প্রতিরাতের মতো যশোর কালেক্টরেট পুকুর পাড়ের বেঞ্চে ঘুমিয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব তোফায়েল আহম্মেদ। রাত পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৯টা গড়িয়েছে। রোদ এসে পড়েছে শরীরের ওপর, তবুও ক্লান্তির শরীরে ঘুমে আচ্ছন্ন বৃদ্ধ তোফায়েলের।
সোমবার (২০ নভেম্বর) স্থানীয় সরকার যশোরের উপ-পরিচালক মাজেদুর রহমান খান অফিসে ঢুকতে তার দৃষ্টিতে আসলে ওই বৃদ্ধকে ডেকে নেন নিজ দফতরে।
জানতে চাইলে বৃদ্ধ তোফায়েল আহম্মেদ জানান, লক্ষ্মীপুর জেলার বাসিন্দা হলেও গত ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে যশোরে থেকে বেকারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে বয়সের ভারে এখন আর কেউ কাজে নেয় না। তাই টাকা রোজগার না করতে পেরে হাত পেতে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করেন এবং রাস্তায়ই ঘুমায়ে থাকেন।
পরে যশোর জেলা প্রশাসনের ভিক্ষুক মুক্তকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃদ্ধ তোফায়েল আহম্মেদের মতামতের ভিত্তিতে বিক্রির জন্য বিস্কুট, চানাচুর, কেক, লাড্ডু, পাউরুটি কিনে দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে আরও ৫০০ টাকা তাকে দেওয়া হয়। এতে মহাখুশি বৃদ্ধ তোফায়েল আহম্মেদ। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে জীবন-যুদ্ধে টিকে থাকতে ব্যবসায় নেমে পড়েন তিনি।
এর আগে, গত ৬ নভেম্বর আসমা খাতুন নামে এক নারীকে সাবলম্বী করার লক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুই হাজার টাকার পাপড় ও পাপড় ভাজার জন্য তেল কিনে দেওয়া হয়। একই দিন ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা বৃদ্ধ রিয়াজুল ইসলামকে ৬ কেজি বাদাম কিনে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার যশোরের উপ-পরিচালক মাজেদুর রহমান খান প্রতিবেদক কে বলেন, ভিক্ষুক মুক্তকরণের লক্ষে জেলা প্রশাসন এ ধরণের অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করে থাকে। আমরা প্রতিনিয়ত এ ধরণের মানুষদের খোঁজ করি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনার তৎকালীন কিংবদন্তী বিভাগীয় কমিশনার(বর্তমানে নৌ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব)জনাব মোঃ আবদুস সামাদ খুলনা বিভাগকে ভিক্ষুকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেন। এরই অংশ হিসেবে, খুলনার ১০ জেলার প্রত্যেকটি উপজেলা পর্যায়েও ভিক্ষুক পুনর্বাসনে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। এতে হাজার হাজার ভিক্ষুক সমাজের বোঝা না হয়ে জেলা প্রশাসনের অর্থ সহযোগিতায় অন্য পেশায় গিয়ে সাবলম্বী হয়ে উঠছেন।