করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা ও করনীয় বিষয়ে BSMMU’র ভাইরোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সাইফুল্লাহ মুন্সীর ব্রিফিং ঢাকা রেঞ্জ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ১০ মার্চ ২০২০ তারিখে ডিআইজি, ঢাকা রেঞ্জ জনাব হাবিবুর রহমান বিপিএম(বার), পিপিএম(বার) এঁর সভাপতিত্বে করোনা ভাইরাস বিষয়ে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয় রেঞ্জ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সাইফুল্লাহ মুন্সী এই সভার প্রধান বক্তা হিসেবে ভাইরাসটি সম্পর্কে বর্ণনা করেন এবং আমাদের করনীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগের ডাঃ মনোয়ার ও ডাঃ শহিদুল সহ ঢাকা রেঞ্জ কার্যালয়ের সকল পুলিশ সদস্য এবং রেঞ্জাধীন ১৩ টি জেলার ২ জন করে প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত ছিলেন।

করোনা ভাইরাস কি?
একটি সংক্রামক ভাইরাস। এটি কোষের ভিতর অবস্থান ও বিস্তার করে। কোষের বাইরে বাঁচে না। ভাইরাসটি শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমন ঘটায়। প্রাণঘাতী ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। যারা ইতোমধ্যে অ্যাজমা বা হাঁপানি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, পারকিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত তাদের বেশী সাবধান থাকতে হবে।

কিভাবে ছড়ায় :
ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন ভাইরাসের উৎপত্তি ও প্রসার বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক সাইফুল্লাহ জানান, সকল ভাইরাসই কোন না কোন প্রাণীর দেহ থেকে ছড়ায়। সম্প্রতি চীনের উহান প্রদেশ থেকে বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি বাদুড় থেকে এসেছে বলে বিজ্ঞানীদের বরাতে তিনি জানান।

ভাইরাসটি একজন থেকে অন্যজনের দেহে ছড়ায়। একজন ব্যক্তির দেহে এটি ১৪ দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
আক্রান্ত ব্যক্তির
o হাঁচি/কাশির মাধ্যমে
o থুতু/কফ/লালার মাধ্যমে
o স্পর্শের মাধ্যমে যেমন কোলাকুলি, করমর্দনের মাধ্যমে
o ভাইরাস আছে এমন কোন বস্ত যেমন চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার ইত্যাদি স্পর্শের পর হাত না ধুয়ে চোখ, নাক, মুখে হাত দিলে

করোনা ভাইরাস কি ভীতিকর?

অধ্যাপক ডাঃ সাইফুল্লাহ মুন্সীর মতে করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা ফলাফলের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, ৫৫ বছরের বেশী বয়সীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী। কিশোর-তরুণ-যুবক অর্থাৎ ৫৫ বছরের কম বয়সীদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। শিশুদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ০১ ভাগেরও কম। অধ্যাপক সাইফুল্লাহ সবাইকে আশ্বস্ত করেন যে, এই ভাইরাসের কারণে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ৪০০০ মানুষের মৃত্যু ঘটলেও ৬০ হাজারের বেশী মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরতে পেরেছে।

৫০ হাজার আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে পরিচালিত সাম্প্রতিক একটা গবেষণার বরাতে তিনি জানান যে, আক্রান্তদের মধ্যে
• কোন অসুবিধা হয়নিঃ ৮০% লোকের
• কিছু লক্ষণ দেখা গিয়েছিলো ১৫% লোকের
• নিবিড় চিকিৎসা প্রয়োজন হয়েছিলো ৫% লোকের

সুতরাং ভীতি নয়, প্রয়োজন সচেতনতা

আক্রান্তের লক্ষণ

• জ্বর দিয়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়
• এরপর শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে
• প্রায় এক সপ্তাহ পর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়
• শ্বাসকষ্ট একসময় নিউমোনিয়ায় পরিণত হয়
• হাল্কা ঠাণ্ডা লাগা থেকে মৃত্যুর সব লক্ষণ দেখা দিতে পারে

প্রতিরোধে করনীয়ঃ

• হাত পরিচ্ছন্ন রাখুন
o শুধু পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে নিন
o সম্ভব হলে সাবান – পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন
o আরো সতর্ক থাকতে চাইলে হেক্সিসল বা সানিটাইজ্যার দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন
• হাঁচি/কাশি হলে টিস্যু/রুমাল/ হাতের কনুই ব্যবহার করুন, টিস্যু নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন
• আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ০১ মিটার দুরে থাকুন
• পশু পাখি থেকে দুরে থাকুন

ফেস মাস্ক কি ভাইরাস প্রতিরোধ করে?

অধ্যাপক ডাঃ সাইফুল্লাহ’র মতে ফেস মাস্ক আমাদের একটা False Sense of Security দেয়। প্রকৃতপক্ষে ফেসমাস্ক পরিধান করা জরুরী যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের। সুস্থ ব্যক্তির ফেসমাস্ক ব্যবহার তাকে বাড়টি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারে। যেমন, একটি মাস্ক সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কার্যকর থাকে। এর বেশী সময় ধরে পরিধান ব্যবহারকারীকে অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। আবার ফেসমাস্ক ব্যবহারে মাস্কের বাইরের অংশে জীবাণু বা ভাইরাস আটকে থাকতে পারে। ব্যবহারকারী নিরাপদ স্থানে পৌছার পর হাত ব্যবহার করে মাস্কটি যখন খুলবেন, তখন তিনি সতর্ক না থাকলে সম্ভাব্য ভাইরাস তার হাতে, জামায়, যেখানে মাস্কটি রাখবেন সেখানে জীবাণু ছড়িয়ে পরে নিজের জন্য যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করেন তেমনি আশপাশের অন্যান্যদের জন্যও ঝুঁকি তৈরি করেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন