মাদক কারবারিদের নজরদারি ও গ্রেফতার করতে মোবাইলফোন ট্র্যাকার চেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে শুরুতেই এই দাবি ‘না’ করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ট্র্যাকারের দাবি প্রত্যাখ্যাত হলেও মাদক কারবারিদের নজরদারি ও তথ্য পেতে জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এ একজন কর্মকর্তা দেওয়ার সুযোগ পাবে সংস্থাটি।
জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সভায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, ‘মাদকপাচারকারীদের অবস্থান নিশ্চিত এবং গতিবিধি ট্রেস করার জন্য মোবাইলে ফান ট্র্যাকার প্রয়োজন।’
তবে গত ডিসেম্বরের এই দাবির বিষয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।
মাদকদ্রব্য মহাপরিচালকের দাবির বিষয়টিকে স্পর্শকাতর বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘মোবাইলফোন ট্র্যাকিং একটি স্পর্শকাতর বিষয়। ফলে এ মুহূর্তে ট্র্যাকার কেনা সমীচিন হবে না। তবে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে মাদক কারবারিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও গ্রেফতারের জন্য এনটিএমসি’র কার্যালয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।’
জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) হলো বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অধীন একটি অধিদফতর। সংস্থাটি সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা, পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য সরকারি সংস্থাসমূহকে যোগাযোগ সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করে থাকে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের মহাপরিচালকের মোবাইল ট্র্যাকারের দাবির পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এনটিএমসিতে একজন কর্মকর্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের লিখিত আদেশের মাধ্যমে ওই কর্মকর্তাকে সেখানে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হবে।
দেশে পুলিশসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসামিদের গ্রেফতারে প্রথাগত সোর্সের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক মোবাইলফোন ট্র্যাকিংয়ের সহায়তা নেয়। যদিও এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও ব্যক্তিদের অভিযোগ রয়েছে। মূলত অপরাধীদের অবস্থান নিশ্চিত হতে মোবাইলফোন ট্র্যাক করা হয়। তবে এর অপপ্রয়োগ হওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে আসছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনও দেশের সরকারি সংস্থা সাধারণ মানুষকে ট্র্যাক করতে পারে না। তবে বিভিন্ন দেশ গুরুতর ও প্রকৃত অপরাধ দমন করতে প্রায়শই মোবাইলফোন ট্র্যাকিং করে অপরাধীদের গ্রেফতার করে। বাংলাদেশেও বেশ কয়েকটি মামলার আসামিদের এভাবে গ্রেফতার করতে দেখা গেছে। তবে ট্র্যাকিংয়ের একটি সীমা থাকতে হবে। ট্র্যাকিং অপরাধ দমনের জন্য উপকারী, তবে এটি অবশ্যই আইনের মধ্যে থেকেই করতে হবে। জাতীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।’ ট্যাকিংয়ের সীমাহীন ব্যবহারে গণমানুষের গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।