হাঁকডাক দিয়ে গণপিটুনির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। গুজব রটিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছিল নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষজনকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিল যে, নিজেদের শিশু সন্তানকে অপরিচিত কোন পুরুষ বা নারী আদর করে বা কোলে নিলেই তারা ভয়ে ‘ছেলেধরা’ বলে সন্দেহ করতেন। এমনকি কোন মা তাঁর সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে খোঁজ খবর নিতে গিয়েই পাশবিক নির্মমতায় লাশ হয়েছেন।

শুরু থেকেই পুলিশ দফায় দফায় গুজব সম্পর্কে সচেতন হতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও চড়াওয়ের ঘটনা কমেনি। উল্টো দেশের নানা প্রান্তে ৮ জন নিরপরাধ মানুষকে গুজব রটিয়ে হত্যার পর গুজব প্রতিরোধে চূড়ান্ত হার্ডলাইন বেছে নেয় পুলিশ। এক্ষেত্রে দেশে সুপরিকল্পিতভাবে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্য মাস্টারমাইন্ডদের চিহ্নিত, গুজব রটানোর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় পুলিশ।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) থেকে সারাদেশে সচেতনতা সপ্তাহ ঘোষণা করেন। শুক্রবার (২৬ জুলাই) জুম্মার নামাজের খুতবার আগে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে গুজব বিরোধী সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন দেশের লাখ লাখ মসজিদের ইমামরা।

দেশের সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পুলিশ প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, শহর ও মহানগরীতে মাইকিং করছে। বিতরণ করছে প্রচারপত্র (লিফলেট)। বাজার, ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে সভা সমাবেশ। আয়োজন করা হচ্ছে শোভাযাত্রার।

পুলিশের এমন সামাজিক আন্দোলনের ফলে ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠা ‘ছেলেধরা’ আতঙ্ক ও গণপিটুনির ঘটনা কমে এসেছে। গুজব ছড়ালেই পুলিশের হাতে পাকড়াও হচ্ছেন রটনকারীরা। এতে করে আশ্বস্ত হয়ে উঠেছেন জনসাধারণ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির যুগে কুসংস্কারে গা ভাসানো থেকে ক্রমশ সরে আসছে সহজ-সরল সাধারণ মানুষ। তাঁরা পাশবিক নির্মমতার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।

জানা যায়, অতীতেও কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক চাই দাবিতে ভূয়া ছবি ও তথ্য ব্যবহার করে আন্দোলনে গুজব ছড়িয়ে বিস্ফোরণমুখ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। এবারো সরকার বিরোধী সেই মহলটিই গুজবের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে শিশুদের মাথা লাগবে’ সুপরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

দেশের বাইরে দুবাই থেকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে জড়িত একজন প্রথম এ পোস্ট দেয়। বিষয়টিকে স্রেফ গুজব বলে পুলিশ সদর দফতর থেকে কয়েক দফা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু গুজবের ডালপালার বিস্তার ঘটতেই থাকে। এ সন্দেহ থেকেই হামলা ও গণপিটুনির ঘটনা ঘটতে থাকে। পরে এ গুজবের উৎসের সন্ধান করতে আটঘাঁট বেঁধে মাঠে নামে পুলিশ।

সূত্র মতে, দিনের পর দিন অবরোধ ঢেকে সরকার পতনের ‘খোয়াব’ দেখা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি নিজেদের শেষ অস্ত্র হিসেবে নতুন মোড়কে ‘গুজব’ ছড়াতে শুরু করে। ২০১৫ সালে পদ্মা সেতুর পিলারের কাজ শুরুর সময় চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের গরু জবাইয়ের রক্ত প্রবাহের একটি ছবি ব্যবহার করে এ গুজবকে ‘ভিত্তি’ দেওয়া চেষ্টা চালায়।

 

ঘরে ঘরে সাধারণ মানুষের মাঝে তৈরি হয় ‘কাটা মাথা লাগার’ ভিত্তিহীন এক আতঙ্ক। কোন কোন জেলায় জঙ্গি সংগঠনগুলো নেপথ্য থেকে অবাস্তব, অবৈজ্ঞানিক ও অমানবিক গুজব ছড়িয়ে দেয় বলে গোয়েন্দা সূত্র কালের আলোকে নিশ্চিত করে। তবে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার মুখে ওই চক্রটি এখন আর হালে পানি পাচ্ছে না।

আইজিপির নির্দেশে সামাজিক আন্দোলনে পুলিশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত করতেই বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে ও দেশের বাইরে থেকে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানোর কাজ শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে গত বুধবার (২৪ জুলাই) পুলিশ সদর দফতরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দেশের স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছে। তাঁরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।’

নিজের ৩২ মিনিটের বক্তৃতায় আইজিপি ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিরীহ মানুষকে হত্যার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, গুজব প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপসহ পুলিশের কঠোর ভূমিকার কথা উপস্থাপন করেন।

গুজব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) সুস্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘গুজবে এখন পর্যন্ত হত্যা ও গণপিটুনির শিকার কারো বিরুদ্ধেই ছেলেধরা প্রমাণিত হয়নি। একটি স্বার্থান্বেষী মহল উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে এই গুজব ছড়াচ্ছে।’

ছেলেধরা হিসেবে কাউকে সন্দেহ হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ‘৯৯৯’-এ ফোন করে পুলিশে দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একই সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে তৃণমূল পর্যায়ে কীভাবে পুলিশ সদস্যরা কাজ করবে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে পুলিশ প্রধান বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) থেকে সারাদেশে সচেতনতা সপ্তাহ শুরুর ঘোষণা দেন।

পুলিশের আইজি’র কঠোর নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে কোমর বেঁধে মাঠে নামে পুলিশ। শুক্রবার (২৬ জুলাই) দেশের প্রতিটি মসজিদে মসজিদে জুম্মার নামাজের খুতবার আগে পুলিশ সদস্যরা এবং মসজিদের ইমামরা গুজব বিরোধী বক্তব্য রেখে মুসল্লীদের সচেতন করেন।

পুলিশের প্রতিটি সদস্য থানা, ফাঁড়ি, জেলা, মেট্রোপলিটনের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাদেরকে সচেতন করে তুলছেন। মাইকিং করে এবং লিফলেট বিতরণ করে সচেতনতা কার্যক্রমকে বেগবান করছেন।

একই সঙ্গে পুলিশ প্রধান দেশের সব থানায় ওপেন হাউজ ডে’র মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টিরও নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশের এমন সামাজিক আন্দোলনের ফলে গুজব সৃষ্টিকারীরা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। বরং প্রতিদিনই তাঁরা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হচ্ছেন।

আতঙ্ক কমেছে, নেই গণপিটুনির ঘটনা
পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, দুবাইয়ে অবস্থানরত এক ব্যক্তি সরকারবিরোধী রাজনীতি বলয়ের লোক। তাঁর অবস্থানও সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তাকে আইনের আওতায় নিতে দেশটির পুলিশ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

পুলিশ গুজবের উৎস সনাক্ত করায়, ব্যাপকভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলায়, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সতর্কতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার এবং গুজব তৈরিতে জড়িতদের ধরপাকড় ও রিমান্ডের ঘটনা ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এর ফলে গত কয়েকদিনে দেশের কোথাও কোন গণপিটুনির ঘটনা ঘটেনি। সাধারণ মানুষের মাঝেও গুজবের আতঙ্ক কমতে শুরু করেছে। সবার মাঝে স্বস্তির শ্বাস পরিলক্ষিত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের এক অধ্যাপক কালের আলোকে বলেন, ‘গুজব ঠেকাতে পুলিশ পূর্ণোদ্যমে মাঠে থাকায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অনুকূলে চলে এসেছে। পুলিশের গৃহীত সামাজিক আন্দোলনের ফলে অস্থিরতা কমতে শুরু করেছে। তবে এখন সুবিচার নিশ্চিতের সময় এসেছে।’

আইজিপিকে এলজিআরডি মন্ত্রীর ধন্যবাদ
পর্দার অন্তরালে কলকাঠি নেড়ে দেশি-বিদেশী অশুভ শক্তির তৎপরতায় নতুন উদ্যমে মাঠে নামে স্বাধীনতা বিরোধীরা। গুজব ছড়িয়ে তাঁরা দেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধেও তাদের ক্ষেপিয়ে তুলতে চেয়েছিল। ফলে ‘কল্লাকাটা’র মতো অবাস্তব গুজবকে তাঁরা বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করার সর্বোচ্চ অপচেষ্টা চালায়।

কিন্তু পুলিশ প্রধানের সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও কঠোর নির্দেশে মাত্র ক’দিনেই পরিস্থিতির অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। শঙ্কার বদলে দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসায় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি।

তিনি প্রতিবেদক কে বলেন, ‘পুলিশের আইজি’র দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মহানগর পর্যন্ত গোটা দেশে গুজবের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে পুলিশ সদস্যরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে সফলতা অর্জন করায় আমি তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে গুজবে কান না দিয়ে কাউকে সন্দেহ হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করারও আহবান জানান মন্ত্রী।

এর আগে মানুষের অন্ধ বিশ্বাস এবং কুসংস্কারকে কাজে লাগিয়ে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার অপচেষ্টায় লিপ্ত চক্রটি যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না, গুজব ছড়াবেন না এবং অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না।’

নিরবিচ্ছিন্ন থাকবে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিও
পদ্মা সেতুর মতো বিদ্যুৎ নিয়েও নতুন করে গুজব তৈরি হয়। দেশে বিদ্যুৎ থাকবে না বলে একটি মহল অসৎ উদ্দেশ্যে এমন রটনা ছড়ায়। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ প্রতিবেদক কে  বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ সচিব মহোদয় ইতোমধ্যেই গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আমিও বলবো, আমাদের বিদ্যুতের কোন ঘাটতি বা সঙ্কট নেই। সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার কোন প্রশ্নই উঠে না। অসৎ উদ্দেশ্যেই একটি অশুভ চক্র হীন চক্রান্ত করছে। আমাদের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিরবিচ্ছিন্নই থাকবে।’

পুলিশের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে সাড়া
পদ্মাসেতু নিয়ে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে পুলিশ। সর্বশেষ শুক্রবার জুম্মার খুতবার আগে গুজব সংক্রান্ত বয়ান দেন ইমামরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গোয়েন্দ নজরদারি যেমন বাড়ানো হয়েছে তেমনি প্রতিটি থানাতেই স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ‘ওপেন হাউজ ডে’ করা হচ্ছে।

গুজবের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক কালের আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম রেঞ্জে গুজবের ঘটনায় ১০ টি মামলায় ২৩ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের ব্যাপক প্রচারণার ফলে গত দুই দিনে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। কেউ গুজব ছড়ালেই তাৎক্ষণিক আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

একই বিষয়ে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, প্রতিবেদক কে বলেন, ‘খুলনা রেঞ্জের ১০ টি জেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গুজব বিরোধী সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। কোথাও যেন কেউ গুজব রটিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।’

গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সাইদুর রহমান খান, পিপিএম (বার) কালের আলোকে বলেন, গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তোলতে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমি নিজে বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে বিভিন্ন থানায় সভা করেছি। প্রতিটি থানায় ওসিদের মাধ্যমে ওই থানার প্রতিটি মসজিদে ইমামরা গুজব সম্পর্কে বয়ান দিচ্ছেন। লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মযজ্ঞের ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি হয়েছে।’

খুলনা  জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বিপিএম   কালের প্রতিবেদক কে বলেন, গুজব প্রতিরোধে নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশ কর্মকর্তাদের মতবিনিময়, সচেতনতামূলক মাইকিং, ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। পথসভা করা হচ্ছে। মসজিদে মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।

যশোরের পুলিশ সুপার জনাব মঈনুল হক প্রতিবেদক কে বলেন, কিশোরগঞ্জের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি ভালো। সন্দেহজনকভাবে নয়টি ঘটনায় কাউকে মারপিট না করে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয়রা। আমরা স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছি, গুজব রটনকারী ও সহিংসতা সৃষ্টি করলে আমাদের অবস্থান হবে কঠোর। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনামূলক প্রচারণা ও সভার আয়োজন করা হবে।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার জনাব পঙ্কজ কুমার রায় প্রতিবেদক কে  বলেন, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য কাউকে সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশে খবর দিতে বলা হয়েছে। সচেতনতা সপ্তাহে জেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। মাইকিংয়ের পাশাপাশি প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে।

কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত কালের আলোকে বলেন, ‘গুজবের বিরুদ্ধে আমরা ১৯ জুলাই থেকে মাঠে রয়েছি। চারটি গণপিটুনির ঘটনায় ৩৬ জনকে ইতোমধ্যেই আটক করা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। জেলাব্যাপী মাইকিং করা হয়েছে। আমি নিজে ভেড়ামারা, সদরসহ কয়েকটি থানায় পথসভা করেছি। সর্বমোট জেলায় প্রায় দেড় শতাধিক পথসভা করা হয়েছে। এখন মানুষের কাছে একটি ম্যাসেজ পৌঁছেছে গুজব বিশেষ মহলের অপপ্রচার। এতে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে তাঁর জন্য কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে।’

সূত্রঃ কালের আলো ডটকম।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন