ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) হিসেবে ৯ হাজার ৬৮০ জন কনস্টেবল নিয়োগ ফ্রি এন্ড ফেয়ার করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)। এ নিয়োগে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
একই সঙ্গে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এসপি দের আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে রেহাই নেই। পুলিশ সদর দফতরের তদারকি টিম তাদেরও গ্রেফতার করবে। এর পাশাপাশি প্রতি জেলাতেই আইজিপির নিজস্ব গোয়েন্দা টিমের সদস্যরাও পরীক্ষা শুরু হলেই কাজ শুরু করবে। খবর পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল সূত্রের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতরের একজন এসপি’র নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায় থাকবে তদারকি টিম। কোনো প্রার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে তদবির করালে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
এবার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) হিসেবে ৯ হাজার ৬৮০ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা, রাজশাহী, বরিশালসহ ৫ টি রেঞ্জে শনিবার (২২ জুন) থেকে শুরু হচ্ছে এ নিয়োগ। ধাপে ধাপে চলবে অন্যান্য জেলায়। এ নিয়োগ শেষ হবে আগামী মঙ্গলবার (৯ জুলাই)।
প্রতিটি জেলার পুলিশ লাইনস মাঠে প্রার্থীদের বাছাই করা হবে। শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। পরে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর চূড়ান্ত করা হবে প্রার্থী।
জানা যায়, সাধারণত পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে সব জেলাতেই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমেই অতীতে চাকরিও হাতিয়ে নিয়েছেন। পুলিশের নিয়োগকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
এসব পদে নিয়োগের জন্য দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা ডিও লেটার(আধা সরকারি পত্র) পাঠান পুলিশ সুপারদের (এসপি) কাছে। তাদের তদবির না রাখলে অনেক সময় বেকায়দায়ও পড়তে হয়।
এবার লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পর নেতাদের তদবির এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে যাচাই বাছাই করতে বলা হয়েছে এমপি-মন্ত্রীদের ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র)।
তবে অনেক জেলা পুলিশ সুপারও (এসপি) অর্থনৈতিক লেনেদের মাধ্যমে নিয়োগ দেন এমন অভিযোগও বেশ পুরনোই। এ বিষয়টি মাথায় রেখে তাদেরও ‘চূড়ান্ত বার্তা’ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। ঘুষ লেনদেনে জড়ালে পুলিশ সদর দফতরের তদারকি টিমের আইনানুগ ব্যবস্থার আওতায় আসবেন সেই এসপিরাও।
পুলিশ সদর দফতরের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা কালের আলোকে বলেন, প্রতিটি জেলায় পুলিশ সদর দফতর থেকে বিশেষ তদারকি টিম নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নজরদারি করবে। পাশাপাশি আইজিপির যে নিজস্ব গোয়েন্দা টিম আছে সেই টিমের সদস্যরাও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে কেউ নিয়োগ হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ঘুষ-দুর্নীতির সাহসই করবে না কেউ।
পুলিশের আরেকজন কর্মকর্তা কালের আলোকে বলেন, পুলিশ কনস্টেবল পদে গত নিয়োগেই অসাধ্য সাধন করে চমক তৈরি করেছিলেন পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারী। এবারো পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা তাঁর পক্ষেই সম্ভব।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো এক প্রেস নোটে বলা হয়েছে, পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের তথ্য পেলে নিয়োগ বাতিলসহ আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা কালের আলোকে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছ করতে পুলিশ সদর দফতর বদ্ধপরিকর। কনস্টেবল নিয়োগকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন বা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করলে নিয়োগ বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাধারণ পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশকে বদলে দিতে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেই তাঁর হাতে নেতৃত্ব তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
পুলিশ প্রধানও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। একইসঙ্গে বাহিনীর সদস্যদের বিতর্কমুক্ত এবং তাদের মন মানসিকতাতেও পরিবর্তন আনতে কাজ করছেন। কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায়ের এ চ্যালেঞ্জেও তিনি যেমন বাজিমাত করবেন তেমনি তাঁর দক্ষ নেতৃত্বেই নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও সততার সঙ্গেই দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বাংলাদেশ পুলিশ।