আজ ২২ মার্চ ২০২১, সোমবার সকালে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম, রাজারবাগ-এ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ইউএনডিপি’র সহযোগিতায় “Gender Responsive Policing: An Approach of Bangladesh Police and Role of Bangladesh Police Women Network” শীর্ষক এক অনুষ্ঠান ও কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার), ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ড. মো. মঈনুর রহমান, অতি. আইজিপি (প্রশাসন), বাংলাদেশ পুলিশ, বিপিডব্লিউএন এর সভাপতি ও বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি আমেনা বেগমসহ বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। ইউএনডিপি’র পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মিস. ভ্যান নুয়েন, ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউএনডিপি, মিস. সুকো ইসিকাওয়া, কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউএন উইমেন এবং বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক এর মহাসচিব ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম-সচিব শায়লা ফারজানা। অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন সারাদেশ থেকে আগত বিপিডব্লিউএন প্রতিনিধিগণ। এছাড়া, সকল জেলার পুলিশ সুপারসহ জেলা ও মেট্টোপলিটনসমূহের বিপিডব্লিউএন-এর প্রতিনিধিগণ অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিপিডব্লিউএন-এর উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, স্কুলে স্কুলে গিয়ে মেয়েদেরকে উৎসাহিত করতে হবে, যাতে তারা পুলিশে যোগ দিতে আগ্রহী হয়। বাংলাদেশ পুলিশে আরো বেশি নারী পুলিশ নেয়ার মাধ্যমে পুলিশের নারীবান্ধব সেবা প্রদানের সক্ষমতা বাড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী সকল মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আইজিপি।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে যাদের জন্ম হয়েছে তারা জানবে না, একসময় দারিদ্র ও ক্ষুধা ছিল এ দেশের সাধারন মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী। বিশ্ব মোড়লেরা বলতো যে, এমন দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারবে না। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্ব মোড়লদের ধারণাকে ভুল প্রমান করে নিজের শক্তিশালী অবস্থান তৈরী করে নিয়েছে বাংলাদেশ। গত ৫০ বছরে সারা বিশ্বে মাত্র ৫ টি দেশ দারিদ্রতার অভিশাপ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পেরেছে এবং তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃড় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলা তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের কারনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিশেষ করে গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া ছিল বিস্ময়কর।

এ সময়ে বাংলাদেশ কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নই সাধন করেনি, বরং বিভিন্ন সামাজিক সূচকেও বিশ্বের অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য।
শুধু তাই নয়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আগামী ১০০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা ‘ডেল্টা প্ল্যান’ নিয়ে কাজ করছেন। দারিদ্র দুরিকরণের মডেল হিসেবে উন্নত বিশ্বের কোনো কোনো রাষ্ট্র প্রধান এখন বাংলাদেশকে অনুসরণের পরামর্শ দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের এ উন্নয়নের একটি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং কর্মক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান হারে নারীর অংশগ্রহন। আর এটি সম্ভব হয়েছে বিগত দিনগুলোতে শিক্ষা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের ফলে। এর মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সবার জন্য বিনা মূল্যে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে যে, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলগুলোতে মেয়েদের অংশগ্রহন ছেলেদের চেয়ে বেশি। যেটি শিক্ষিত ও কর্মক্ষম নারী গোষ্ঠি বিনির্মানে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এক সময় এ দেশে শুধু উচ্চবিত্বের জন্য শিক্ষার সুযোগ ছিল। এখন সমাজের তৃনমূল পর্যন্ত সব পরিবারের মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে, নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহনের সুযোগ বাড়ছে।

বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী উদ্যোগের ফলে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশে সর্বপ্রথম ৬ জন নারী পুলিশ সদস্য যোগদান করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। এ সংখ্যা আমাদের মোট পুলিশ জনবলের শতকরা ৭.৫ ভাগ, যা আনুপাতিক হারে জাপান পুলিশের নারী সদস্যদের সমান।

আইজিপি বলেন, বিপিডব্লিউএন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যগণ এই বাহিনীতে জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং এর ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। এই বাহিনীতে কর্মরত নারী সদস্যদের পাশাপাশি সমাজে নানা শ্রেনী পেশার নারীদের জন্য তারা অনুকরনীয় হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যেই, তারা নারীর উন্নয়ণ ও এগিয়ে চলায় নানাবিধ কর্মসূচী পালন করেছে।

বিপিডব্লিউএন এর উদ্দেশ্যে আইজিপি আরো বলেন, নির্যাতনের শিকার নারী ভিকটিমদের আরো বেশি মানসম্মত ও প্রয়োজনীয় সেবা দিতে প্রচলিত সেবাদানের পাশাপাশি ভিকটিমকে মানসিক কাউন্সিলিং, ট্রমা ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক পুনর্বাসনের জন্য কাজ করতে হবে।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন