেবল ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রেঞ্চ ডিআইজি কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এক মনিটরেই সব থানা পর্যবেক্ষণ ও নিজেদের নখদর্পণে রাখা হচ্ছে। সেন্ট্রি, ডিউটি অফিসার ও হাজতখানার কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক তদারকির আওতায় আসায় নিশ্চিত হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।
ডিআইজি হাবিবুর রহমানের এই প্রয়াসের প্রশংসা করেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকও। তিনি বলেছেন, ‘থানাগুলো মনিটরিং করতে এই উদ্যোগ ব্যতিক্রমী। এই উদ্যোগে সেবাপ্রত্যাশী সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।’
শুধু তাই নয়, সন্ত্রাস, মাদক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ বন্ধে মসজিদে মসজিদে ছুটছেন ঢাকা রেঞ্জের ৯৮ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি)। প্রতি জুম্মার নামাজের আগে মসজিদে মসজিদে তারা বক্তব্য দিচ্ছেন। ওসিরা নিজের মুখেই বলছেন, জিডি বা মামলা করতে কোন টাকার প্রয়োজন নেই। পুলিশী সেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিতে ডিআইজি হাবিবুর রহমানের অভিনব এই উদ্যোগ ফলদায়ক হয়েছে।
ভালোবাসার অমল প্রদীপ হয়েই আলো ছড়িয়েছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। সম্ভবত তার কর্মের পুরস্কার হিসেবে তাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
দ্রুতই ফাঁকা হচ্ছে রাজধানীর পুলিশপ্রধানের চেয়ার। ডিএমপি প্রধান হতে অনেকেই চেষ্টা তদবির করছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি ডিআইজি হাবিবের মুখেই দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের ৭৭ তম অধিবেশন থেকে ফিরেই প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করবেন পরবর্তী ডিএমপি কমিশনার। বিভিন্ন সূত্রের আভাস, এই পদটিতে ঘুরেফিরেই উচ্চারিত হচ্ছে ডিআইজি হাবিবুর রহমানের নাম। নেতৃত্ব, দক্ষতা ও পুলিশের অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা বিবেচনাসহ সবদিক বিবেচনা করেই এই পদেই সম্ভবত আসছেন ‘দ্য চেঞ্জ মেকার, ডিআইজি হাবিব।’