জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো বাহনের যাত্রী হবেন না : আইজিপি

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 102 দর্শন

 

ঈদযাত্রায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো বাহনের যাত্রী না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

রবিবার দুপুরে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন এবং নিরাপদ করার লক্ষ্যে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ অনুরোধ জানান তিনি।

আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমরা সম্মানিত যাত্রীদের বলতে চাই আপনারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো বাহনের যাত্রী হবেন না। আমরা সকলে ঈদের আনন্দ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করার জন্য নাড়ির টানে যাত্রা করছি। আমরা কেউ দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে আত্মীয়স্বজনদের কাছে যেতে চাই না। অনেককে দেখা যায় ট্রাকসহ বিভিন্নভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ঈদ যাত্রা করে‌। তাই আমরা সকলের কাছে নিবেদন করব তারা কেউ যেন ঝুঁকিপূর্ণভাবেই ঈদ যাত্রা না করেন।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হাইওয়ে পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশসহ নৌ পুলিশ রেলওয়ে পুলিশ ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সবাই কাজ করছি। আপনারা দেখেছেন সারাদেশে যাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করার জন্য আমাদের বাংলাদেশ পুলিশের সকল সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে এবং তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে। পরিবহন মালিক সমিতির যেসব নেতৃবৃন্দ আছে আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছি। যাত্রী সাধারণের আমরা অনুরোধ করতে চাই যে আপনারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন বাহনের যাত্রী হবেন না।
আইজিপি বলেন, মহাসড়কে নসিমন, করিমনসহ বটবটি জাতীয় বাহনের চলাচল বন্ধ থাকবে। ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। রাস্তায় আমাদের মোবাইল কোর্ট থাকবে। বেপরোয়া গতিতে যেন গাড়ি চালানো না হয় সেই জন্য আমরা সকল চালককে অনুরোধ জানাবো। চালকদের আরও বলবো বিনা প্রয়োজনে আপনারা ওভার টেকিং করবেন না।
পুলিশ প্রধান বলেন, সরকার এই দেশের মানুষের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার বিষয়টি সহজ করার জন্য বিভিন্ন রাস্তাঘাটের উন্নতি সাধিত করেছে। এই ঢাকা শহরে অফার পাস হয়েছে, এমআরটি হয়েছে, পদ্মা সেতু হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ যথাসময়ে নির্বিঘ্নে নিজ নিজ গন্তব্যে ভ্রমণ করতে পারে। আমরা দেখেছি ঈদের সময় একটি বিশেষ চাপ যেখানে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঢাকা শহর থেকে সাধারণ মানুষ নাড়ির টানে নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। আমরা লক্ষ্য করেছি ইতোমধ্যে ঢাকা শহর থেকে যাত্রী সাধারণের নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার চাপ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামীকাল থেকে বড় ধরনের একটা চাপ শুরু হবে। আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত সাধারণের বড় একটা চাপ থাকবে।
আইজিপি জানান, জনগণের ঈদ যাত্রা যেম স্বস্তিদায়ক হয় সেই জন্য পুলিশের সকল ইউনিট এক যোগে কাজ করছে। ঈদ যাত্রীদের যাত্রা নিরাপদ করতে পুলিশের সকল সদস্য প্রস্তুত রয়েছে এবং এক যোগে কাজ করছে। মাঠ পর্যায়ে পুলিশের যে সকল সদস্যরা কাজ করতে তাদের তদারকি করছে আমাদের সিনিয়র অফিসাররা। ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় সমন্বয়ে সভা করেছে। এছাড়া পুলিশও সংশ্লিষ্টদের সময়সঙ্গে সমন্বয়ে সভা করতেছে।
তিনি জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটন কেন্দ্রে জন সমাগম হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। ট্যুরিস্ট পুলিশকে সহযোগীরা করার জন্য মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশসহ পুলিশের সকল ইউনিট সুষ্ঠু সমন্বয় করে কাজ করবে।
ফাঁকা বাসার নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ প্রধান জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বলেন, ঈদের ছুটিতে অনেকেই বাড়ি যাবেন। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা বাড়িতে কেউ যাতে অপরাধ সংগঠিত না করতে পারে সেই জন্য আপনারা ফ্লাট বাড়ির নিরাপত্তার জন্য পাহারাদার নিয়োজিত করেন। অনেক সময় দেখা যায় অপরাধ সংগঠিত হলে সিসিটিভির ক্যামেরা অন্য দিকে মুখ করে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক আছে কিনা এবং যে দিকে মুখ করে থাকার কথা সে দিকে আছে কিনা তা আপনারা চেক করে নেবেন। যাতে করে অপরাধ সংগঠিত হলে পাহারাদার না ধরতে পারলেও আমরা যেন গিয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারি।
জাল টাকার বিষয়ে সতর্ক অবলম্বন করার কথা বলে আইজিপি বলেন, ঈদের সময়ে দ্রুত কেনাকাটা হয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়। ফলে জাল টাকার কারণে অনেকে প্রচারিত হন। তাই জাল টাকার বিশেষ সবাই সতর্কতা অবলম্বন করবেন এবং পুলিশকে জানাবেন। এছাড়া কোন প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ ফোন করে আপনারা পুলিশ হিসাবে নিতে পারবেন। টাকা নিরাপদের সতর্কতার সঙ্গে পরিবহন করুন। প্রয়োজনে টাকা পরিবহনের সময় পুলিশের সহযোগিতা গ্রহণ করুন। টাকা পরিবহনে আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা প্রস্তুত আছি।
ঈদকে সামনে রাখে ছিনতাই চক্রের কার্যক্রম বেড়ে যায়। সকাল থেকে যাত্রাবাড়ী ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা পড়েছে। এই ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ঈদের সময় ছিনতাইকারীরা যেমন তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি করে তেমনি আমরাও আমাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছি। ছিনতাই নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কাজ করছি। প্রতিটি ছিনতাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে আমরা যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এই দেশে একটা সময় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের হোলি খেলা চলছিল। আমরা সকলের সঙ্গে মিলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। একি ভাবে আমরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ছিনতাইকারীদের আমরা আইনের আওতায় আনছি। অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এর আগে আইজিপি সায়েদাবাদ জনপদের মোড়ে বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টার পরিদর্শন করেন এবং দূরপাল্লার যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন৷ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বা কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কিনা এসব বিষয়ে জানতে চান। সেই সঙ্গে পুলিশের দেওয়া নির্দেশনার লিফলেট বিতরণ করেন। এছাড়াও পরিবহন শ্রমিকদের কাছে ঈদ যাত্রার বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
এ সময় ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার ও মেহেদী হাসান (ট্রাফিক, দক্ষিণ) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন