পাঁচ বছর আগে ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

তিনি বলেছেন, হলি আর্টিজান হামলার পর প্রায় ১৫ শ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া বিপদগামী ১৫ জঙ্গি সদস্য আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে।

মঙ্গলবার র‌্যাব সদরদপ্তরে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে কথা বলেন র‌্যাবের ডিজি।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। ভয়াবহ ওই হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে পুরো দেশ। সেদিন জঙ্গিরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে, যাঁদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয় ও ৩ জন বাংলাদেশি। সেই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন।

র‌্যাবের ডিজি বলেন, হলি আর্টিজান পরবর্তী জঙ্গি অভিযানে শাহাদত বরণকারী লে. কর্নেল আজাদ এবং সকল দেশপ্রেমী, অকুতোভয় র‌্যাব সদস্য যারা দেশের স্বার্থে দায়িত্বপালনের সময় জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।

 

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে থেকে যেসব চিকিৎসক, নার্স, সাংবাদিক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য পেশাজীবীরা দেশ ও মানবপ্রেমে জাগ্রত হয়ে কাজ করছে তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাান র‌্যাব প্রধান।

জঙ্গি দমনে র‌্যাব প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলছে জানিয়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিষ্ঠা থেকে আমরা দুই হাজার পাঁচশত ৫১ জন জঙ্গি গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গি দমনে বিগত সময়ের অভিজ্ঞতায় হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় র‌্যাব। ঘটনার পরপরই র‌্যাব সদস্যরা হোটেল ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। চূড়ান্ত সম্মুখ অবস্থান গ্রহণ করে রাত ১২টার মধ্যেই; যার মাধ্যমে মূল অভিযান তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। নৃশংস এই হামলায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালতে চার্জশিট দাখিলের মাধ্যমে তদন্তকাজও শেষ হয়েছে এবং বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি, শ্রীঘ্রই এ হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে রায় কার্যকর হবে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক আরও বলেন, হলি আর্টিজানের হামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে র‌্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী জেএমবি আমির সারোয়ার জাহান র‌্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয় জেএমবির সূরা সদস্য মামুনুর রশীদ রিপন এবং অপর শীর্ষ নেতা শরিফুল ইসলাম খালিদকে। তারা ঘটনার পরিকল্পনা, অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল। এছাড়া র‌্যাবের অভিযানে বন্ধ হয় হলি আর্টিজানের বীভৎস ছবি তাৎক্ষণিক প্রচার করা আত্-তামকীন ওয়েবসাইট এবং গ্রেপ্তার হয়েছিল অ্যাডমিনসহ বেশ কজন সদস্য। হলি আর্টিজান ঘটনা পরবর্তী অভিযানে র‌্যাব জঙ্গি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, অর্থদাতা ও বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছে।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হলি আর্টিজানে হামলা পরবর্তী সময়ে র‌্যাবের অভিযানে এক হাজার ৪১৬ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুধু অভিযান নয়, জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচার প্রচারণা ও সুধী সমাবেশের আয়োজন করে র‌্যাব। এছাড়া জঙ্গিবাদ দূর করে ভুল বুঝতে পারা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে র‌্যাবের প্রধান বলেন, বর্তমান সময়ে কিশোর অপরাধ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা হত্যাকাণ্ডের মতো হিংস্র ও নৃশংস অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। পরবর্তীতে প্রজন্মকে রক্ষা করতে এখনই ‘কিশোর গ্যাং’ কালচারের লাগাম টেনে ধরা দরকার। র‌্যাব ‘কিশোর গ্যাং’ নামক অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে জোরাল অভিযান পরিচালনা করেছে। আমরা প্রত্যাশা করি পরিবার তার সন্তানের প্রতি আরও নজর দিবে; পাশাপাশি সমাজ ও শিক্ষাঙ্গনকে এগিয়ে আসতে হবে। যারা কিশোরদের গ্যাংয়ে রুপান্তর করছে অর্থাৎ “পৃষ্ঠপোষক”; তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না।

ভেজাল পণ্য, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছে জানিয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, করোনা অতিমারীর এ সময়ে লকডাউন নিশ্চিত করার পাশাপাশি র‌্যাব ভেজাল পণ্য, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। এছাড়াও গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আমরা মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, অবৈধ কিট, ভুয়া রিপোর্ট ইত্যাদি সম্পর্কীয় অভিযান পরিচালনা করছি। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাসহ বিভিন্ন রোগের টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৯ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এভাবে র‌্যাব করোনাকালীন আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা এবং লকডাউন নিশ্চিত ও মানসম্মত করোনা সুরক্ষা সামগ্রী প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে কাজ করে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কর্মহীন, অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান, সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অসুস্থ রোগীদের জরুরি সেবা প্রদান ও অন্যান্য মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে র‌্যাব মানুষের আস্থা ও অফুরন্ত ভালোবাসা অর্জন করেছে।

অপরাধ নির্মুলে র‌্যাব ঈর্ষান্বিত সফলতা পেয়েছে জানিয়ে র‌্যাবের ডিজি বলেন, জঙ্গিবাদের এই বাংলায় ঠাঁই হবে না। ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে এই জঙ্গিবাদে জড়িত না হতে পারে সেজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

মাদক ইস্যুতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সম্প্রতি আমরা অপ্রচলিত কিছু মাদক দেখতে পাচ্ছি। তাদেরকে গ্রেপ্তার করছি। এরই মধ্যে ৪৬ হাজারের বেশি মাদককারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে কিছু নাশকতার পরিকল্পনা হয়েছিল, আবার রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম হয়েছে। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি।

হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যারা এ ধরণের কার্যক্রম করবে তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন