প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাবাকে নিয়ে লেখা প্রধানমন্ত্রীর এই চিঠিটি মঙ্গলবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ৩৬ লাখ শিক্ষার্থীর একযোগে পাঠ করার কথা থাকলেও সেই অনুষ্ঠান বাতিল করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর সোমবার সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে আমরা আমাদের প্রোগ্রামটা বাতিল করেছি।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিকের এক কোটি ৩৬ লাখ শিশু শিক্ষার্থীর কাছে চিঠি লিখেছেন। আমরা সব প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দিয়েছি, আজকে যেন তারা প্রত্যেকটি শিশুকে তাদের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের চিঠিটা হস্তান্তর করেন।”
আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, “আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা হবে, আমরা সারা বাংলাদেশে আজকেই প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পৌঁছে দেব।”
যা লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী
“ছোট্ট সোনামণি, আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিও। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম ও ভাইবোনদের স্নেহ পৌঁছে দিও। পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি শুভেচ্ছা রইলো।
আজ ১৭ই মার্চ। ১৯২০ সালের এদিনে বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের সুযোগ। তাই তো তিনি আমাদের জাতির পিতা।
দুঃখী মানুষদের ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন। বারবার কারাবরণ করেছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে ব্যথিত করতো। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি।
এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন- তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।
২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশ এই জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করছে। সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
প্রিয় বন্ধু,
ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে জাতির পিতাকে। তাঁর নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের। তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের সন্ধানে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তাঁরই ত্যাগের মহিমায়।
সোনামণি,
জাতির পিতার কাছে আমার অঙ্গীকার, তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বোই। আর সেদিন বেশি নয়। পিতা ঘুমিয়ে আছেন টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতামাতার কোলের কাছে। তিনি শান্তিতে ঘুমান। তাঁর বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
আমরা জেগে রইবো তাঁর আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে মানুষ-প্রজন্মের পর প্রজন্ম- তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। জাতির পিতার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন।
তোমরা মন দিয়ে পড়ালেখা করবে, মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করবে।
জয় বাংলার জয়, জয় মুজিবের জয়, জয় বঙ্গবন্ধুর জয়।
ইতি,
তোমারই
শেখ হাসিনা।”
২০২০-২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানমালা যুগপৎভাবে চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।