দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই সেলফি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নতুন আলোচনা উঠেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এর আগেও বাইডেনের সঙ্গে বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনার ফটোসেশন হলেও জাতীয় নির্বাচনের চার মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ সেলফি বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এরই মধ্যে এ সেলফি নিয়ে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শনিবার এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও বাইডেনের সেলফি প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন, ‘এখন বিএনপি কি করবে? গণমিছিল শেষে বাসায় গিয়ে ঘুম আসবে না।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগেরও হুশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যাকে নিজেদের জন্য ইতিবাচক বা নিজেদের পক্ষের শক্তি হিসেবে ধরে আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা।
তাদের ভাষ্য, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর নানামুখী চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বেশ কিছুদিনর ধরে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যেই মার্কিনবিরোধীতা করে আসছেন। এমনকি শেখ হাসিনা তো রীতিমতো চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই আন্তরিক সেলফি আলোচনার ঝর তুলেছে রাজনীতিতে।
তবে এ বিষয়ে শীর্ষ সারির একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা প্রতিবেদক কে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপি ভুল বুঝিয়ে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে দূরে সরাতে চাচ্ছে।
সরকারদলীয় নেতারা বলছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও জোরদারের বিষয়ে একমত হয়েছেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। তখনও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়। এতে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে না। তবে বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা।
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাসৃষ্টিকারী আওয়ামী লীগ নেতারা মার্কিন ভিসানীতির আওতায় পড়বেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও দিতে পারে বাংলাদেশের ওপর।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বারবার বলছে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তারা অবস্থান বদল করেননি। তারা আগের অবস্থানেই রয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন ঘিরে চলতি বছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশে বিদেশিদের আনাগোনা বাড়ছে। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গেও একাধিক বৈঠক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ। সব মিলিয়ে দেশের রাজনীতিটা এখন দুই বলয়ে বিভক্ত হয়ে রয়েছে। রাশিয়া-চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। আর ভারত প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় সবসময়ই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের একটি প্রভাব থাকে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা সফরে এসেছিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ। বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আলোচনা করেন তিনি। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ল্যাভরভ। শুক্রবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করে দিল্লিতে যান জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে। এর আগে শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
তবে ল্যাভরভের ঢাকা সফর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা। খোদ দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাশিয়ার এ অবস্থানের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লিতে শুক্রবার রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রায় দেড় ঘন্টা আন্তরিকতাপূর্ণ বৈঠক হয়। পরদিন সকালে বাইডেন ও শেখ হাসিনার এ সেলফি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের চলমান রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাওয়ার ইঙ্গিতও হতে পারে। আবার নিছক সৌজন্যতাও হতে পারে।
তবে এ সেলফি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরন বা নতুন মোড় সৃষ্টি করবে কিনা- তা স্পষ্ট না হলেও- এটি গতকাল থেকে রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। যে আলোচনার ঝর বইছে দেশের চায়ের দোকান থেকে শীর্ষ মহলে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও পড়েছে এর প্রভাব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসছে নানা মন্তব্য।