সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া তিনটা পর্যন্ত আসামীপক্ষ আংশিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আগামি ২৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. হুমায়ুন কবীরের আদালতে এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, সহকারি এটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা, সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুল লতিফ, সাবেক পিপি এড. ওসমান গণি, অতিরিক্ত পিপি এড. ফাহিমুল হক কিসলু, সাবেক পিপি এড. তপন কুমার দাস, সাবেক অতিরিক্ত পিপি এড. আজাহার হোসেন, এড. শহীদুল ইসলাম পিন্টু, ঢাকা জজ কোর্টের এড. আব্দুল গফফার, অতিরিক্ত পিপি এড. সৈয়দ জিয়াউর রহমান বাচ্চু, এড. নাজমুন্নাহার ঝুমুর, এড. জিয়াউর রহমান জিয়া, এড. মোস্তাফিজুর রহমান শাহনাজ প্রমুখ।
আসামীপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন বাংলাদেশ হাইকোর্টের এড. শাহানারা আক্তার বকুল, এড. আব্দুল মজিদ (২), এড. মিজানুর রহমান পিন্টু, এড. তোজাম্মেলল হোসেন তোজাম, এড. কামরুজ্জামান ভুট্টো প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে আসামীপক্ষের আইনজীবী এড. আব্দুল মজিদ একজন সাক্ষীর জবানবন্দির সঙ্গে অপর সাক্ষীর জবানবন্দির ভাষ্য, রাস্তা আড় করে দেওয়া যাত্রীবাহী বাসে কখনো যাত্রী না থাকা আবার কখনো ৩৫ জন যাত্রী থাকা, কয়েকজন সাক্ষী হামলার ১০ মিনিট আগে কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে অবস্থান করার কথা বললেও তারা শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে ছিলেন বলে একজন সাক্ষীর জবানবন্দি দেওয়া, বাসটি সরসকাটি থেকে চাঁন্দুড়িয়া রুটের বলা হলেও চালক নজিবুল্লাহ সাক্ষীতে যাত্রীসহ বাসটি নিয়ে তিনি ওই দিন সকাল ১১টার দিকে সাতক্ষীরা থেকে যশোরে যাচ্ছিলেন বলে উল্লেখ করাসহ বিভিন্ন ভাষ্য তুলে ধরেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সম্পূরক অভিযোগপত্রে ঘটনাস্থলের আশে পাশে কমপক্ষে ১৪টি দোকান থাকলেও তাদের কাউকে সাক্ষী করেননি বলে আদালতকে অবহিত করেন। সর্বোপরি তিনি এ মামলাকে একটি রাজনৈতিক মামলা হিসেবে দাবি করেন।
প্রসঙ্গত: ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখে যশোরে ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিবের নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হয়।
এ ঘটনায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। পেনালকোর্ডের মামলাটি(টিআর-১৫১/১৫) সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন।
কাঠগড়ায় ৩৪ জন আসামীর উপস্থিতি ও আসামীপক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য আগামি মঙ্গলবার ধার্য দিন এর বিষয়টি নিশ্চিত করেন মুখ্য বিচারিক হাাকিম আদালতের পেশকার মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
– পত্রদূত নেট।