রক্তে কেনা স্বাধীনতা বাঙালি জাতির আজন্ম সাধনার ফসল : প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম 

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 229 দর্শন

 

আজ বাঙালির গৌরবদীপ্ত ২৬ মার্চ– ৫৩ তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয়  দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের  এই দিনে বিশ্বের বুকে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।লেখার শুরুতেই আমি গভীর শ্রদ্ধা ও অবনতমস্তকে স্মরণ করছি  স্বাধীনতার  স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে,  গভীর শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর বেদনায়   স্মরণ করছি  মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদকে, স্মরণ করছি  মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী  ৪   জাতীয় নেতাদেরকে।

২৬ মার্চ বাঙালীর শৃৃঙ্খলমুক্তির দিন ও  রক্ত, অশ্রুস্নাত বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন। বাঙালীর দীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত লড়াইয়ের সূচনাকাল। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন ।  সময়ের হাত ধরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নতুন সূর্যোদয়ের দিন  । ২০০  বছরের দাসত্ব আর ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার দিন। অসংখ্য শহীদের রক্তে ভেজা, জাতির বীর সেনানীদের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনা দিন।  ভয়াল কালরাতের ধ্বংসস্তূপ আর লাশের ভেতরে দিয়ে রক্ত রাঙা  নতুন সূর্য উঠার দিন। বাঙালি জাতির  সবচেয়ে গৌরবের দিন, আত্মপরিচয় অর্জনের  দিন,  পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। যাঁদের রক্ত ও সম্ভ্রমের মূল্যে আমরা পেয়েছি মহামূল্যবান এই স্বাধীনতা, তাঁদের কাছে মহামূল্য ঋণ, গভীর কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবার দিন । কবিতার ভাষায় বলতে চাই:

২৬শে মার্চ তুমি নও শুধু একটি তারিখ। নও একটি স্মৃতি চিহ্ন, তুমি লাখো শহীদের রক্তের প্রতিক। 

তুমি চির বঞ্চিতের হুংকার,আবার তুমিই দিয়েছো চির শান্তি, ৩০ লক্ষ শহীদ আত্মার। “

হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাংগার  জন্য  বাঙালি জাতিকে দিতে হয়েছে চরম মূল্য।  দেশের মহার্ঘ্য স্বাধীনতার ৫২ বছরের এই ক্ষুদ্র পরিসরে দেশ ও জাতি অনেক ঘটন-অঘটন, চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী হয়েছে। সময়ে সময়ে এসব ঘটনা সমগ্র জাতিকে প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়েছে, পাল্টে দিয়েছে এর গতিপথ। কখনও জাতির জীবনে এসেছে হতাশা-অন্ধকারাচ্ছন্ন মুহূর্ত, কখনও বা হয়েছে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় উজ্জীবিত।

পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা সহস্র বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ আত্মমর্যাদায় বলীয়ান একটি জাতির সামনে অর্ধ শতাব্দির এই মাইলফলক অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। যেমনটি টানা তৃতীয় মেয়াদে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে গত ১৪ বছরে বদলে গেছে বাংলাদেশ, নতুন প্রজন্মের সামনে উদ্ঘাটিত হয়েছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের সত্য ও সঠিক ইতিহাস। ইতিহাসের খলনায়করা হারিয়ে গেছে সত্য ইতিহাসের বিশাল স্তূপের নিচে।

কোনো সৈনিকের একদিনের ঘোষণায় বা কারও বাঁশির শব্দ শুনে গোটা জাতি জীবন বাজি রেখে মরণপণ লড়াই-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েননি, এই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালী জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে একসাগর রক্ত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে পুরো বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ৪৭ থেকে ৭১ বাঙালির যা কিছু  অর্জন তার পরতে পরতে রয়েছে বংগবন্ধুর ত্যাগ,সংগ্রাম, আদর্শ,সততা আর বাঙালির প্রতি গভীর ভালোবাসা । বংগবন্ধু  শেখ  মুজিবুর রহমান  হচ্ছে সেই সোনার কাঠি, যা বাংগালী নামক ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়েছিল।

দ্বি-  জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের জাঁতাকল থেকে মুক্তি পেয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হলে  শুরু হয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বাঙালিদের নতুন করে শোষণ ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখার ষড়যন্ত্র।

পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী সচেতনভাবে বাঙালির ওপর সংখ্যালঘু জনগণের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আর  জন্মলগ্ন থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে দমন-পীড়ন করা ও  ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। মূলতঃ  পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালির ওপর শোষণ এবং ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর যে আগ্রাসন চালাতে থাকে তার প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠে নিরীহ বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ’৪৮-এ বাংলা ভাষার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৫৬-এর সংবিধান প্রণয়ন আন্দোলন, ’৫৮-এর মার্শাল ’ল বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা আন্দোলন, ৬৯ এর  গণ-অভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে জেনারেল আইয়ুবের শাসন। ” জাগো জাগো বাঙালি জাগো,  তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ”  স্লোগানে স্লোগানে  প্রকম্পিত হয় গ্রাম-শহর, জনপদ, শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে  ১৯৭০ সালের সারাধণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করে উল্টো  বাঙালির অধিকার হরণ করতে নানা রকম দমন-পীড়ন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ  ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দেন।  ৭ই মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বলেছিলেন  ” আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি এ দেশের মানুষের অধিকার চাই “। বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করে একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেছিলেন,  যেখানে তিনি ঘোষণা করেন:

এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,

 এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম “

-এই জগদ্বিখ্যাত ঘোষণার মধ্য দিয়েই মূলত বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে যায়,  খুঁজে পায় গেরিলাযুদ্ধের গোপন কৌশল ও দিকনির্দেশনা।  আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালীর হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ছবি।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। পর্দার আড়ালে প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞের নীলনকশা । বাঙালীর আবেগ, সংগ্রাম ও মুক্তির আকাংখাকে  নির্মূল করতে এবং  শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাংখাকে  রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ  মধ্য রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা, ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে  ওয়্যারলেসের মাধ্যমে

আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির সময়ের এই সাহসী সন্তান  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার হওয়ার পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বর ও নির্বিচারে গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও সর্বব্যাপী পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতি তাদের সর্বশক্তি দিয়ে ইস্পাত কঠিন প্রত্যয় নিয়ে  “জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু” স্লোগান বুকে ধারণ করে  সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং ভেসে যায় পাক হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট। প্রায় এক কোটি মানুষের ভারতে আশ্রয় গ্রহণ এবং মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দান, রাশিয়ার অস্ত্র সরবরাহ ও কুটনৈতিক সমর্থন এবং ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায়  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বে  মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধেই  ঐ ঘোরতর অমানিশা ভেদ করে  বাঙালি জাতির  ২০০  বছরের পরাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে বাংলার  আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য,  পৃথিবীর মানচিত্রে আর একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জন্ম হয়- সেই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।  তাই  নিঃসংকোচে বলতে পারিঃ

After centuries of colonial rules, the nation finally achieved its independence in 1971 through a protracted struggle and a 9-month long blood-spattered Liberation War under the great leadership of the Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman. The greatest achievement of the Bengali nation is achieving Independence  “.

প্রসংগত :  নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন ”  শুধু ভিক্ষা করে কখনাে স্বাধীনতা লাভ করা যায় না। স্বাধীনতা অর্জন করতে হয় শক্তি দিয়ে, সংগ্রাম করে। স্বাধীনতার মূল্য দিতে হয় রক্ত দিয়ে ”। তিনি আরও বলেছিলেন ‘Give me blood, I will give you Independence.’ ভারতবাসী রক্ত দিয়েছিল, নেতাজী স্বাধীনতা দিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ফকির মজনু শাহের আখড়া থেকে সিপাই বিদ্রোহের দেয়াল টপকে, নজরুলের কারার লৌহ কপাট ভেঙ্গে, রবীন্দ্রনাথের বাঁধভাঙ্গার আহ্বানে নেতৃত্ব দিয়ে উচ্চারণ করলেন: রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। জয় বাংলা। আলহামদুলিল্লাহ, তিনি মানুষকে মুক্ত করে ছেড়েছেন, জাতিরাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে।

বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের এই ধারাবাহিক সংগ্রামে জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে কাটিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুই বার ফাঁসি কাষ্ঠের মুখোমুখি হয়েছেন, অসংখ্য মিথ্যা মামলায় অসংখ্যবার কারাবরণ করার পরও স্বাধীনতা অর্জনের প্রশ্নে আপস করেননি। তিনি বাংলার মানুষকে দিয়েছেন একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, জাতীয় সংগীত, সংবিধান, বিশ্বের বুকে গর্বিত পরিচয়।

বাংলা, বাঙালি ও বঙ্গবন্ধু একই বৃন্তে চেতনার তিনটি ফুল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে গরিব-দুখী-মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের একমাত্র লক্ষ। তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়া, শত যন্ত্রণা, দুঃখ-কষ্ট-বেদনাকে সহ্য করে বাংলার দু:খী মানুষের   মুখে হাসি ফোটাতে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।  তার আদর্শ ও কৌশলই ছিল এ দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো। একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে ছিলেন বিভোর। কারও কাছে হাত পেতে নয়, মাথা উঁচু করে বীরদর্পে বাঙালি জাতিকে  এগিয়ে নিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে চেয়েছেন- সেই লক্ষ্য বুকে ধারণ করে সারাজীবন আপসহীন সংগ্রাম করে গেছেন, জীবনে তিনি জেল-জুলুম, হুলিয়া কোনো কিছুই পরোয়া করেননি। শত যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট-বেদনাকে তিনি সহ্য করেছেন।কোনো বাধাই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং  ফাঁসির মঞ্চও যার কাছে ছিল তুচ্ছ- তিনি হচ্ছেন সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বলতে পারি:

Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, the greatest son of the soil and greatest Bengali for thousands of years, the great hero of history and the father of the nation, has made the dream of Bengal a reality and gave the people an independent state “.

১০ জানুয়ারি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে ফিরে এসে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করছিলেন। তখনই স্বাধীনতাবিরোধী বিশ্বাসঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে এই ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক বাসভবনেই নির্মমভাবে হত্যা করে।বঙ্গবন্ধু তার বুকের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের রক্তঋণ শোধ করে গেলেন।

তাই শেখ মুজিব শুধু  একটি নাম নয় , শেখ মুজিব একটি ইতিহাস, শেখ মুজিব একটি আদর্শ। যার জীবন, যৌবন, ধ্যান-জ্ঞান ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতা। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে তার নিজস্ব ভাষা ছিল, কৃষ্টি ছিল, সংস্কৃতি ছিল, ঐতিহ্য ছিল, শুধু  ছিল না একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাঙালিকে দিয়েছিলেন জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন- স্বাধীনতা, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখানেই বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব, তার সার্থকতা।

স্বাধীনতার এই ৫২  বছরের মধ্যে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা, ৭৫  পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর এবং পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোটের ৫  বছরে পুরো জাতি দেখেছে স্বাধীনতাবিরোধী, ৭১ এর  গণহত্যাকারী ও জাতির পিতার খুনীদের আস্ফালন, ইতিহাস বিকৃতির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র আর স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলার

চেষ্টা ও  তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি বাজানোর ওপরও ছিল অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। সময়ের ব্যবধানে আজ সেই ঐতিহাসিক ভাষণ জাতিসংঘের ইউনেস্কো ঘোষিত ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল’ হিসেবে বিশ্বসভায় স্বীকৃত।  আর  সত্য ইতিহাসকে কখনও মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না,  ইতিহাস কারও নির্দেশে রচিত হয় না। ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতেই চলে। ইতিহাসের সত্য রক্ষার খাতিরে ইতিহাসই বঙ্গবন্ধুকে ধরে রেখেছে এবং  রাখবে। পৃথিবীর  মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান চিত্রায়িত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারণেই। বিশ্বসভায় বাঙালি জাতির স্বগর্ব উপস্থিতিই স্মরণ করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুকে। জাতির পিতা  বঙ্গবন্ধু আজ শুধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীই নন, বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির অনুপ্রেরণা দাতা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

বিশ্বের মুক্তিকামী প্রতিটি  মানুষের মাঝে বঙ্গবন্ধু চিরদিন অম্লান এবং বাংলার জনতার হৃদয়ে চিরভাস্বর।

আমরা জানি,  Father of the Bengali Nations, Bangabandhu had two dreams – one was the independence of Bangladesh, the other was to transform Bangladesh into a golden Bengal. The first dream was materialized by Bangabandhu. The greatest achievement of the Bengalis is the independence of Bangladesh, which he (Bangabandhu) has brought. At present under the dynamic, prudent & magical leadership of HPM Sheikh Hasina, Bangladesh is fast moving towards realizing the second dream of the father of the nation. Hon’able Prime Minister Sheikh Hasina

is completing the incomplete works of Bangabandhu. With her dedication, honesty, and efficiency Bangladesh is surpassing many countries in the world & Bangladesh is the wonder of the world today. Hon’able Prime Minister Sheikh Hasina is committed to take Bangladesh forward through the path of prosperity which Bangabandhu dreamt of.

বাঙালি জাতির  অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের  জন্য  বঙ্গবন্ধুর শোণিতের উত্তরাধিকার যাঁর ধমনীতে, বংগবন্ধুর রক্ত যাঁর শিরা উপশিরায়, বংগবন্ধুর আদর্শ মিশে আছে যাঁর পরতে পরতে, বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম ও মানবপ্রেম যাঁর হৃদয়ে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন যাঁর সত্ত্বায়, তাঁরই সুযোগ্য কন্যা, বাঙালি জাতির অহংকার ও বাঙালি জাতির একমাত্র নির্ভরতার প্রতীক,  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  হাত ধরে  ও যাদুকরী নেতৃত্বে  বাংলাদেশ আজ বিশ্বে  উন্নয়নের রোল মডেল ।  অথচ  বাংলাদেশকে একদিন হেনরি কিসিঞ্জারসহ পৃথিবীর অনেকেই হাস্যাষ্পদ মন্তব্য করে বলেছিল, ” বাংলাদেশ হবে তলাবিহীন ঝুড়ি, বাংলাদেশ হবে দরিদ্র দেশের মডেল।” আজ তাদের বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আর এজন্যই  দৃঢ়কণ্ঠে বলতে পারি  :

” Bangabandhu for Independence and Sheikh Hasina for Economic Emancipation “.

মহান স্বাধীনতা দিবসের আজকের  এই  আনন্দঘন ক্ষণে আমার একান্ত প্রত্যাশা,  জাতির পিতার আরাধ্য স্বপ্নের বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার  নেতৃত্বে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির পিতার  স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাবার এই  মহতীযাত্রা অব্যাহত রাখবে।

মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীনতার অধিকারপ্রাপ্ত হয়, সেখানে আমাদের স্বাধীনতা অনেক রক্তের দামে কেনা, শহীদদের এই পবিত্র রক্তের দায় জাতি হিসেবে আমাদের সবারই। এই  দায় কিছুটা হলেও  শােধ হতে পারে কেবল স্বাধীনতাকে সবার জন্য ভােগ্য করে তােলার মাধ্যমে এবং সবাইকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার/ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানানোর মাধ্যমে। আমার বিশ্বাস বাঙালি জাতি আজ দৃপ্ত শপথ নেবে- জঙ্গী-সন্ত্রাস, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে,  শপথ নিবে  স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে  বঙ্গবন্ধুর  স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার।  সকল অন্ধকারের শক্তিকে পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোয়  দেশকে গড়ে তোলার- এই  দৃঢ়  শপথে বলীয়ান হবে বাঙালি জাতি।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাঙালি জাতি  মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে জাতির পিতা বংগবন্ধুর নির্দেশিত পথ অনুসরণপূর্বক  তাঁরই সুযোগ্য  কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর   বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে   অচিরেই   বাংলাদেশ হবে   জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সেই  ” ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলা ” এবং গড়ে উঠবে আগামীর  স্মার্ট বাংলাদেশ,  যেখানে প্রতিটি জনশক্তি হবে  স্মার্ট –  তারা প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখবে, ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি – যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা করতে হবে  ডিজিটাল ডিভাইসে।  আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ই-এডুকেশন, ই-হেলথ, ই-কৃষি, ই-গভর্ন্যান্সসহ  সব কিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে– এটাই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের  প্রত্যয় ও দৃঢ় অংগীকার ।

জয় বাংলা, জয় ববঙ্গবন্ধু

লেখক : আ,ন,ম তরিকুল ইসলাম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপসচিব) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এন্ড সাবেক নেতা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

 

 

 

 

 

 

 





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন