মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় করোনা পজিটিভ রোগীর দাফন শেষে মুজিব নগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জনাব ওসমান গনী এক আবেগঘন স্টাটাস দিয়েছেন। নিচে স্টাটাস টি হুবহু তুলে ধরা হইল :

গতকাল করোনা সন্দেহে দাফন করা ব্যক্তিটির করোনা পজিটিভ এবং কিছু কথা।

কেউ কেউ বলছেন আমরা লাশের এত কাছে কেন গিয়েছি, কবরে নামানোর সময় কেন লাশের গায়ে হাত দিয়ে ধরেছি, কেন পিপিই ব্যবহার করিনি, এমনকি কেউ একজন বলেছেন হিরো সাজার জন্য গিয়েছি ইত্যাদি। পিপিই ব্যবহার না করার কারণ হলো আমাদের তিনজন কর্মকর্তার লাশ দাফন করার কথা ছিলনা। আমরা চেয়েছিলাম দাফন বিষয়ক কমিটি লাশ দাফন করবে, আমরা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করবো।

নিশ্চয় আপনারা গতকালের আমার স্ট্যাটাসে লাশ দাফন পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের লাশের কাছে যেতে হয়েছে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের মধ্যে যে চারজন স্বেচ্ছায় পিপিই পরে লাশ দাফন করেন তাদেরও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলনা। আমরা কাছে না থাকলে তারাও মনোবল হারিয়ে ফেলত। তাছাড়া আমরা কাছে না গেলে প্রোটেকশন ছাড়াই কোনো কোনো আত্মীয় লাশ দাফন করতে আসছিলো। কারণ তাদের ধারনাই ছিলনা যে, এই ব্যক্তিটি করোনায় মারা যেতে পারে। কারণ আগে থেকে তার মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণই ছিলনা।

আমরা দূরে দাঁড়িয়ে থাকলে মৃত ব্যক্তির আত্মীয় পরিজন প্রোকেটশন ছাড়াই লাশ দাফনের দায়িত্ব নিলে ব্যাপার কী হত একবার ভাবুনতো! তাছাড়া সাধারণ মানুষ লাশ দাফন করলে, আর আজ পজিটিভ রেজাল্ট শোনার পর আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মন্তব্য কেমন হত!! সবাই বলত আমরা দায়িত্বে অবহেলা করে এতগুলো মানুষকে বিপদে ফেলেছি।

আমাদের বেশ সন্দেহ ছিল তাই সাধারণ মানুষকে লাশের কাছে আসতে দেইনি। আমরাই দায়িত্ব নিয়েছি। লাশ কবরে রাখার সময় আমি মাথার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পিপিই পরা চারজনের মধ্যে তিনজন করবের মধ্যে ছিল, একজন পায়ের দিকে ছিল। মাথার দিকে ধরার কেউ ছিলনা। তখন মৃত ব্যক্তির এক ভাই দ্রুত এসে প্রোটেকশন ছাড়াই এক হাত দিয়ে মাথার দিকে ধরে, ফলে খাটিয়া থেকে লাশ কবরে নামানোর সময় লাশটি পড়ে যাচ্ছিলো। তাই বাধ্য হয়েই দ্রুত আমাকে ধরতে হয়েছিল। যা বাধ্য হয়ে এবং দায়িত্বের জায়গা থেকেই করেছি। ছবিটি ভালভাবে দেখলে আপনারা বুঝতে পারবেন।

কেউ বলেছে হিরো সাজার জন্য গিয়েছি। হিরো সাজার জন্য কেউ মরার ঝুঁকি নিতে পারবেন!! আমরা কেউ হিরো সাজার জন্য যায়নি, সরকারি দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। আমাদের জায়গায় আপনারা থাকলে এ মন্তব্যগুলো হয়ত করতেন না।

পিপিই না থাকলেও হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, প্রোটেকটিভ আই গ্লাস, মাথায় সার্জিক্যাল ক্যাপ, মোজা, জুতা, ফুলহাটা শার্ট সবই ছিল। আমি সচেতনই ছিলাম। তাই দাফনকৃত ব্যক্তিটি করোনা পজিটিভ হওয়া সত্ত্বেও আমি মোটেও চিন্তিত না। একমাত্র ভরসা মহান আল্লাহর উপর।

তবে চিন্তার বিষয় হলো করোনা ভাইরাসের লক্ষণ পরিবর্তন হয়েছে। গতকাল যে ব্যক্তিটির করোনা পজিটিভ এসেছে তারও কোনো করোনার এতদিন শুনে আসা লক্ষণ ছিলনা। মৃত ব্যক্তিরও আগে থেকে কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়নি। তাই সকলের আরও বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। সচেতন থাকুন এবং একমাত্র মহান আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।

করোনা পজিটিভ রোগীর দাফনের সময় মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাশেম সহ থানার অন্যান্য ফোর্স দাফন কার্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন