মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে আজ (শনিবার) খুলনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২২ উদযাপন করা হয়।

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্লামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। প্রত্যুষে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। গল্লামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা জেলা ও মহানগর কমান্ড, কেসিসি’র মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন, কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, রেঞ্জ ডিআইজি ড. খ: মহিদ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য, কেডিএ, বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র, জেলা পরিষদ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, খুলনা প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, স্কুল-কলেজ, পেশাজীবী সংগঠন এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সকাল আটটায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে সমগ্র দেশের সাথে একযোগে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন। এসময় পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। পরে সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স,স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, শিশু কিশোর সংগঠন, কারারক্ষী, বাংলাদেশ স্কাউট, রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড, নৌ-স্কাউট কর্তৃক বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান ও শরীরচর্চা প্রদর্শন করা হয়। দৌলতপুর শহিদ মিনারসহ বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামান্য চলচ্চিত্র ও দুর্নীতি বিরোধী তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও রং বে-রঙের পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিস, পিআইডি’র উদ্যোগে সার্কিট হাউজ মাঠে দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

দুপুরে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এসএম ফজলুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মোঃ গিয়াস উদ্দিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুব হাসান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার। স্বাগত জানান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যর মধ্যে বক্তৃতা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহাবুবার রহমান, নূর ইসলাম বন্দ, মকবুল হোসেন মিন্টু। সভা পরিচালনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আলমগীর কবির। এসময় সংবর্ধিত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানসমূহে দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বাদ যোহর কালেক্টরেট মসজিদসহ নগরীর সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। বেলা ২টা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত স্থানীয় নৌ-বাহিনীর জাহাজ খুলনাস্থ বিআইডবি¬¬¬উটিএ রকেটঘাটে জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সংশি¬ষ্ট ভবন সমূহে আলোকসজ্জা করা হয়।

বিকালে পাইওনিয়ার স্কুলে মহিলাদের ক্রীড়া অনুষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ এবং খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে কেসিসি একাদশ বনাম জেলা প্রশাসন একাদশ এর মধ্যে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় সার্কিট হাউজ মাঠে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের উন্নয়ন’ বিষয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, সুবর্ণজয়ন্তী সৌধ উদ্বোধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল হতে বিকেল পর্যন্ত নগরীর নির্দিষ্ট স্থানসমূহে যন্ত্র সংগীত পরিবেশন করা হয়। জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে শহিদ হাদিস পার্কে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র এবং প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে খুলনা বেতারের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি কমপ্লেক্সের এম্ফিথিয়েটারে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করে।

 





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন