তারিক ইসলাম : হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ঘোষণার পর ফাঁসির আসামির মাথায় পরা এক বিশেষ টুপি নিয়ে আলোচন চলছে সবখানে। অনেকে এটিকে আইএসের টুপি বলে দাবি করছেন। তবে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, এটি আইএসের টুপি নয়। আইএসের নির্দিষ্ট কোনো টুপি নেই।
হলি আর্টিজান মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে আজ বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন মনিরুল।
আজ বেলা সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান সাতজনের ফাঁসির আদেশ এবং একজনকে খালঅস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আট আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রায়ের পর মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাত জঙ্গির মধ্যে রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যান ও জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধীর মাথায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) পতাকার প্রতীকসংবলিত টুপি দেখা গেছে। দুই জঙ্গির মাথায় এই টুপি পরা ছবি ভাইরাল হয়েছে ইতিমধ্যে।
তবে আদালতে নেওয়ার সময় তাদের মাথায় টুপি ছিল না। রায় শেষে বেরিয়ে এলে তাদের মাথায় টুপি দেখা যায়। প্রশ্ন উঠেছে কারা তাদের টুপি দিয়েছে? কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলছেন, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
হলি আর্টিজান মামলার তদন্তকারী সংস্থাটির প্রধান মনিরুল ইসলাম ওই টুপি আইএসের কোনো নিদিষ্ট টুপি নয় বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘কালো কাপড় ব্যবহার করা জঙ্গি সংগঠনের রেওয়াজ। আল- কায়েদাও কালো কাপড়ের ব্যানারে লেখে- ‘লা ইল্লাহা ইল্লাল্লাহু’। ফলে ‘লা ইল্লাহা ইল্লাহু’ লিখলে সেটা…। আইএসের প্রধান আবু বক্কর আল বাগদাদির মাথায়ওেএ ধরনের টুপি আসেনি। এ ক্ষেত্রে এটা (টুপি) আইএসের কি না সেটা আমরা দেখব।’
ঢাকার আদালতে এক ফাঁসির আসামির মাথায় বিশেষ টুপির বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে আমরা একজনকে কালো টুপি পরা অবস্থায় দেখেছি, যেখানে আরবিতে লেখা আছে ‘আল্লাহু আকবার’ ‘লা ইল্লাহা ইল্লা’ ‘মোহাম্মদ’ এ কথাগুলো। কিন্তু আমার জানামতে আইএস কোনো নির্দিষ্ট টুপি তৈরি করেছে পৃথিবীর কোথাও এমন তথ্য নেই। ফলে ‘লা ইল্লাহা ইল্লাল্লাহু’ লেখা টুপি আইএসের পতাকা নির্দেশক হবে কি না এটা বিশ্লেষণের ব্যাপার।’ এই টুপি কোথা থেকে কীভাবে এল সেটা তারা তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান মনিরুল।
মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানের খালাস বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল সাংবাদিকদের বলেন,‘আমরা পুর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেয়ে তা বিশ্লেষণ করব। তারপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
মিজানের বিরুদ্ধে হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ ছিল, সেটা প্রমাণ করতে না পারায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছে। এতে পুলিশের তদন্তের ঘাটতি ছিল কি না- এমন প্রশ্নে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আমরা তা পর্যালোচনা করে দেখব আমাদের কোনো ঘাটতি ছিল কি না। সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনে কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছি কি না তখন বোঝা যাবে।’
এই রায় সন্ত্রাসীদের জন্য একটা মেসেজ বলে মনে করেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান। বলেন ‘এত বড় একটা মামলা, তদন্ত শেষ করে আমরা আসামিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পেরেছি। দেশের মানুষের মধ্যে ধারণা ছিল এই মামলায় বিচারের দীর্ঘসূত্রতা হতে পারে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল আলোচিত এই মামলার বিচারকাজ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হওয়া দেশে-বিদেশে একটা দৃটান্ত হয়ে রইল। এটা পুলিশের সাফল্য এবং গোয়েন্দা সংস্থার সাফল্য।’