হিমালয়ের নিকটবর্তী জেলা লালমনিরহাটে শীতের তাণ্ডবে জবুথবু স্থানীয়রা। শীতে ঠকঠক করে কাঁপে বৃদ্ধরা। কষ্টের শেষ নেই ছিন্নমূলের। দাঁতে দাঁত চেপে জড়সড় হয়ে বসে থাকে কাঁপুনি ঠেকাতে। হাড়কাঁপানো শীত ওদের জন্য যেন অভিশাপ। গরম কাপড়ের অভাব যেন কান্নারই প্রতিরূপ! খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের সাহায্যে শীত নিবারণ করে চলেছেন অসহায় শীতার্তরা। একটু সূর্যের আলো তাদের কাছে সোনার চেয়েও দামি!
শীতের তীব্রতার অসহনীয় মাত্রায় খাবি খাওয়া এমনই প্রায় ৬ হাজার দু:স্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে উষ্ণতা বিলিয়ে দিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে স্থানীয় হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়নের তিস্তা ব্যারাজ সংলগ্ন দোয়ানী এলাকায় র্যাব-১৩ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব মানুষের হাতে কম্বল তুলে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি র্যাবের মানবিক কর্মযজ্ঞের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। র্যাব মানুষের হৃদয় জয় করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন। মন্ত্রীর উপস্থিতিতে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন এমন ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছেন।
শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের সময় অত্যন্ত আন্তরিকতা, সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সুমহান দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে র্যাব ফোর্সেসের প্রতিটি সদস্য। এছাড়াও, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত অভিযান পরিচালনা এবং পথভ্রষ্ট জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসন এর মত মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে র্যাব। কার্যকরভাবে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সারাবিশ্বে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে র্যাব, যা দেশ এবং বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘র্যাব শুধু জঙ্গি দমন করে না। যখন যা প্রয়োজন র্যাব সশরীরে মানুষের কাতারে সেবা দেওয়ার জন্য চলে আসে। র্যাব শুধু এলিট ফোর্স নয়, তারা জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় জয় করেছে র্যাব। জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। র্যাব বাহিনীর প্রশংসা সবার মুখে মুখে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ আর কোনোদিন অন্ধকারে যাবে না বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, জনগণ বিশ্বাস করে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। যতদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে থাকবেন ততদিন বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস সবই ভালো থাকবে। আলোকিত হয়েই দেশ এগিয়ে যাবে। দেশের মানুষ আর কোনোদিন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে সমর্থন দেবে না। এখন পৃথিবীর অনেক দেশে বাংলাদেশের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনের প্রশংসা করা হয়।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষতা, দূরদর্শিতা, নেতৃত্ব এবং তার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতার কারণে আমরা ভালো আছি। এ দেশের জনগণ আর কোনোদিন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের মদদদাতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সমর্থন দেবে না। দেশের মানুষ এখন যখনই কোনো দুর্যোগ আসে, সমস্যা-সংকট দেখা দেয় তখনই সবাই একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়ায়। দেশের মানুষের জন্য যখন যা প্রয়োজন, প্রধানমন্ত্রী কখনো তা করতে না করেননি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে নো বলে কোনো শব্দ নেই।
’অনুষ্ঠানে র্যাব ফোর্সেস’র মহাপরিচালক, অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে র্যাব ফোর্সেস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। র্যাবের বাস্তবধর্মী এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ এর কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রায় নির্মূল হয়ে আসছে। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে।’
তিনি বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রতিবছর শীতের তীব্রতায় এবং শৈত প্রবাহে স্বল্প আয়ের মানুষ শীত বস্ত্রের অভাবে কষ্ট করে থাকে। উত্তরাঞ্চলের এই তীব্র শীতে অসহায় ও নিপীড়িত মানুষের শীতের কষ্ট লাঘবে র্যাব-১৩ এর উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানান। মহাপরিচালক বিভিন্ন অঞ্চলে শীতের কষ্ট লাঘবের জন্য দেশের বিত্তশালী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানসমূহকে শীতার্ত মানুষদের মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদানেও অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে লালমনিরহাট -১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস্) কর্নেল কামরুল হাসান, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ আবদুল আলীম মাহমুদ, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা, র্যাব-১৩ এর অধিনায়ক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম, লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক টিএমএ মুমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।