জীবনের বাস্তব গল্প : ভাঙ্গা থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 285 দর্শন

 

জীবনের বাস্তব গল্প
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
“একটি দূর্ঘটনা‌ আর নিমিষেই দগ্ধ হলো আট-আটটি জীবন!
মুহূর্তেই ম্লান হয়ে গেলো হাজারও বাহারী রঙে রাঙানো স্বপ্ন”

নতুন বারিধারার বৃষ্টিতে ভিজে তরতাজা গাছটি সবুজ পাতাগুলো কেউই দেখেনি কোনোদিনই। আজও হয়তো আমি ছাড়া কারো চোখে পড়েনি পাতাগুলো। আগুনের তাপ ও শোকাহত ব্যাথা নিয়ে শুকাতে শুরু করেছে পাতাগুলো। শুকাবেও না কেন? জগদীশচন্দ্র বসু প্রমাণ করেছেন গাছের প্রাণ আছে। গাছের চোখ আছে কি না তা কিন্তু বলেননি। তবে গাছের যেহেতু প্রাণ আছে, চোখও আছে সেটাই সত্যি। তা যদি হয় কিছু করতে সক্ষম না হলেও গাছ দেখে থাকে সবকিছু।

ঢাকা-ভাংগা মহাসড়কের মালিগ্রাম ফ্লাইওভারের উপর আজকের ঘটে যাওয়া নজিরবিহীন দূর্ঘটনার প্রধান সাক্ষী এই গাছটি। কারণ সেই ছিল একদম কাছের জীবটি। যে একটি গাড়িতে থাকা আটটি তাজা প্রাণের বাঁচার আকুতি শুনেছে সবটুকুই।‌

জগতের মাঝখানে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে ঢাকা থেকে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরছিলেন একটা পরিবারের কয়েকটি তাজা প্রাণ। কিন্তু একজনের জীবন রক্ষা করতে গিয়ে রক্ষা করা হলো না সবগুলো মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা।

মুহূর্তেই দগ্ধ হলো দুটি শিশু, তিনজন নারী ও দুইজন পুরুষ সহ মোট সাত সাতটি প্রাণ। কোনোভাবেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাঁচার তাগিদে চিকিৎসার জন্য দৌঁড়িয়েও লাভ হলো না হতভাগা চালকের। বরঞ্চ অতিরিক্ত মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে হয়েছে ততটা সময়, যতোটা বাঁচতে চেয়েছিলো। মৃত্যু হলো ঢাকা গিয়েই। ঘটনাস্থলের আকাশ বাতাস ভেসে ওঠে মানুষের আহাজারি। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া দৃশ্যাটি আরও বেদনাবিধুর। অসুস্থ মায়ের সুস্থতার জন্য সেবা দিতে সঙ্গে ছিলেন কন্যা। তার সাথে থাকা সাত বছরের অবুঝ শিশুটি কাছেই ছিল। ভাবতেই নিজের অজান্তেই অশ্রুসিক্তে চোখ ভিজে যায়।

আগুনের লেলিহান শিখার তাপদাহ থেকে শিশু সন্তানকে নিজের পিঠ পেতে দিয়ে বুকের পাঁজরে আঁকড়ে ধরেছে মমতাময়ী মা। কিন্তু রেখেও বাঁচাতে পারেননি কলিজার টুকরাকে। কিভাবে বা পারবেন। নিজেই তো হয়েছেন উপর্যুপরি দগ্ধ। কার জীবন আগে গেছে জানিনা। সন্তানের না মায়ের? তবে মৃত্যুর ধরণ বলে দেয় বাঁচার আকুতি নিয়ে সর্বোচ্চটাই চেষ্টা করেছেন অসহায় মা। বুকের ভেতর আঁকড়েই রেখেছেন সন্তানটিকে মা যেভাবেই রাখেন সন্তানকে।

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর লেখা কবিতার চরণখানি “বাতাসে লাশের গন্ধ”। আজকে শুকেছি অনেকবার। আর চোখের কোনা ভিজিয়েছি অশ্রুর সাগরে।
এ মৃত্যু মেনে নেয়া বড়ই কঠিন।
এ মরন আর যেনো কারও হয় না।

লেখক : মো: জিয়ারুল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ, ভাঙ্গা থানা,ফরিদপুর। 





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন