সাতক্ষীরা শহর থেকে গ্রামাঞ্চল, বাড়ি থেকে শুরু করে অলিগলি, হাটে-বাজারে এখন বিরাজ করছে ছেলে ধরা আতঙ্ক। আতঙ্কিত হয়ে বাচ্চাদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না বাবা-মায়েরা। স্কুলের জন্য বাইরে যেতে দিতে হলেও সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখছেন সন্তানের প্রতি।
এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটিকে গুজব বলে জনসচেতনতার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে থানায় থানায়। ছেলে ধরা গুজব বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে ফেসবুকে। থানার ওসিরা নেমে পড়েছেন সচেতনতামূলক প্রচারণায়।
এদিকে, গত কয়েকদিন আগে থেকেই এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সর্বসাধারণ মানুষ। অপরিচিত কাউকে পেলেই গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সাতক্ষীরা সদরসহ তালা থানায় তিনজনকে ছেলে ধরা আতঙ্কে গণধোলাই দিয়েছে জনগণ। এরপর তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে তারা মস্তিষ্ক বিকৃত বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
সাতক্ষীরার তালা সদরের ইসলামকাটি ইউনিয়নের সুজনশাহ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, ৭ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর পার্শ্ববর্তী নাংলা এলাকায় ছেলে ধরা ভেবে এক বৃদ্ধকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে জনগণ। এলাকার সকল মানুষ ছেলে ধরা বেরিয়েছে ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বাচ্চাদের ঘর থেকে বা বাড়ির বাইরে বের হতে দিচ্ছে না কেউ।
তালা সদরের খড়েরডাঙ্গা গ্রামের শামীম হোসেন বলেন, এলাকায় রোহিঙ্গা বেরিয়েছে। যারা ছেলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে এমন আতঙ্ক সকলের মাঝে। সন্ধ্যার পর আতঙ্ক বাড়ছে গ্রামাঞ্চলে। কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
সাতক্ষীরা সদরের বাকাল এলাকার মরিয়ম বেগম বলেন, ছেলে ধরা আতঙ্ক সবখানে। ঘটনা কি বুঝতে পারছি না। টিভিতে বা পেপার পত্রিকায় এটা নিয়ে কোন সংবাদ দেখছি না। ফেসবুকে দেখছি ছেলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমার বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছি।
এদিকে, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে সাতক্ষীরার আটটি থানা এলাকায় গুজবে কান না দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। জনসচেতনতার জন্য সর্বসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করছে পুলিশ।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান বিপিএম বলেন, সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে বাচ্চা ধরা বা ছেলে ধরা একটি গুজব ছড়িয়েছে ফেসবুকে। এরপর তা এখন মানুষের মুখে মুখে। এটি নিছক গুজব। এমন ঘটনার কোন সত্যতা নেই। না বুঝেই এক ধরনের মানুষ এই গুজবটা ছড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিম বাংলার একটা মুভির ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে ছেলে ধরা বলে প্রচার করা হয়েছে ফেসবুকে। সেটা না জেনে বুঝে যাচাই না করেই বিভিন্ন মানুষ ফেসবুকে গ্রুপে পোস্ট দিয়ে ভাইরাল করে ফেলেছে। এতে করে গুজবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মানুষ। তবে সাতক্ষীরার আটটি সকল থানায় মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।
ওসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। গুজবে কান না দিতে জনগণকে বলা হচ্ছে। জেলা ও থানা পুলিশের ফেসবুক প্রফাইলগুলোও গুজবে কান না দিতে প্রচারনা চালানো হচ্ছে।
পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান আরও বলেন, তালা থানায়, সাতক্ষীরা সদরের বাশদাহ এলাকায় ও কলারোয়া থানায় তিনটি ঘটনা ঘটেছে। যেটিতে গুজবের মাত্রা আরও বেড়েছে।
তালার নাংলা এলাকায় ছেলে ধরা আতঙ্কে এক বৃদ্ধ মানুষকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয়। পরে দেখা যায় বৃদ্ধ মানুষটি মস্তিষ্ক বিৃকৃত। এছাড়া কলারোয়া দুই মহিলাসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশে দেয়। তারা ভিক্ষা করে। সাতক্ষীরা সদরে বাঁশদহ এলাকায় একজনকে একইভাবে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয় তিনিও মস্তিষ্ক বিকৃত।
ছেলে ধরা ঘটনা নিছক গুজব ছাড়া কিছু নয়। সকলকে এ ব্যাপারে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যদি কোন ঘটনা এমন সামনে আসে তবে তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানান আমরা ব্যবস্থা নেবো। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।