স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বঙ্গবন্ধু একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন। মাত্র ৫৫ বছর বেঁচে ছিলেন তিনি। এই ৫৫ বছরে তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে জেলে গিয়েছিলেন তিনি।
মন্ত্রী আজ (২৬ আগস্ট ২০২১) রাজধানীর রমনায় পুলিশ কনভেনশন হলে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান ও এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)।
অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, এসোসিয়েশনের সভ্যগণ উপস্থিত ছিলেন এবং সকল পুলিশ ইউনিট থেকে অন্যান্য কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। ডিএমপি’র গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ও এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
তিনি বলেন, আমরা যখন বলি, বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অনেকে এর বিরোধিতা করেন। আজকে আমাদের কাছে যে রেকর্ড পত্র রয়েছে, আমাদের প্রিজনে যে রেকর্ড পত্র রয়েছে, এসবিতে যে রেকর্ড পত্র রয়েছে তাতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে তিনি জেলে বসে নির্দেশনা দিতেন, চিঠি লিখতেন, কিভাবে ভাষা আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর ৫৪, ৬৬ ও ৬৯ এর আন্দোলনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে জনগণের কাছ থেকে স্বাধীনতার ম্যান্ডেট আদায় করেছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সুযোগ পেয়েছিলেন। তখন সবখানে ছিল নাই, নাই। বঙ্গবন্ধু তাঁর দক্ষতা দিয়ে, সৎ সাহস দিয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন। এজন্যই ঘাতকরা তাঁকে বাঁচিয়ে রাখেনি। ঘাতকরা জানতো বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে সেই ঘুরে দাঁড়াবে। তাদের আশঙ্কা যথার্থই হয়েছিল।
তিনি বলেন, তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন একে একে তিনি বাস্তবায়ন করছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশকে বদলে দেবেন। আজ তিনি বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। আজ আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু জনগণের পুলিশ গড়তে চেয়েছিলেন। আজ আমাদের পুলিশ সেই জায়গাটিতে গিয়েছে। তারা আজ যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। জঙ্গি, সন্ত্রাস দমন থেকে আরম্ভ করে সবকিছু তারা সমানতালে করে যাচ্ছে বলে আমরা দেশকে শান্তির দেশে পরিণত করতে পেরেছি। আজ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে।
মুখ্য আলোচক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বিশ্বমিডিয়ায় বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজনৈতিক কবি’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। আর কাউকে দেয়া হয়েছে কি না আমি পাইনি। বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম বাঙালির ইতিহাসে সার্বভৌম ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। যখন বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিয়েছিলেন আপনারা লক্ষ্য করবেন, সেদিন প্রত্যেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কাজ করেছে, ঠিক সেভাবেই সকল কাজ চলেছে। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে তিনি প্রথম এমন একজন মানুষ যিনি একজন সার্বভৌম বাঙালি, সার্বভৌম নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন, যার কথা অক্ষরে অক্ষরে জাতি পালন করেছে। সেজন্য বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির ক্ষেত্রেই নয়, বঙ্গবন্ধু এই উপমহাদেশে সেই সাথে বিশ্ব মানচিত্রে ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে আবির্ভূত হতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ‘র্যাডিক্যাল’ ছিলেন না। কারণ বঙ্গবন্ধু সারা জীবন ধরে যে রাজনীতি করেছেন তা ছিল মানুষের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রাজনীতি, সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে উদারনৈতিক রাজনীতি। তিনি মানবতাবাদ ও উদার নৈতিকতাবাদ লালন করতেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ছিল এক গভীর ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশেও ষড়যন্ত্র হয়েছে। এজন্য কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে। কারা কারা ষড়যন্ত্র করেছিল তাদের মুখোশ একদিন উন্মোচিত হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ফিনিক্স পাখির মত বাংলাদেশকে তুলে এনেছেন।
সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে ভালবাসতেন, দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন। তিনি বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলে। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।
তিনি বলেন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ রাখা হয়েছে, যা একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ কলন্ক থেকে জাতিকে মুক্তি দেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
আইজিপি তাঁঁর বক্তব্যে বলেন, চার হাজার বছরে বাঙালির নিজেদের স্বাধীন করার কোনো ইতিহাস নেই। চার হাজার বছর ধরে বাঙালি ছিল নির্যাতিত, বঞ্চিত। ক্ষুধা, জরা দারিদ্র ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী। বঙ্গবন্ধু যখন বলেন, ‘আজ আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি’ আসলে তিনি আমাদের চার হাজার বছরের দুঃখের কথা বলেন।
তিনি বলেন, এদেশের প্রতিটি খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি, কাদা মাটির গন্ধ মাখা মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ । এর সঙ্গে আরেকটা কথা বলেছিলেন ‘মুক্তির সংগ্রাম’। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালি জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন মঞ্চে দাঁড়িয়ে।
আইজিপি বলেন, আমরা সৌভাগ্যবান। তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুযোগ পেয়েছেন এবং দেশের সেবা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের ফলে আমরা স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করছি। এজন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে হাজার বছর ধরেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে এটি শেষ হবে না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত আত্মমর্যাদাশীল সেই জাতি হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠছে।
সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী সকলের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া, জাতির পিতার জীবনের ওপর নির্মিত লাইট আর্টস প্রদর্শন করা হয়।