সচ্চিদানন্দদেসদয়
শারদীয় দুর্গোৎসবে আজ মহাষ্টমী। আর মহাষ্টমীর মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। এই পূজাকে ঘিরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চলছে অন্যরকম আমেজ।
১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে ৯জন কুমারীকে পূজার মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। পূজার আগ পর্যন্ত কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। এছাড়া নির্বাচিত কুমারী পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন আচার-অনুষ্ঠান করতে পারে।কুমারী পূজা হলো তন্ত্রশাস্ত্রমতে অনধিক ষোলো বছরের অরজ:স্বলা কুমারী মেয়ের পূজা। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা এবং অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে এবং কামাখ্যাদি শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে ষোলো বছরের কম রয়স্কা কোন কুমারী বালিকাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করার রীতি আছে। বৃহদ্ধর্মপুরাণে আছে দেবী অম্বিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে আবির্ভূতা হয়ে বেলগাছে দেবীর বোধন করতে নির্দেশ দেন। তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবীকে কুমারী নামে অভিহিত করা হয়েছে।দক্ষিণ ভারতে কন্যকুমারীর মন্দিরে কুমারী প্রতিমার পূজা দেবীর নামের ঐতিহ্য বহন করছে, যেহেতু কুমারী পূজা তান্ত্রিক মতবাদের প্রতিফলন তাই ভারতের সব শক্তিপীঠেই কুমারী পূজা হয়। কুমারী পূজায় বিভিন্ন বয়সের কন্যাকে বিভিন্ন নামে পূজা করা হয়। এক বছরের কন্যা সন্ধ্যা, দুইবছরে সরস্বতী,তিন বছরে ত্রিধামূর্তি, চার বছরে কালিকা, পাঁচ বছরে সুভগা, ছ’বছরে উমা, সাত বছরে মালিনী, আট বছরে কুঞ্জিকা, ন’বছরে কালসন্দর্ভা, দশ বছরে অপরাজিতা, এগারো বছরে রুদ্রাণী, বারো বছরে ভৈরবী, তেরো বছরে মহাল²ী, চোদ্দ বছরে পঠিনায়িকা, পনেরো বছরে ক্ষেত্রজ্ঞা ও ষোলো বছরে অম্বিকা নামে অভিহিতা হয়। তন্ত্রে উক্ত আছে, কন্যা ঋতুমতী না হওয়া পর্যন্ত তারা এইসব নামে পূজিত হবে। আরও বলা হয়েছে যে একটি কুমারী কন্যাকে খাওয়ালে বিশ্বভুবনকে খাওয়াানো হয়। শাস্ত্র অনুসারে, অষ্টমী তিথিতে সাধারণত এক বছর থেকে ১৬ বছরের সুলক্ষণা কুমারীকে পূজা করা হয়। কুমারী পূজা কেন করা হয়, এ প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছেন, ‘সব স্ত্রী লোক ভগবতীর এক-একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতরি বেশি প্রকাশ। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতি হয়ে উঠবে পুত পবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন। প্রত্যেকে শ্রদ্ধাশীল হবে নারী জাতির প্রতি। অপর দিকে দূর্গাপূজার একটি বিশেষ অধ্যায় হল সন্ধিপূজা। দূর্গাপূজার অষ্টমীর দিন হয় এই বিশেষ পূজা। এই পূজার সময়কাল ৪৮ মিনিট। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় এই পূজা। যেহেতু অষ্টমী ও নবমী তিথির সংযোগ স্থলে এই পূজা হয় তাই এই পূজার নাম সন্ধিপূজা অর্থ্যাৎ সন্ধি-কালিন পূজা। এই পূজা দূর্গাপূজার একটি বিশেষ অঙ্গ, এই সময় দেবী দূর্গাকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয়ে থাকে। এই পূজা সম্পন্ন হয় তান্ত্রিক মতে। এই পূজায় দেবীকে ষোলটি উপাচার নিবেদন করা হয়।অষ্টমী পূজা হলো দূর্গা পূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।এই অষ্টমীর দিনে অনেক মানুষ পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে দেবী দুর্গা কে নিজের মনের ইচ্ছা জানাই। এই দিন চামুন্ডা রূপে দেবী দুর্গাকে পুজো করা হয়। এই দিন বিভিন্ন মন্দিরে চালকুমড়ো,আখ প্রভৃতি বলি দেবার রীতি প্রচলিত আছে।এই দিন অষ্টমীর সন্ধি পুজোর সময় ৬৪ ডাকিনী যোগিনীর পুজো করা হয়। এই দিন বেশিরভাগ মন্দিরে দেবী দূর্গা কে লুচি সুজির ভোগ দেওয়া হয়। এই মহা অষ্টমী হলো দুর্গাপূজার মধ্যে একটি অন্যতম সেরা দিন। এদিকে, শনিবার ছিল দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন, মহাসপ্তমী। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় মর্যাদায় উদযাপিত হয়েছে মহাসপ্তমী। নবপত্রিকা স্থাপনের মধ্যদিয়ে মহাশক্তি আনন্দময়ীর পূজা শুরু হয়। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজা হয়। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সেই সাথে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে দেবীর পূজা করেন ভক্তরা। সকালে পূজা শুরু হলেও দুপুরের পর থেকে আশাশুনি সহ সাতক্ষীরার মন্ডপগুলোতে ঢল নামে ভক্ত ও দর্শণার্থীদের। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নন, সব ধর্মের দর্শণার্থীরাই মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন। পূজাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মেলায়ও ভিড় করেন দর্শণার্থীরা।