★★★★
সিটিজেন জার্নালিস্ট(জিমি):
নিচের লেখা গুলি আমার আমার লেখা নয়।লেখা গুলি মাগুরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের লেখা।মাগুরার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ মুনিবুর রহমান পদন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি মহোদয় হয়েছেন এবং সম্প্রতি তিনি মাগুরা থেকে বিদায়ী অবিভাদন নিয়ে টাকা রেঞ্জের সিআইডি তে যোগদান করবেন বলে জানা গেছে।গতকাল ০১/৩/২০১৮ তারিখ সকাল ১১.৫৩ মিনিটে Dc Magura ফেইজবুক আইডি থেকে পুলিশ সুপারের বিদায়ী অনুষ্ঠান সম্পর্কে একটি স্টাটাস আপলোড করা হয়।স্টাটাস টি হুবুহু কপি করে নিন্মে পেষ্ট করা হইলঃ——
!! একজন ভাল মানুষের বিদায় গাঁথা !!
এখনও বাংলাদেশের অনেক কিশোর/তরুণ স্বপ্ন দেখে একজন সৎ ও দেশ প্রেমিক পুলিশ অফিসার হবার। গত বছর ‘ঢাকা এ্যাটাক’ নামের একটি সিনেমা রাজধানী ঢাকার অভিজাত সিনেমা হলগুলোতে বেশ ক্রেজ তৈরী করেছিলো। সামাজিক গণমাধ্যমে সে সময় সিনেমাটি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল। অনেক কিশোর/তরুণের স্বপ্নের নায়ক একজন দেশ প্রেমিক পুলিশ অফিসার।
তাদের সেই স্বপ্নের নায়কের মতোই একজন মোঃ মুনিবুর রহমান, মাগুরা জেলার বিদায়ী পুলিশ সুপার। যাকে আমরা দেখেছি অনেক ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তা চেতনার একজন মানুষ হিসেবে। কোমলতা ও কাঠিণ্যের বিরল যুগলবন্ধী হয়েছে তার মধ্যে।
জেলা পর্যায়ে যারা সরকারী দায়িত্ব পালন করেন, তারা মেয়াদ শেষে বিদায় নিবেন। এটা খুব স্বাভাবিক। মোঃ মুনিবুর রহমানের প্রমোশন হবার কারণে তিনি বিদায় নিচ্ছেন। এতে মাগুরা জেলার প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষ ব্যথিত।
এ জেলায় তিনি ১ বছর ৪ মাস কাজ করেছেন। পদোন্নতির কারণে তিনি বদলী হয়ে ঢাকার সিআইডি ইউনিটে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি রেখে যাচ্ছেন তার গুণমুগ্ধ অসংখ্য মানুষ, কিছু অনুসরণীয় কীর্তি।
মাগুরা জেলায় ১৯৮৪ সাল থেকে যতো জন পুলিশ সুপার দায়িত্ব পালন করেছেন, মোঃ মুনিবুর রহমান তাদের মধ্যে অন্যতম সফল। মাগুরা জেলায় তিনি আসার পর জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে।
অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী মুনিবুর রহমান ছিলেন যেমন বিনয়ী তেমন আন্তরিক। মানুষের সমস্যা শোনার ব্যাপারে তার ধৈর্য ছিলো অপরিসীম। জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাসহ অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে তার অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিলো।
প্রত্যন্ত একটি গ্রামে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা একটা জুয়া খেলায় আসর তিনি ভেঙ্গে দিয়েছেন। এ জেলায় যুগ যুগ ধরে হয়ে আসা ঐতিহ্যবাহী কিছু ‘গোষ্ঠী বিবাদ’ বন্ধ করেছেন। তার কাছে যে কোন মানুষ গিয়ে অকপটে তার সমস্যা বলতে পারতেন। এমন সাহসী, দক্ষ এবং নির্ভীক কর্মকর্তাকে এ জেলার মানুষ অনেকদিন মনে রাখবে।
একবার মাগুরায় বড় ধরণের একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। বেশ ক’জন হতাহত হয়। সেই রাতে মুনিবুর রহমান রাত ৩টা পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত থেকে সড়ক চলাচল চালু করে ফেরেন।
তার সময়ে এ জেলায় সরকারী কাজে বাঁধা দিয়ে কেউ পার পায়নি।
সে যতো প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবান হোক। মামলা হলেই তাকে আইনের আওতায় আসতে হয়েছে। জেলা প্রশাসন যখনি পুলিশি সহায়তা চেয়েছে, তখনি (৭/২৪) সেটা পেয়েছে। এ সময় জেলার পুলিশ বিভাগের প্রতিটি সদস্যের মনোভাব ছিল ইতিবাচক।
জেলা প্রশাসকের সাথে জেলার পুলিশ সুপারের ‘মিথস্ক্রিয়া’ কারো কারো কাছে কৌতুহলের একটা বিষয়। জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপার, এই সম্পর্কটিকে মুনিবুর রহমান বিশেষ মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন যা হয়তো কারো কারো জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। তিনি জেলা প্রশাসনের প্রতিটি কর্মকর্তার প্রিয়ভাজন মানুষ ছিলেন।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা কিভাবে একটি জেলার বিভিন্ন সরকারী বিভাগকে সহায়তা করে, উন্নয়নে কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন, সেটি সামাজিক গবেষণার একটি বিষয় হতে পারে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে মোঃ মুনিবুর রহমানের জীবন যাপন ও সরকারী দায়িত্ব পালনের রীতি-নীতি অনুসরণীয় হতে পারে। তার সাথে কথা বলে মানুষ স্বস্তি বোধ করতেন।
তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো, তিনি মাগুরা জেলার মানুষের মতে, বিশেষত: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে নিজেকে আস্থার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
২০১৭ সালের জুন-সেপ্টেম্বর ১০০+, নভেম্বরে ৭২, ডিসেম্বরে ৪৭, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৪৫, ফেব্রুয়ারিতে ৪৩ জন মাদকের আসামী ছিলো মাগুরার জেলে। মাদক বিরোধী অভিযানে তার অবদান ছিলো প্রশংসনীয়।
বিদায়ের আগে সফলভাবে ৬৪ জন কনস্টেবল নিয়োগের একটি কাজ করে গেলেন। নিয়োগপ্রাপ্তদের আনন্দাশ্রু ভেজা প্রতিক্রিয়া সবাইকে আপ্লুত করেছে।
হাজারো হৃদয় সাথে করে তিনি মাগুরা থেকে চলে গেলেও- এটি চলে যাওয়া নয়।
তিনি তার সহকর্মীদের জন্য রেখে যাচ্ছেন দেশপ্রেম, সাহস, দক্ষতা আর সততার অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত।
শহীদ কাদরীর কবিতা থেকে ধার করে বলতে হয়-
” তোমাকে অভিবাদন, মুনিবুর। ”
আপনার জন্য অনেক শুভকামনা।
আপনার মতো একজন ভালো আর নিরহংকার মানুষকে সম্মাননা দিতে পেরে জেলা প্রশাসন, মাগুরা সম্মানিত বোধ করছে।
জেলা প্রশাসনের সবাই আপনাকে মিস করবে।
লেখকঃ জেলা প্রশাসক,মাগুরা।