দর্শকদের ভালোবাসা জয় করেছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’। মুক্তির প্রথম দিন (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে এসে এমন প্রতিক্রিয়া জানালেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার।

সঙ্গে তিনি স্মৃতি-কাতর হন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ও ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবি দুটি তৈরির পেছনের গল্প বলে। কারণ, দুটো ছবিতেই ছিলো তার সরাসরি সম্পৃক্ততা।

‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিটি দেখার পর এই পুলিশ কর্তার প্রতিক্রিয়া, দুই ঘণ্টা ২১ মিনিট দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখাটাও ছবিটির একটা সাফল্য। তার ভাষ্যে, ‘ছবিটির গল্প ঝুলে যায়নি। টান টান উত্তেজনা ও সাসপেন্সে ভরপুর ছিল বলেই ছবিটি দর্শকরা গ্রহণ করেছে। ভিএফএক্স, সাউন্ড কোয়ালিটি, শিল্পীদের অভিনয়, কলাকুশলীদের মুন্সিয়ানায় এই ছবিটি একটি ভিন্নধর্মী ও মানসম্পন্ন চলচ্চিত্রের কাতারে স্থান পেয়েছে বলে আমি মনে করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের র‍্যাব ট্রুপস ও অফিসাররাও দুর্দান্ত কাজ করেছে। নানামাত্রিকতায় অপারেশনের দৃশ্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটি না দেখলে বোঝা যাবে না, আমাদের অফিসাররা কত চৌকস ও তারা কত পরিশ্রম করতে পারে। দর্শকরা ছবিটি গ্রহণ করেছে এটাই আমাদের বড় সাফল্য।’

‘ঢাকা অ্যাটাক’ হয়ে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ নির্মাণের গল্প রোমন্থন করে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘‘জলদস্যুদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত সুন্দরবনের শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অপারেশন শুরু করে র‍্যাব। অফিসার ও ট্রুপসদের দক্ষতা ও চৌকস অপারেশনের মাধ্যমে সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত করা হয়। আর সেই সাফল্যগাঁথা ফ্রেমে ফ্রেমে জাতির সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যেই ‘অপারেশন সুন্দরবন’ বানানোর পরিকল্পনা করি। তবে, মাত্র একটি ছবিতে র‍্যাবের সাফল্য তুলে ধরা সম্ভব নয়। আমি মনে করি, এই ছবিটি র‍্যাবের বহু সাফল্যের একটা অংশ। ছবিটি নির্মাণের পরিকল্পনার পরে  দীপনকে বললাম তুমি সুন্দরবনে যাও, সেখানে থাক, সেখানকার ভাওয়ালি, মধু সংগ্রহকারী, জেলেসহ সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলো এবং সেসব নিয়ে স্ক্রিপ্ট করো। দীপন তাই করলো। স্বাধীনতার পর প্রায় চল্লিশ বছর যাবত জলদস্যুদের অভয়ারণ্য ছিলো সুন্দরবন। র‍্যাব সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত করার পাশাপাশি একটি গুনগত মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র উপহার দিতে পেরেছে। এর আগে দীপংকর দীপনকে দিয়ে যখন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ নির্মাণ করি তখন আমি পুলিশ কমিশনার। ছবিটি যখন মুক্তি পায় তখন আমি র‍্যাবের ডিজি। আর ‘অপারেশন সুন্দরবন’ বানানোর পরিকল্পনার সময় আমি র‍্যাবের ডিজি আর ছবিটি মুক্তির সময় আমি পুলিশের আইজি!’’

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ পরিচালক মেজর রইসুল আযম, নির্মাতা অরুণ চৌধুরী, চয়নিকা চৌধুরী, অভিনেত্রী তানজিকা, নির্মাতা এস এ হক অলিক ও রায়হান রাফি, অভিনেত্রী ও নির্দেশক হৃদি হকসহ ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির শিল্পী ও কুশলীরা।

দেশের ৩৫টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে দীপংকর দীপনের ‘অপারেশন সুন্দরবন’। মুক্তির প্রথম দিনেই প্রায় প্রতিটি হলে হাউসফুল গেছে সিনেমাটি। সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচকরা মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন এটি দেখে।

প্রেক্ষাগৃহে নেমেছে মানুষের ঢলর‍্যাবের উদ্যোগে নির্মিত এ সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াজ আহমেদ, সিয়াম আহমেদ, নুসরাত ফারিয়া, জিয়াউল রোশান, দর্শনা বণিক, তাসকিন রহমান, রওনক হাসান, তুয়া  চক্রবর্তী, মনোজ প্রামাণিক, সামিনা বাশার, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আরমান পারভেজ মুরাদ, নরেশ ভুইয়া, মানস বন্দোপাধ্যায়, মনির খান শিমুল প্রমুখ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্টার সিনেপ্লেক্সের সবগুলো শাখায় মুক্তির প্রথম দিনে ‘অপারেশন সুন্দরবন’র বেশিরভাগ শো হাউজফুল গেছে। বসুন্ধরা সিটিতে পাঁচটি শো-এর চারটিই ছিল হাউজফুল। অন্যান্য হলগুলোতেও ছবিটি দেখতে দর্শকের উপস্থিতি ছিল চোখ পড়ার মতো।

সিনেপ্লেক্সের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একসঙ্গে বাংলাদেশের পাঁচটি ছবির প্রদর্শন ও দর্শকদের বাংলা ছবির প্রতি যে আগ্রহ দেখছি, এমনটা আগে দেখা যায়নি। দর্শকদের চাহিদায় বিদেশি ছবির শো কমিয়ে দেশের ছবি প্রাধান্য পাচ্ছে। বাংলা ছবির সুদিন ফেরাতে এটি ইতিবাচক দিক।’

সিরাজগঞ্জের রুটস সিনেক্লাবের চেয়ারম্যান সামিনা বলেন, “আমাদের এখানে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমাটি চালাচ্ছি। শুক্রবার দিনের প্রথম শো হাউসফুল ছিল না। বিকেল ও রাতের দুটি শো হাউসফুল গেছে।”

রাজধানীর মধুমিতা হলের কর্ণধার নওশাদ বলেন, “প্রথম দিন খুব ভালো চলেছে। যদিও সকালের শো তে আশানুরূপ দর্শক ছিল না। কিন্তু বিকেলের শোতে ভালই দর্শক এসেছে। হাউজফুল ছিল। মনে হচ্ছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিটি ভালো যাবে।”

সিনেমা দেখতে আসা অন্য দর্শকরাও মনে করছেন ‘অপারেশন সুন্দরবন’র মতো আরও সিনেমা নিয়মিত নির্মাণ হওয়া উচিত। তাতে করে হলবিমুখ মানুষ আবারও হলমুখী হবে।

২৩ সেপ্টেম্বর দেশের ৩৫টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় র‌্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটির ব্যানারে নির্মিত ছবিটি।প্রেক্ষাগৃহে নেমেছে মানুষের ঢল





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন