জিয়াউল ইসলাম জিয়া: চলমান প্রাণঘাতী করোনার মহাদূর্যোগ প্রবণ সময়ে সরকারের যাবতীয় স্বাস্থ বিধি মেনে এবং জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারীর নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেশের সকল দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সে অনুযায়ী সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ের মুদি দোকান, চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তরা ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে জীবন জীবিকা নির্বাহ করার কাজ করছে কর্মজীবি মানুষেরা।

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল ২০২১) বেলা ১১টায় ভোমরা বিজিবি কোম্পানী সদরের কোম্পানী কমাণ্ডার (সুবেদার) মুজিবর রহমান স্বাস্থ্য বিধি না মেনে এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার না করে ভোমরা বন্দরে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সকল ব্যবসায়ীদের স্ব-স্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অতর্কিত হামলা চালায় এবং এক লোমহর্ষক ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়ে চা দোকানি, মুদি দোকানি ও ব্যবসায়ীদের উপর বেধড়ক লাঠি চার্জ করে।

জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে এই সুবেদার মুজিবর বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ সাধারন জনগনের উপর পৈচাশিক নির্যাতন চালায়। ফলে ভোমরা বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়ে এই বিজিবি সুবেদার মুজিবর।

জনগনের প্রতিবাদী তোপের মুখে প্রায় ১ ঘন্টা আমদানী-রপ্তানী বন্ধ হয়ে যায়। কোম্পানী কমাণ্ডার মুজিবরের বেধড়ক লাঠি পিঠায় মারাত্ম জখম হওয়া চা বিক্রেতা নুর ইসলাম (৬০) সাংবাদিকদের জানায়, ভোমরা বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার মুজিবর উগ্রমূর্তি ধারন করে দোকানে এসে আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বেধড়ক লাঠি চার্জ করে। আমি একজন হার্টের রোগী, আমাকে মারলে আমি মরে যাব এ বিনীত অনুরোধ করলে সে বলে তোকে মেরেই ফেলে দেব।

সুবেদার মুজিবর ব্যক্তি আক্রোশের শিকার চা দোকানী চন্দ্র কান্ত চ্যাটার্জী জানান, আমি একজন ব্রাহ্মন সংখ্যা লঘু হিন্দু ধর্মের লোক। আমি দীর্ঘ ৬০ বছর ভোমরা বন্দরে চায়ের দাকান দিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। আমি সরকারের সকল প্রকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে দোকান খোলা রেখে ব্যবসা করি। আমি আমার চায়ের দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার পথে ভোমরা ক্যাম্পের সুবেদার মুজিবর আমাকে অকথ্য ভাষা গালিগালাজ করে বেধড়ক লাঠি পিঠা করে।

আমি এই বেপরোয়া  সুবেদার মুজিবরের কঠিন বিচার চাই এবং ১২ ঘন্টার মধ্যে ভোমরা থেকে তার অপসারন চাই। এছাড়া সুবেদারের নির্যাতনের শিকার মুদি দোকানী স্বরজিত দাস, চা দোকানী আবুল কালামসহ ভ্যান চালক সবিরুল এই সুবেদার মুজিবরের দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়ে ৬ ঘন্টার মধ্যে তাকে খাগড়াছড়ি বান্দরবনে বদলীর দাবি জানান।

এদিকে চা দোকানী ফিরোজাও সুবেদার মুজিবরের নির্যাতন থেকে মুক্তি পাইনি। চা দোকানী ফিরোজা জানান, অমানবিক লাঠি চার্জ, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নারী শ্লীলতা হানির অভিযোগে অভিযুক্ত ভোমরা ক্যাম্পের সুবেদার মুজিবর আকষ্কিকভাবে আমার দোকানে এসে হামলা চালিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করার সময় আমি প্রতিবাদ জানালে সে আমাকে মাটিতে ফেলে নোংরা কাজ করার হুমকি দেয়। আমি এই সুবেদর মুজিবরের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই এবং আজই তাকে ভোমরা থেকে বদলি চাই।

এদিকে ভোমরা বন্দরে সুবেদার মুজিবর যখন চা দোকানী, মুদি ব্যবসায়ী, ভ্যান চালক ও সর্বসাধরনের উপর অমানবিক লাঠি চার্জ করে রক্তক্ষয়ী ঘটনার সূত্রপাত ঘটাতে যাচ্ছে ঠিক তখনই স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীরা ঐ রক্তক্ষয়ী ঘটনার ভিডিও ধারন করা কালে সুবেদার মুজিবরের নির্দেশে বিজিবি জোয়ানরা মোবাইল ও ক্যামারে ছিনিয়ে নেয়। এদিকে ভোমরা স্থল বন্দরের সকল ব্যবসায়ীরা ও সাধারন জনগনের রোষের মুখে বিজিবি চেকপোষ্টে (আইসিপি) আটকে পড়ে সুবেদার মুজিবর।

অবশেষে জন সম্মুখে ভুল শিকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করার পর রেহাই পায় সুবেদার মুজিবর। এই বিভীষিকাময় ঘটনা চলাকালীন সময়ে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ বিজিবি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও।

প্রাসংঙ্গত : ভোমরা ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার মুজিবর রহমান এর আগেও ভোমরা ক্যাম্প কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিয়ে পরপর দুই বার ভোমরা ক্যাম্পের দায়িত্বে আছেন তিনি। তার অত্যাচারে ও হয়রানি তে  এই লক ডাউনের মধ্যে  ভোমরা এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ গুলো দিশেহারা হয়ে উঠেছে।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন