তাকে বলা হচ্ছিল ‘ক্যাসিনো সম্রাট’। অবৈধ জুয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর একে একে ধরা পড়ছিল তাঁর গুণধর ‘শিষ্যরা।’ কিন্তু সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ‘গডফাদার’ ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট । সম্রাট কোথায় আছেন, কখন গ্রেফতার হবেন এসব নিয়ে চলছিল জল্পনা।

অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ঠিকই তাঁরা ধরতে সক্ষম হয়েছেন দোর্দন্ড প্রতাপশালী ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে। গ্রেফতারের মাত্র দু’দিন আগে সম্রাট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) ড.বেনজীর আহমেদ গণমাধ্যমকর্মীদের ‘ধৈর্য্য’ ধরতে বলেছিলেন। তখনও হয়তো বা অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন তিনি হয়তো কথার কথা বলেছেন।

কিন্তু রোববার (০৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রাম থেকে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এবং তার সহযোগী একই কমিটির সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানকে যখন র‌্যাব গ্রেফতার করে এবং গণমাধ্যমের কল্যাণে যখন সেটি দ্রুত সতের কোটির বাংলাদেশীর মাঝে ছড়িয়ে পড়ে তখন র‌্যাবের প্রশংসায় মেতে উঠে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া।

বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে এবং র‌্যাবের প্রশংসায় সরগরম হয়ে উঠে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ এ মাধ্যমটি। তাঁরা বলছেন, ‘অপরাধ দমনে র‌্যাবের ধারাবাহিক সাফল্যের বহি:প্রকাশ ‘ক্যাসিনো সম্রাটের’ গ্রেফতার।’

আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘দেশের মানুষের আস্থাভাজন ও প্রিয় এ সংস্থা সাধারণ মানুষকে সাহসে আবারো বলিয়ান করে তুলেছে। র‌্যাব ডিজি’র কথার সঙ্গে কাজের মিল সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।’

এর আগে গত শুক্রবার (০৪ অক্টোবর) রাজধানীর বনানী পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে যখন র‌্যাবের ডিজি ড.বেনজীর আহমেদ কথা বলছিলেন। তখন গণমাধ্যম কর্মীরা তাঁর কাছে সম্রাটের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান।

উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি স্পেসিফিক কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না। আমরা ধৈর্য্য ধরি, সমস্ত কিছুর উত্তর পাওয়া যাবে।’

শুদ্ধি অভিযানের বিষয়টিকে অনেক বড় বিষয় উল্লেখ করে র‌্যাব ডিজি বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। দুর্নীতিবিরোধী সামগ্রিক এ অভিযানে অনেক এজেন্সি জড়িত। আর এ অভিযানের র‌্যাব সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করছে।’

ড.বেনজীর আহমেদ সেদিন আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবিরোধী যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটা সুদূরপ্রসারী। এর ফল দেশের মানুষ পাবেন, সার্বিক উন্নয়নে এর প্রভাব পড়বে। এর সুফল প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পাবে। সেজন্য আমরা অপেক্ষা করি, অধৈর্য্য হওয়ার কারণ নেই।’

সম্রাটকে গ্রেফতারের পর রোববার(০৬ অক্টোবর) দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মলনে র‌্যাব ডিজি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, কেউ আইনের উর্ধে নয়। এ দেশে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন। আইন মেনে চলবেন। কেউ যদি আইন অমান্য করেন, বেআইনী কাজে লিপ্ত হন, তাকে শাস্তি পেতে হবে।

সম্রাটের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যেসব জায়গায় ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি, সেসব জায়গা থেকে সম্রাটের নাম বার বার এসেছে। ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগেই তাকে আটক করা হয়েছে। সম্রাটের সঙ্গে আরমান নামে একজনকে আটক করা হয়েছে, সেও এই ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত।

‘আমরা অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো বন্ধ করেছি। ক্যাসিনোর সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অভিযান চলমান। এটা একটা বড় ধরনের কৌশল। এর সুফল জনগণ আগামীতেও উপভোগ করতে পারবে। তবে এই ধারা ধরে রাখতে হলে শুধু একটি ফোর্স নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ফোর্সকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

র‌্যাব ডিজি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা একটি ‘ভাইব্র্যান্ট ডেমোক্র্যাসি’ এবং অর্থনৈতিভাবে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। এ রকম পরিবেশে দেশে কারও হাওয়া হওয়ার কারণ নেই। পাশাপাশি বলতে চাই, এ দেশের সবাই সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবেন, এটা যেমন সত্যি, তেমনি দয়া করে কেউ অবৈধ বা বেআইনী কাজে লিপ্ত হবেন না।

তিনি বলেন, ক্যাসিনো নিয়ে কাজ করতেই একাধিকবার তার নাম পেয়েছি। তাছাড়া ক্যাসিনোতে জড়িতদের বিষয়ে গণমাধ্যমেও তার নাম এসেছে। ডেফিনিটলি এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আসলে আমরা যখন ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করি তার এক-দুদিনের মধ্যেই উনি ঢাকা ত্যাগ করে আত্মগোপনে যান। উনাকে খুঁজতে আমাদের দীর্ঘ সময় লেগেছে।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন