সারাদেশে যেকোনো স্থানে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছে পুলিশ। সেজন্য বিমানবন্দর, পুলিশের স্থাপনা, দূতাবাস এবং সব উপাসনালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে পুলিশের ইউনিটগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাহিনীটি।
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) দেশে এমন অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। আন্তর্জাতিক এই জঙ্গি সংগঠনটির আদলে গঠিত নব্য জেএমবির সদস্যরা হত্যাকাণ্ড, নাশকতা ও ধ্বংসাত্মকমূলক কর্মকাণ্ড করতে পারে এমন শঙ্কায় পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্কের পাশাপাশি দেশজুড়ে কড়া নিরাপত্তার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পাশাপাশি পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ জঙ্গিসংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি অপারেশনস-১) সাইদ তারিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে এ ব্যাপারে সব ইউনিটকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। চিঠিতে বিশেষ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ জঙ্গিসংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয়-বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, তথাকথিত আইএস আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কথিত ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণত বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমেই ‘বেঙ্গল উলায়াত’ঘোষণা করা হয়। এই অবস্থায় আইএসের দেশীয় অনুসারী নব্য জেএমবির সদস্যরা হামলা পরিচালনাসহ যেকোনো জঙ্গি হামলা বা বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে পারে। তাই পুলিশের সকল ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে করে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
চিঠিতে গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে পুলিশ (পুলিশের কোনো টিম, স্থাপনা বা যানবাহন) বিমানবন্দর, ৩ দেশের দূতাবাস ভবন বা দূতাবাস সংশ্লিষ্ট বিশেষ ব্যক্তি অথবা শিয়া-আহমদিয়া উপাসনালয়, মাজার কেন্দ্রিক মসজিদ, চার্চ, প্যাগোডা, মন্দিরগুলোকে টার্গেট করা হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে হামলার সম্ভাব্য দিন-তারিখ উল্লেখ না থাকলেও হামলার সময় সকাল ৬-৭টা অথবা সন্ধ্যা ৭-১০টায় হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।
হামলাকারীর পরিচয়ের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে বলা হয়েছে, হামলাকারীর বয়স ১৫-৩০ বছরের মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার চেহারা ক্লিন শেভড দাড়ি থাকতে পারে, গোফহীন হতে পারে। তার পরনে শার্ট/টিশার্ট, প্যান্ট, ক্যাপ মাস্ক, কেডস এবং পেছনে ব্যাকপ্যাক থাকতে পারে। হামলার সময় হামলাকারী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে সুপারিশ হিসেবে উগ্রপন্থী বা তাদের সংগঠনের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি, পুলিশের সবাইকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় রাখা, পুলিশের গাড়ি-স্থাপনা খালি বা পরিত্যক্তভাবে ফেলে না রাখা, পুলিশের ভবনগুলোতে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা ও পরিচয় নিশ্চিত করা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করা, চেকপোস্টে তল্লাশি বাড়ানো, সন্দেহ হলে ব্যাগ-দেহ তল্লাশি করা, সন্দেহজনক এলাকায় ব্লক রেইড করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। তবুও দেশ ও জনগণের সর্বোচ্চ সুরক্ষা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ন্যূনতম কোনো আশঙ্কার সুযোগ আমরা রাখতে চাই না। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি এবং এর অংশ হিসেবে আমরা সকল উৎসব এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের আগে সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিটকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশনা দিয়ে থাকি। এবারও, তেমনটি করা হয়েছে।
এদিকে নির্দেশনা পাওয়ার পরপর ই সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মেদ মোস্তাফিজুর রহমান বিপিএম(বার) এঁর দিক নির্দেশনা মোতাবেক সাতক্ষীরা জেলার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাহ্উদ্দিন,দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াছিন আলী ও তালা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবিরের তত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট এলাকার অফিসার ইনচার্জ গণ, জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার গণ জেলা ব্যাপী ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে। জেলায় পুলিশের চেকপোস্ট চোখে পড়ার মত ই।মোড়ে মোড়ে আকষ্মিক চেকপোস্ট বসাচ্ছে পুলিশ। পাশাপাশি জেলা ট্রাফিক পুলিশ অবৈধ যানবাহক ও চালকদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছেন।
সংবাদ ঢাকা টাইম্স এর।