পুলিশ বাহিনীকে উন্নত দেশের উপযোগী আধুনিক ও জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে কাজ করছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। তিনি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কনস্টেবল থেকে শুরু করে সকল পদমর্যাদার অফিসার ও ফোর্সের মতামত জানতে চান।
আইজিপি সবার মতামত নিয়ে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে পুলিশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে চান, যাতে জনগণ পুলিশকে প্রকৃত অর্থেই ভালবাসে, সম্মান করে, শ্রদ্ধা জানায়; যাতে জনগণের হৃদয়ে দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী আসন করে নিতে পারে বাংলাদেশ পুলিশ।
বৃহস্পতিবার(০২ জুলাই) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ইনোভেশন এন্ড বেস্ট প্র্যাকটিস শাখা আয়োজিত আয়োজিত সকল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মতামত গ্রহণ বিষয়ক পাঁচ দিনের কর্মশালার শেষ দিন সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুলিশ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে সাধারণ থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকহানাদার বাহিনীকে মোকাবিলা করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের অন্যতম সারথী হিসেবে দেশের জন্য রক্ত দিয়ে গড়া এ বাহিনীকে উন্নত দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
পুলিশ প্রধান বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম দিন থেকেই কোন ধরনের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য অপেক্ষা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক পুলিশ সদস্য নিজের অজান্তেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন ৪৪ জন সম্মুখযোদ্ধা বীর পুলিশ সদস্য।
বর্তমানে পুলিশ সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান সুরক্ষা সামগ্রী রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মাত্র দুই সপ্তাহে ২৫০ থেকে ৫০০ বেডের কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় ঢাকায় আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সম্পন্ন একটি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য মাত্র ১২ দিনে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালেও কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ন্যায় একই প্রটোকলে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। এর ফলে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন, তাদের মৃত্যুর হার কমছে।’
আইজিপি বলেন, বর্তমান করোনাকালে পুলিশ যেভাবে জনগণের কাছে গিয়েছে, তাদের পাশে থেকেছে, তাদেরকে সুরক্ষা দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের প্রশংসা করেছে। পুলিশ প্রধান হিসেবে এ জন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত।
ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, করোনায় পুলিশ শুধু কোয়ারেন্টাইন, লকডাউনই বাস্তবায়ন করেনি। অসহায় মানুষের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছে, অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে যখন স্বজনরা কেউ এগিয়ে আসেনি, তখন পুলিশ তাদের জানাজার আয়োজন, দাফন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেছে।
‘এসব দায়িত্ব পুলিশের নয়, পুলিশকে এ দায়িত্ব দেয়াও হয়নি। কিন্তু পুলিশ কেন এটা করেছে ? পুলিশ কাজটি নিজেদের মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে করেছে। এজন্য মাত্র তিন মাসে পুলিশ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বাংলাদেশ পুলিশের এ ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।’
আইজিপি বলেন, ৫০ বছর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধ দেশ সেবায় পুলিশের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করেছিল। ৫০ বছর পর করোনা আবার জনগণের কাছে যাওয়ার একটা সুযোগ নিয়ে এসেছে।
আইজিপি প্রশ্ন রেখে বলেন, এক সময় করোনা চলে যাবে, তখন কি হবে? আমরা কি আগের অবস্থায় ফিরে যাবো? তিনি বলেন, না, আমরা যেখানে গিয়েছি সেখান থেকে আর ফিরে আসবো না। সেখান থেকে আরও এগিয়ে যাব। তিনি বলেন, মানুষের ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা কেনা যায় না, অর্জন করতে হয়।
এর আগে আইজিপি বক্তব্যের শুরুতে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে শহীদ পুলিশ সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি তাদের পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। যেসব পুলিশ সদস্য অসুস্থ রয়েছেন তাদের দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করেন।
বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিটকে পাঁচটি ক্লাস্টারে ভাগ করে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সকল পদমর্যাদার প্রায় পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য উত্তম চর্চা, ক্যারিয়ার, দুর্নীতি, ওয়েলফেয়ারসহ অন্যান্য বিষয়ে লিখিত মতামত দিয়েছেন।