কক্সবাজার পর্যন্ত চলবে দ্রুতগতির পর্যটন ট্রেনপর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্রুতগতির ট্রেন সেবা বর্তমান সরকার চালু করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে উচ্চ গতির পর্যটন ট্রেন সেবা চালু করতে পারব বলে আমরা মনে করছি।প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্তঃনগর পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন।নতুন উদ্বোধন হওয়া সেমি-ননস্টপ এই ট্রেনটি ঢাকা ও সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের মধ্যে চলাচল করবে। যাত্রাপথে ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছেড়ে গিয়ে শুধুমাত্র পার্বতীপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁয়ে থেমে ৭ ঘণ্টায় ৫৯৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পঞ্চগড়ে পৌঁছবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হওয়ায় এখন অনেক মানুষ ভ্রমণের জন্য রেলকে বেছে নিচ্ছেন।তিনি রেলওয়ের ওয়ার্কশপ আধুনিকায়নের পাশাপাশি আধুনিক পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা চালুর জন্য আরও ওয়াগন ও কোচ যুক্ত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুতে রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে এবং এটি বরিশাল পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। পর্যায়ক্রমে বরিশাল থেকে পায়রা ও পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।সরকার দেশের রেলওয়েকে আঞ্চলিকের পাশাপাশি ট্রান্স-এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশবাসী আমাদের ওপর আস্তা রেখে ভোট দিয়েছে। যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সারাদেশে উন্নয়নের মাধ্যমে তা রক্ষা করছি। সারাদেশে ব্রিজ, কালভার্ট, ওভারপাস, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, যেখানে যা কিছু প্রয়োজন আমরা সব করে দিচ্ছি। এ দেশের মানুষ যেন যাতায়াতে কষ্ট না পায় সে জন্যই আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করছি।’শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি।অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের যোগাযোগ নিবিঘœ করার জন্য সারাদেশে সড়ক, নৌ, রেল ও বিমান সচল করা হচ্ছে। সারাদেশেই সড়ক, রেল, নৌ ও বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। যেভাবে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন হচ্ছে তাতে ইনশাল্লাহ প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষ কম সময়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে পারবে।’তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি দেশ হিসেবে গড়ে তোলার। তার আদর্শকে ধারণ করে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখছি। বাংলাদেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি দেয়ার জন্য আমরা কাজ করেযাচ্ছি। আমরা সড়ক পথের যে উন্নয়ন করেছি তাতে আগামী ঈদে কাউকে কষ্ট ভোগ করতে হবে না। নিবিঘেœ মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। আমরা সারাদেশে সড়ক যোগাযোগের যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি তা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখবে।’এ জন্য জাপান সরকার এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ কাজগুলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকায় মেট্রোরেল ফ্লাইওভারসহ নানা উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় ঢাকাবাসীকে এখন একটু কষ্ট পেতে হচ্ছে। একটু কষ্ট সহ্য করলে ভবিষ্যতে যাতায়াত আরও আরামদায়ক হবে।’রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে যাত্রী সাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু গাড়িচালককে দোষ দেবেন না। ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন। গাড়িচালক ও পথচারী কেউই যদি ট্রাফিক আইন না মানে তাহলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটবে।’তিনি বলেন, ‘মহাসড়কগুলোতে চালকের বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা নেই। আমরা অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যবস্থা এবং খাওয়া-দাওয়াসহ যেকোনো গাড়িচালক যাতে বিশ্রাম নিতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেব।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে আমাদের ছেলেমেয়েদের ধারণা দিতে হবে।’ স্কুলের সামনে যে সব জেব্রা ক্রসিং থাকে সেগুলো সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য তিনি ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স কুমিল্লা, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের উপকার ভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।তিনি বলেন, ‘আপনাদের চলাচল সহজ করার জন্যই আমাদের সরকার এ সমস্ত উন্নয়ন কর্মকান্ডে হাত দিয়েছে।’