ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার মধ্যে ৪ উপজেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন ৪ জন নারী ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার)। নিষ্ঠা ও দায়িত্বের সাথে প্রশাসনিক কর্মকান্ড বাস্তবায়নের পাশাপাশি তারা পরিবেশ রক্ষা এবং সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত হয়ে ইতিমধ্যে অনেক প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। কঠোর হাতে আইন শৃংখলা রক্ষায়ও তাদের অবদান কম নয়। দাপ্তরিক কাজের পাশিপাশি তারা প্রতিদিন স্কুল-কলেজ পরিদর্শন, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে ও অংশগ্রহণ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, সদর উপজেলা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুন্ডু ও শৈলকুপাসহ মোট ৬টি উপজেলা নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা অবস্থিত। জেলার ৬ উপজেলার মধ্যে শৈলকুপা ও হরিণাকুন্ডু বাদে অন্য ৪ টি উপজেলা প্রশাসনে ইউএনও’র দায়িত্ব পালন করছেন ৪ জন নারী। উপজেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা হচ্ছেন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি ইসলাম। ২৮তম বিসিএসের এ কর্মকর্তা গত ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই থেকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুবর্ণা রানী সাহা। ৩০তম বিসিএস এর এ কর্মকর্তা গত পহেলা সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জে যোগদান করেন। কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নাজনীন সুলতানা। বিসিএস ২৯তম ব্যাচের এ কর্মকর্তা গত ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কোটচাঁদপুরে যোগদান করেন। এছাড়া মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শাশ্বতী শীল। বিসিএস ২৯তম ব্যাচের এ কর্মকর্তা গত ২৫ জুলাই মহেশপুরে যোগদান করেন। এ ৪ নারী ইউএনও’র মধ্যে নবগঙ্গা নদী থেকে কচুরীপানা অপসারণের উদ্যোগ নেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মী ইসলাম। মঙ্গলবার তিনি নদী থেকে কচুরীপানা অসারণের অভিযান শুরু করেন। আর কচুরীপানা অপসারণ অভিযানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ। এদিকে নদীর পানিপ্রবাহ ধরে রাখতে ও পরিবেশ রক্ষায় এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ায় জেলার সাধারণ মানুষসহ সুধীজনদের কাছে থেকে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মী ইসলাম বলেন, নারী ইউএনও হিসেবে কাজ করতে কোথাও কোন সমস্যা নেই। এছাড়া আমরা নারী ও পুরুষ আলাদা করে ভাবি না। নিজেদের কে অফিসার হিসেবে চিন্তা করি। আমাদের সিনিয়র স্যারেরাও মেয়ে আর ছেলে এভাবে দেখেন না। সবাই অফিসার। সে হিসেবে অফিসারের যে রকম দায়িত্ব সে রকমের কাজ আমরা করছি। তিনি আরো বলেন নারীরা খুব সাহসিকতার সাথে নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। সদরে অনেক কাজ হয়েছে। এ সময় তিনি তার অনেক সফল কাজের কথা তুলে ধরে বলেন, কোথায় আমাদের পদচারণা নেই, এমন কোন জায়গা নেই। তিনি আরো বলেন, যখন যেখানে কাজ করি সেখানে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করি। অন্যদিকে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাশ্বতী শীল বলেন, নারী হিসেবে কাজ করতে কোন বাঁধা নেই। গত দেড় মাসে এখনো কোন বাধার সম্মুখিন হয়নি। তিনি নারীকে নারী এবং অফিসারকে অফিসার হিসেবে দেখেন।
কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজনীন সুলতানা বলেন, সকলের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি। কাজ করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা বলেন, ইউএনও হিসেবে তিনি কালীগঞ্জে প্রথম দায়িত্ব পালন করছেন। বস্তুত আমরা নারী কিন্তু আমরা অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। এখানে আমরা কোন পুরুষও নই নারীও নই। আমরা অফিসার। অফিসার হিসেবে যখন চেয়ারে বসি তখন সবগুলি কাজই আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সে আইনের বাইরে যাওয়ার আমাদের কোন সুযোগ নেই। একজন জেন্স অফিসার যেভাবে কাজগুলি করতে পারেন একজন লেডি অফিসারও সে কাজ করতে পারেন। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, স্পীকারও একজন নারী। আপনি যেখানে যাবেন সেখানেই নারীর ক্ষমতায়ন দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন যাতে কোন বাঁধা না হয়, সে ব্যাপারে সবার সহযোগিতা দরকার। তিনি অনুভুতির কথা প্রকাশ করে বলেন, কাজ করতে ভাল লাগে। এছাড়া হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে উসমান গনি দায়িত্ব পালন করছেন। এ দু’কর্মকর্তার মধ্যে উসমান গনি এলাকায় অনেক কাজ করে জনপ্রিয় ইউএনও হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।