প্রযুক্তির ছোঁয়া ক্রীড়া পরিদপ্তরের সেবায় : পরিচালক (যুগ্মসচিব) আ,ন,ম তরিকুল ইসলাম

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 189 দর্শন

 

 বাংলাদেশে ক্রীড়ার মানোন্নয়নে যে সব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের মধ্যে ক্রীড়া পরিদপ্তর অন্যতম একটি। দেশের যুব সমাজকে শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, শৃঙ্খলা ও নেতৃত্ববোধ এবং সুস্থ ক্রীড়া চর্চার মাধ্যমে সুস্থ-সবল জাতি গঠন, ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণের মাধ্যমে প্রতিভাবান খেলোয়াড় খুঁজে বের করা, তৃনমূল পর্যন্ত ক্রীড়ার দ্রুত ও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ এবং ক্রীড়ার
মানোন্নয়নে পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষে গত ৭/৯/১৯৭৬ ইং তারিখ গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিভাগের) অফিস স্মারক নং-৪-ই৫/৭৬/৬৬২-সংক্রী- মোতাবেক
ক্রীড়া পরিদপ্তর সৃষ্টি করা হয়।

 দেশের ৬৪টি জেলায় অবস্থিত জেলা ক্রীড়া অফিস ও ৬টি বিভাগীয় পর্যায়ে স্থাপিত সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজের মাধ্যমে ক্রীড়া পরিদপ্তর ক্রীড়া কার্যক্রম পরিচালনা করে । জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন জেলা ক্রীড়া অফিসারের অন্যতম দায়িত্ব এবং ৬টি বিভাগীয় সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীকে বিপিএড ও এমপিএড ডিগ্রী প্রদান করা হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ক্রীড়া পরিদপ্তর ও আওতাধীন দপ্তরের সকল কার্যক্রম সেকেলে ও নাগরিক সেবাসমূহ প্রদান করা হয় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে –যা বর্তমান যুগে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ।

আমরা চাই বা না চাই, এত দিন পর্যন্ত আমাদের জীবনধারা, কাজকর্ম, চিন্তাচেতনা যেভাবে চলেছে, সেভাবে আর চালানো যাবে না, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বদলাতে হবে আমাদের জীবনযাত্রায়, আমাদের কাজকর্মে। আমরা এখন প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ২য় ও ৩য় শিল্প বিপ্লবের ভিত্তির উপর শুরু হওয়া ডিজিটাল এ বিপ্লবের ফলে সব কিছুর পরিবর্তন হচ্ছে গাণিতিক হারে।

আধুনিক জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি খাতে এ পরিবর্তন প্রভাব ফেলছে, ফলে পাল্টে যাচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা, এমনকি রাষ্ট্র চালানোর প্রক্রিয়া। স্মার্টফোনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পরিবর্তন, ইন্টারনেট অব থিংস, যন্ত্রপাতি পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ, রোবটিকস, জৈবপ্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো বিষয়গুলো ৪র্থ শিল্প বিপ্লব বা ডিজিটাল বিপ্লবের সূচনা বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এ ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সময়ে প্রযুক্তি কোনো না কোনোভাবে আমাদের জীবনে ও কর্মে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। পৃথিবীতে এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর যার জীবনে প্রযুক্তির কোনো প্রভাব নেই ।

 সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্ব ক্রীড়াংগনেও যোগ হচ্ছে নিত্য নতুন সব প্রযুক্তি, ফলে প্রযুক্তি ব্যবহারে
ক্রীড়াংগনও পিছিয়ে নাই। বর্তমানে ক্রীড়ায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটির (এআর) প্রয়োগ হচ্ছে। খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স, খেলায় সমতা এবং নির্ভুলতা বাড়ানোর উদ্দেশে গোল লাইন প্রযুক্তি, মোশন সেন্সর, জিপিএস ট্র্যাকার এবং উচ্চগতির ক্যামেরা ইত্যাদির মতো প্রযুক্তি পেশাদার খেলাধুলাকেই পাল্টে দিয়েছে। পেশাদার খেলাধুলায় এখন প্রায়শই গতি নির্ণায়ক (স্পিড সেন্সর), জিপিএস ট্র্যাকার এবং উচ্চগতির ক্যামেরা ব্যবহার করে খেলোয়াড়ের অবস্থান, গতি এবং গতিবিধি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য ধারণ এবং পরবর্তীতে খেলোয়াড়দের কৌশল ও পারফরম্যান্স সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এই তথ্য বিশ্লেষণ করা যায়। তাছাড়া ই-স্পোর্টস ও ভার্চুয়াল স্পোর্টস আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

দেশের ক্রীড়াংগনেও প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করা হচ্ছে । বৈশ্বিক রেসে টিকে থাকতে ক্রীড়াকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া এবং ক্রীড়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার — এখন সময়ের দাবি। আর তৃণমূল পর্যায়ে দ্রুত ক্রীড়ার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নের জন্যই ক্রীড়া পরিদপ্তরের সৃষ্টি, তাই ক্রীড়া পরিদপ্তরের সেবায় ও কার্যক্রমে ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার সর্বাগ্রে । ক্রীড়া পরিদপ্তরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে ক্রীড়া পরিদপ্তরের সকল কার্যক্রম ও সেবায় প্রযুক্তিরর বহুমাত্রিক ব্যবহারের বিকল্প কিছু নাই।

তাছাড়া সচিবালয় নির্দেশমালা ২০২৪ এর ২৬০ নম্বর নির্দেশনাসহ সরকারের বিভিন্ন পরিপত্রে নাগরিক এবং সেবা গ্রহণকারীদের সকল সেবা প্রদান পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে সহজ এবং সেবা প্রদানের বিভিন্ন মাপকাঠির একটা সহজীকরণ প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে মর্মে নির্দেশনা রয়েছে। অর্থাৎ জনসেবাকে সহজ এবং আরও নাগরিক বান্ধব করার জন্য Service Process Simplification (SPS) চালু করা হয়েছে । জনগণের জন্য সরকারি সব সেবাগুলোকে ‘সহজীকরণ’ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সেটার বাস্তবায়ন যে দীর্ঘসূত্রতা এবং তার ফলে যে দুর্নীতি হয় সেটা থেকে বের হবার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন স্তরগুলোকে কমিয়ে আনার নির্দেশনা রয়েছে। এর পাশাপাশি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং জনগণের সরকারি দপ্তরে যাবার পর যতো হয়রানি হয় সেগুলোকে বন্ধ করার জন্য ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’ এবং প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-নীতির উন্নতিসাধন, এপিএ নির্ধারণসহ – বিশেষ ক্ষেত্রে যখন যেখানে প্রয়োজন তার জন্য আইন এবং পদ্ধতির পরিবর্তন -সেটাও চলমান। আমি যেমনটি বলি, আইন তো বাইবেল নয় যে মানুষের সুবিধার জন্য সেটা পাল্টানো যাবে না, মানুষের কল্যানের জন্যই আইন। মোদ্দাকথা, সেবা প্রদান পদ্ধতি সহজীকরণ বলতে গ্রাহকের সন্তুষ্টি বিধান, তার প্রক্রিয়ার খরচ কমানো। এককথায় : To reduce TVC. অর্থাৎ Time, Visit & Cost কমানো। তাই জনগনকে দ্রুত ও স্বচ্ছতার সাথে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে এবং উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানের অংশ হিসেবে ক্রীড়া পরিদপ্তরের কার্যক্রমে ও সেবাসমুহে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করা হয়েছে।

বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রসমুহের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, শিক্ষার সাথেই ক্রীড়ার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে । শিক্ষার প্রদীপের আলোয় দূর হবে কুসংস্কারের কালো অন্ধকার এবং মানুষের চিন্তাভাবনা ও সমাজ সংস্কারে শিক্ষা যেমন রাখবে অগ্রণী ভূমিকা, ঠিক তেমনই শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, ভ্রাতৃত্ববোধ ও প্রতিযোগিতার সৃষ্টি সহ শৃংখলিত ও সুস্থ জাতি গঠনে ক্রীড়া রাখবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা- এবং ক্রীড়াই হবে সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম মাধ্যম — গড়ে উঠবে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ ।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এগিয়ে চলছে বিশ্ব, আমূল পরিবর্তন এসেছে সর্বত্রই। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে ক্রীড়াংগন। বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে এবং দেশের ক্রীড়াংগনকে সমৃদ্ধ করতে ক্রীড়া পরিদপ্তরের বিভিন্ন সেবা ও কার্যক্রমে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। ক্রীড়া পরিদপ্তরে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক স্থাপন করে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে, ই-নথি চালু করা হয়েছে, সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে, সমৃদ্ধশালী ওয়েবসাইট নির্মাণ করা হয়েছে। ক্রীড়া পরিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজসমূহে ইন্টারনেট সংযোগ, সিসি ক্যামেরা স্হাপন, নতুন কম্পিউটার সংযোজন, বিপিএড ভর্তি পরীক্ষায় অনলাইন সিস্টেম চালু ও অনলাইনে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা, অনলাইনে পাঠদান, শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার, কলেজের ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে, ই-নথি চালু করার জন্য a2i প্রকল্পে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। আবার সকল জেলা ক্রীড়া অফিসসমূহে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনসহ ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। ক্রীড়ার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা ক্রীড়া অফিস কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণে শুরু করা হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার কারণ ক্রীড়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সময়ের চাহিদা । তাছাড়া ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেন্জ মোকাবেলায় ক্রীড়ায় প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহার এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 ক্রীড়া পরিদপ্তরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ:

তৃণমূল পর্যন্ত ক্রীড়ার ব্যাপক প্রসারের জন্য দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্রীড়া ক্লাবে বিনামূল্যে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করা– ক্রীড়া পরিদপ্তরের অন্যতম প্রধান কাজ। কারণ ক্রীড়ার ব্যাপক সম্প্রসারণের জন্য তৃণমূলে দ্রুত ও স্বচ্ছতার সাথে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ক্রয়কৃত ক্রীড়া সামগ্রী পৌঁছানো দরকার সর্বাগ্রে। মূলতঃ এজন্যই গত ৩ অক্টোবরে ২০২৩ তারিখে পরিচালক, ক্রীড়া পরিদপ্তর হিসেবে যোগদান করেই আমি ঐ মাসের মধ্যে অনলাইনের /সফটওয়ারের মাধ্যমে বিনামূল্যে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। United Software Solutions এর সহযোগিতায় Smart Sports Equipment Distribution System (SSEDS) নামক একটি Software তৈরি করা হয়েছে, যা গত ১০ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখ সকাল ১০.৩০ মিনিটে মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সভাপতিত্বে উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে Software (SSEDS) টি উপস্থাপন/ প্রদর্শন করা হয়, অত:পর সভা থেকে কিছু সংযোজন ও বিয়োজন করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী Software (SSEDS) টিতে প্রয়োজনীয় সংযোজন ও বিয়োজনসহ উদ্বোধন উপযোগী করে সিস্টেম এনালিস্ট, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রেরণ করা হয় ।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় উক্ত Smart Sports Equipment Distribution System (SSEDS) সফটওয়্যারটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অত:পর সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের ১ টি করে সেবা কুইকউইন হিসেবে সেবার নাম a2i প্রকল্পে
দাখিলের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কুউকউইন সেবা হিসেবে ক্রীড়া পরিদপ্তরের ইনোভেশন Smart Sports Equipment Distribution System (SSEDS) সফটওয়্যারের নাম a2i প্রকল্পে প্রেরণ করা হয় — যা ক্রীড়া পরিদপ্তরের জন্য একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন । যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্হ ৬ টি দপ্তর /সংস্থার মধ্যে ক্রীড়া পরিদপ্তরের ইনোভেশন Smart Sports Equipment Distribution System SSEDS সফটওয়্যারটি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কুইকউইন সেবা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কুইকউইন সেবা হিসেবে ক্রীড়া পরিদপ্তরের ইনোভেশন (SSEDS) সফটওয়্যারের নাম a2i প্রকল্পে দাখিল করায়, এখন a2i থেকে সফটওয়্যারটির পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ক্রীড়া পরিদপ্তরের ইনোভেশন Smart Sports Equipment Distribution System SSEDS সফটওয়্যারটি খুব দ্রুত উদ্বোধন করা হবে এবং ক্রীড়া পরিদপ্তর থেকে প্রস্তুতকৃত SSEDS সফটওয়্যারটির মাধ্যমে দেশব্যাপী বিনা মূল্যে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণের কার্যক্রম শুরু করা হবে। ক্রীড়া পরিদপ্তর প্রস্তুত, Smart Sports Equipment Distribution System (SSEDS) সফটওয়্যারটির উদ্বোধনের পরপরই SSEDS সফটওয়্যারের মাধ্যমে ক্রীড়া পরিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে ক্রীড়া সামগ্রী শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে ও দ্রুত তৃণমূলে পৌঁছানো যাবে, যা ক্রীড়ার দ্রুত প্রসারের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে আমার বিশ্বাস।

ক্রীড়া পরিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ সমুহে ব্যাচেলর অফ ফিজিক্যাল এডুকেশন কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের
ডাটাবেইজ তৈরি কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাছাড়া ক্রীড়া পরিদপ্তরের আওতাধীন জেলা ক্রীড়া অফিস সমুহ কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থেকে বাছাইকৃত প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের ডাটাবেইজ তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।

ক্রীড়া পরিদপ্তর কর্তৃক বয়সভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। আমার প্রথম বছরের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়, আমার কাছে মনে হয়েছে বয়স যাচাই নিয়ে আছে মারাত্মক সমস্যা, যার ফলে সরকারের যে উদ্দেশ্যে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়, সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারছি না আমরা। সরকারি অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে অথচ উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো আউটপুট নাই। যেমন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট বালক (অনুর্ধ–১৭) ২০২৪ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বয়স নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ সহ মারামারি, মারাত্মক গন্ডগোল হয়ে খেলা পন্ড হয়ে গেছে। সর্বশেষ ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে গত ১২ জুলাই প্রচন্ড মারামারি হয়ে খেলা পন্ড হয়ে যায়। আবার ১১ জুলাই বর্নিত টুর্নামেন্ট নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট হয় ছোটদের খেলায় বয়োজ্যেষ্ঠদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং সরকারের অর্থ ব্যয়ের আউটপুট নিশ্চিত করতে বয়স যাচাইয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের কোন বিকল্প কিছু নাই বলে আমি মনে করি। তাই খুব দ্রুত বয়স যাচাইয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের কাজ শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে । আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ক্রীড়া পরিদপ্তর থেকে যে সব সেবা প্রদান করা হয়, সেগুলো স্বচ্ছ ও দ্রুত প্রদানের জন্য
পর্যায়ক্রমে সকল কার্যক্রম ও সেবা স্মার্ট ওয়েতে দেওয়ার এবং ক্রীড়া পরিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং সরকারি অর্থ ব্যয়ের যে উদ্দেশ্য, বাস্তবে সেই উদ্দেশ্য পূরণ করা।

 উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ ” বিনির্মানের কারিগর হিসেবে তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে ক্রীড়া চর্চা করতেই হবে, যা মেধা ও মননের বিকাশের সুযোগ করে দিবে। আর এই ক্রীড়া চর্চা সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। তাই ক্রীড়া পরিদপ্তর থেকে প্রদানকৃত সেবায় তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সকল সেবায় তথ্য ও প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে অধিক সফলতা পেতে এবং ক্রীড়া চর্চা প্রসারের জন্য, এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেন্জ মোকাবিলা করতে এবং উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানের অংশ হিসেবে ক্রীড়া পরিদপ্তর ও আওতাধীন দপ্তর থেকে সকল সেবা ও কার্যক্রম স্মার্টলি / স্মার্ট ওয়েতে করার বিকল্প কিছু নাই।

উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে সব কাজই হবে স্মার্টলি এবং স্মার্ট ওয়েতে বা স্মার্ট ভাবে । স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে মূলত বোঝায় প্রযুক্তি নির্ভর জীবন ব্যবস্থা, যেখানে সকল ধরনের নাগরিক সেবা থেকে শুরু করে সব কিছুই স্মার্টলি হবে এবং ভোগান্তি ও হয়রানি ছাড়াই প্রত্যেক নাগরিক সকল সেবা পাবেন। তাই উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণের জন্য স্মার্টলি কাজ করা , স্মার্ট ওয়েতে জনগনকে সেবা প্রদান করা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য খুবই দরকার । আমাদের অধিকাংশের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মান সরকারের কাজ, সরকার উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে দিবে, এই ধারণা কিন্তু অনেক বড় ধরনের ভুল। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ অর্থাৎ আমাদের যার যে কাজ বা আমরা যে সব সেবা জনগনকে দিয়ে থাকি, সেগুলো স্মার্ট ওয়েতে করা বা স্মার্ট ওয়েতে জনগনকে সেবা দেওয়া অর্থাৎ প্রত্যেকে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে এবং স্মার্টলি পালন করবে।

একটি প্রযুক্তি বিপ্লবের সংগে আমরা সময় অতিবাহিত করছি ফলে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। আর বাংলাদেশের মতো একটা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ও বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বিপ্লবের ফল একসংগে ক্রীড়ায় ব্যবহার করে এবং কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই তরুণ প্রজন্মকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে গড়ে তুলে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব। শুধু দরকার প্রবল ইচ্ছা শক্তির, বাঙালি জাতির অদম্য ইচ্ছা শক্তিই উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেই ইনশাআল্লাহ এবং ক্রীড়া পরিদপ্তরও সকল কার্যক্রম ও সেবা প্রদানে প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

লেখক : আ,ন,ম তরিকুল ইসলাম
পরিচালক (যুগ্মসচিব)
ক্রীড়া পরিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন