নোয়াখা‌লীতে পু‌লিশ সুপার আব্দুল হা‌কিম সহ মু‌ক্তিযু‌দ্ধে শ‌হিদ পু‌লিশ সদস্য‌দের সম্মা‌নে ভাস্কর্য উ‌দ্বোধন ও বইয়ের মোড়ক উন্মোচন কর‌লেন আই‌জি‌পি।

আমরা হতভম্ব হয়ে দেখি রাজাকার পুত্ররা দম্ভের সাথে চিৎকার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলছে, আমি রাজাকার পুত্র”। স্বাধীনতার মাত্র পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এ রাজাকারের পুত্র-সন্তানরা কিভাবে এ দুঃসাহস পায় বাংলার মাটিতে যারা দু’লক্ষ নারীর সম্ভ্রম হরণ করেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে খুন করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে তা‌দের পক্ষ নি‌য়ে দম্ভ করার! এ গণহত্যার দোসররা মাত্র পঞ্চাশ বছরের মধ্যে আস্ফালন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোটি কোটি মানুষের সামনে বলে তারা রাজাকার পুত্র। এ দম্ভ চূর্ণ করতে হবে এ দেশের সাধারণ মানুষকে।’

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) আজ দুপুরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ভার্চুয়ালি নোয়াখালী জেলা পুলিশ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য ‘নির্ভীক’, নবনির্মিত সুধারাম মডেল থানা, সোনাপুর পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশ লাইন্স নারী ব্যারাক ভবন উদ্বোধন এবং ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ নোয়াখালী জেলা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে আমাদের পূর্বসূরীরা যে দেশটিকে আমাদের জন্য উপহার দিয়েছেন, তাদের যে অনবদ্য আত্মত্যাগ, সে আত্মত্যাগের মর্যাদা ধরে রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা। এটি একটি ঐতিহাসিক দায়, একটি ঐতিহাসিক কর্তব্য। দেশ ও মানু‌ষের জন্য, স্বাধীনতার জন্য স্ত্রী ও সন্তানসহ স্বপ‌রিবা‌রে নোয়াখালী জেলার তৎকালীন পু‌লিশ সুপার আবদুল হা‌কি‌মের মহান আত্মত্যা‌গের কথা সশ্রদ্ধচি‌ত্তে স্মরণ ক‌রেন আই‌জি‌পি। ‌মহান স্বাধীনতাযু‌দ্ধে আত্মত্যাগকারী নোয়াখালী ‌জেলা পু‌লি‌শের অন্যান্য কর্মকর্তা ও বীর পু‌লিশ সদস্য‌দের অবদান‌কেও সশ্রদ্ধ‌চি‌ত্তে স্মরণ করেন তি‌নি।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ যে দুর্নিবার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিল আমাদেরকে সেই অহংকারের জায়গাগুলোকে আরও সুসংহত করতে হবে। এক্ষেত্রে এ ধরনের পুস্তক, ভাস্কর্য হতে পারে অন্যতম নিয়ামক, যাতে আমরা কখনো ইতিহাস বিস্মৃত না হই। তিনি বলেন, এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশের যে অবদান, ভূমিকা রয়েছে তা দুটি কারণে ডকুমেন্টেড হওয়া দরকার। একটি হলো জাতির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ হিসেবে এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ইতিহাস, ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে।

আইজিপি বলেন, পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি যে যেখানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, যেখা‌নে যে বীরত্বগাথা র‌চিত হয়েছে তা তুলে আনতে হবে। বাঙালি জাতির উত্তরণের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের যে ভূমিকা রয়েছে তা ডকুমেন্টেড হতে হবে। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে এগুলোকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে ডকুমেন্টেড করতে হবে, যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এর মর্যাদা অনুভব করতে পারে, অহংকার করতে পারে, একটা মর্যাদাবান জাতি হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে সবাইকে সচেষ্ট হওয়ার আহবান জানান আইজিপি।

নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর সভাপতি হাবিবুর রহমান, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ ইকবাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তাগণ নোয়াখালী জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার শহিদ আব্দুল হাকিমের মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স প্রান্তে অতিরিক্ত আইজি ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত আইজি এস এম রুহুল আমিন, অতিরিক্ত আইজি মোঃ মাজহারুল ইসলাম, এটিইউ’র অতিরিক্ত আইজি মোঃ কামরুল আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে আইজিপি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ভাস্কর্য ‘নির্ভীক’, নোয়াখালী জেলা পুলিশের নবনির্মিত সুধারাম মডেল থানা, সোনাপুর পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশ লাইন্স নারী ব্যারাক ভবন ভারচুয়ালি উদ্বোধন করেন। তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ – নোয়াখালী জেলা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রকাশিত বইটি সম্পাদনা করেছেন মোঃ আলমগীর হোসেন। গবেষণায় ছিলেন, এ কে এম গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ, আবু নাছের মঞ্জু ও মোঃ এনায়েত করিম।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন