র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না বরং সংবিধান ও আইন মেনে কাজ করে বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটিলিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন পিপিএম-বার।
তিনি বলেছেন, আমাদের স্বাধীন মিডিয়া আছে, সুশীল সমাজ আছে। সব দিক থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিটি বিষয় যাচাই-বাছাই করা হয়। এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনও সুযোগ নেই। সবকিছু আইন এবং বিধির আলোকে সংঘটিত হয়।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) বরগুনার পাথরঘাটায় আমেরিকায় র্যাবের ৭ কর্মকর্তার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে পাথরঘাটা উপজেলা চত্বরে সুধী সমাবেশে বঙ্গোপসাগরসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন র্যাব মহাপরিচালক।
আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা বাংলাদেশের সংবিধান, আইন ও বিধি অনুযায়ী কাজ করে থাকি। র্যাব কোনও কাজ করলে আইন অনুযায়ী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করে থাকেন। পুলিশ তদন্ত করে। আমরা কিন্তু তদন্ত করি না। এরপর যদি মামলার প্রয়োজন হয় তাহলে মামলা হয়। এটারও তদন্ত হয়। জুডিশিয়াল প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই হয়। এরপর ইন্ডিপেনডেন্ট জুডিশিয়ারি যে সিদ্ধান্ত দেয়, সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, যেসব জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে যেভাবে চেয়েছে তাদের সেভাবে সহযোগিতা করেছি। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই ডাকাতি ছেড়ে জলদস্যুরা সমাজে সুস্থ ও সুন্দর জীবন নির্বাহ করুক।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করেছি, সাগরও আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দস্যুতা করে কেউ পার পাবে না। প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার ঘোষণা বাস্তবায়নে র্যাব কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
র্যাব ডিজি বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। এরপরও দু-একজন দস্যু চেষ্টা করেছে তাদের কর্মকাণ্ড চালাতে। কিন্তু আমরা তাদের আইনগতভাবে কঠোরভাবে মোকাবিলা করেছি। যেসব ডাকাত-দস্যু আত্মসমর্পণ করেছে, গত মাসেও আমরা তাদের ঘর দিয়েছি, দোকান দিয়েছি, গরু ও জালসহ নৌকা দিয়েছি। সবই করেছি আমাদের অর্থায়নে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে এসব করেছি। কারণ তারা যাতে সমাজের মূলধারায় ফিরে আসতে পারে।’
যারা দস্যুতা ছেড়ে এখনো আত্মসমর্পণ করেননি তাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘যারা এখনো আত্মসমর্পণ করেননি তাদের বলছি দস্যুপনা সম্মানজনক কাজ নয়। কারণ একজন দস্যুর সন্তান স্কুলে গিয়ে বলতে পারে না তার বাবা কী করে। আমার বাবা অমুক ডাকাত সর্দার। সেই বাচ্চা লজ্জিত হয়। এই লজ্জা নয়, আমরা চাই দস্যুরা সম্মানের সঙ্গে, গর্বের সঙ্গে ব্যবসা করবে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা দস্যুপনা থেকে সরে আসেন। আমরা চেষ্টা করছি আর্থিকভাবে সহায়তা করা ও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, ওই নির্দেশনার আলোকে সবাই যাতে সৎপথে আসেন, সৎভাবে ব্যবসা করেন। দরকার নেই ডাকাতি করে নদীর মধ্যে বসবাস করে জীবনযাপন করার।
‘হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, এখনো যারা এ পথে আছেন তারা সৎপথে চলে আসেন। আমাদের যদি সাহায্য লাগে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু ওই পথে থেকে সাধারণ জেলেদের সাগরে নামা বন্ধ করে দেবেন, এটা আমরা হতে দেবো না।’
জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে আপনাদের সঙ্গে আছি। পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনারা নিশ্চিন্তে মৎস্য আহরণ করুন, আমরা আগামী দিনেও আপনাদের পাশে থাকবো।
মতবিনিময় সভা শেষে সম্প্রতি জেলেদের হামলায় নিহত এক জেলের পরিবারকে এক লাখ টাকা এবং জলদস্যুদের হাতে বন্দি থাকার পর ফিরে আসা নয় জেলেকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেন র্যাব মহাপরিচালক।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল কেএম আজাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, বরগুনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।