সুন্দরবনে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের মধ্যে যারা ২০১৬ সাল থেকে খুন-ধর্ষণে জড়িয়েছে তাদের বিষয়ে কোনো আইনগত সহযোগিতা করা হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার। 

তিনি বলেছেন, ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের যারা মার্ডার ও ধর্ষণ করেছেন তাদের বিষয়ে কোনো আইনগত সহযোগিতা করা হবে না। কারণ এ দুটি খুবই জঘন্য ও গর্হিত অপরাধ।


সোমবার দুপুরে বাগেরহাটের রামপালে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তি ও আত্মসমর্পণকৃতদের পুনর্বাসন অনুষ্ঠানে আইজিপি এসব কথা বলেন।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ২০১৬ সালে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণে সরকার সাড়া দেয়। বিনা শর্তে তাদের আত্মসমর্পণের আহবান জানানো হয়৷ এছাড়া তাদের কাছে যে অস্ত্রশস্ত্র ছিল সেগুলোও র‍্যাবের কাছে হস্তান্তর করে। বেআইনি অস্ত্রের জন্য আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুরা কারাগারে যায়। এরপর তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে সহযোগিতার বাড়ানো হয়।

‘কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত হয়েছে যারা মার্ডার ও ধর্ষণ করেছে তাদের বিষয়ে কোনো আইনগত সহযোগিতা সরকার করবে না। কারণ এ দুটি খুবই জঘন্য ও গর্হিত অপরাধ।’

কারো আত্মীয়-স্বজন খুন হয়ে থাকলে তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘যদি কোনো নারী ধর্ষিত হয়ে থাকে সেই নারীর বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। জলদস্যুদের এই দুটি অপরাধ ছাড়া বাকি সব ধরনের অপরাধের বিষয়ে নমনীয় হবো।’

আইজিপি বলেন, ‘সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত করতে র‍্যাব একটি সাঁড়াশি অভিযান চালায়। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে একাধিক অভিযান চালানো হয়। তখন শহীদ কর্নেল আজাদ আমাকে বলে- ‘স্যার, এই জলদস্যু র‍্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চায়।’

‘সাংবাদিক মোহসিন উল হাকিম সুন্দরবন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে জলদস্যুদের যোগাযোগ ছিল। অভিযানে তখন অনেক জলদস্যু র‍্যাবের সঙ্গে গোলাগুলি হচ্ছিল, জলদস্যুরা মারা যাচ্ছিলো৷ তখন এই জলদস্যুরা চাপের মুখে আত্মসমর্পণ করতে সিদ্ধান্ত নেয় এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয় সাংবাদিক মোহসিনুল হাকিম।’

তিনি বলেন, এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে নির্দেশনা দেন। এরপরই র‍্যাব দুঃসাহসিক সিদ্ধান্তে ২০১৬ সালে প্রথম জলদস্যু আত্মসমর্পণ করতে সমর্থ হয়।’

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘শুধু আত্মসমর্পণ করলেই হবে না, জলদস্যুদের সমাজে পুনর্বাসনের একটি বিষয় ছিল। আত্মসমর্পণের পরে প্রধানমন্ত্রী জলদস্যুদের মাঝে অর্থ সাহায্য দিয়েছেন। আবার পুনর্বাসন করলেই হবে না, সমাজের মূল ধারায় পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জ ছিল। যারা আত্মসমর্পণ করেছে তারা কি কারণে জলদস্যু হয়েছিল তাদের প্রত্যেকের একটি করে গল্প আছে। সাংবাদিক ভাইয়েরা চাইলে সেই সমস্ত গল্প পাতার পর পাতা লিখতে পারেন।’

আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুরা দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করেছেন জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘এতদিন ধরে জলদস্যুতা করলেও তদের থাকার একটি ঘর ছিল না। কিছু করে খাওয়ার মতো তাদের সামর্থ্য ছিল না। আত্মসমর্পণ করা ৩২৮ জন জলদস্যুর মধ্যে মাত্র একজন ডাকাতের অর্থ বিত্তের সন্ধান আমরা পেয়েছিলাম। বাকি কারোরই কোনো সামর্থ্য ছিল না। কারণ এই জলদস্যুদের কেন্দ্র করে বিশাল একটি সুবিধাভোগী চক্র গড়ে উঠেছিল।’

পুলিশপ্রধান বলেন, ‘আমি যখন র‍্যাব ডিজি ছিলাম তখন এই অঞ্চলে চারটি র‍্যাবের ক্যাম্প বানানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। কারণ চারটি ক্যাম্প বানানোর মতো জায়গা এখানে পায়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ও অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু আমরা পারিনি।’

‘দুবলার চরে র‍্যাবের একটি ক্যাম্প আছে। সেখানে তিনদিন থাকলে শরীরের ওপর দুই ইঞ্চি লবণের প্রলেপ পরে যায়। এছাড়া যে পরিমাণ তাপ সেখানে দায়িত্ব পালন করা খুবই কষ্টসাধ্য। অনেকেই ঢাকায় থেকে ভাবতে পারেন এখানে বিচ হবে কিন্তু ইটস নট এ বিচ লাইক। সুন্দরবনের মধ্যে তিনদিন থাকলে বোঝা যায় হাউ ডিফিকাল্ট ইজ দ্যা লাইফ। আমি মনে করি এখানে চারটি ক্যাম্প হওয়া দরকার। এতে করে সুন্দরবন আরও নিরাপদ হবে।’

আইজিপি জানান, জলদস্যুমুক্ত হওয়ার পরে সুন্দরবনে হরিণ বেড়েছে ও বাঘের সংখ্যাও বেড়েছে। এটির বহুমুখী প্রতিফলন তৈরি হয়েছে। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ নিধন না করার জন্য জেলেদের প্রতি অনুরোধ জানান আইজিপি।

 

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, এই অঞ্চলে জলদস্যুদের অত্যাচার মানুষ কখনোই ভুলে যাবে না। এই অঞ্চলের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ যে বিয়োগান্তক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে এক সময় মানুষ এগুলো ভুলে যাবে। সে কারণে সুন্দরবনকে নিয়ে একটি চলচিত্রায়ন করেছি ‘অপারেশন সুন্দরবন।’ করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চলচিত্রটি মুক্তি পাবে।’

র‍্যাবের ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন,ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ বাংলাদেশ পুলিশ ড.বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার,  খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল,খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো: ইসমাইল হোসেন এনডিসি, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড.খ:মহিদ উদ্দিন বিপিএম-বার, র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে.কর্ণেল লেফটেন্যান্ট কর্নেল মূহামমদ মোসতাক আহমদ, বি এস পি, পি এস সি,বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক,সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম-বার, খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান,বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো:আসাদুজ্জামান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন র‌্যাবের অরিতিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন