স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে কোনো আপস নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশেই মাদক বিরোধী অভিযান জোরালোভাবে চলছে বলে জানিয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, কক্সবাজার থেকে ইয়াবা কারবারিদের নির্মূল করা হবেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ শনিবার বিকালে কক্সবাজারের একটি হোটেলে এক সংক্ষিপ্ত সময়ের মতবিনিময় সভায় এসব বলেন। তিনি কক্সবাজারের জনপ্রতিনিধিদের ইয়াবা নির্মূলে এগিয়ে আসার আহবান জানান। এ সময় উপস্থিত সুধীদের আসনের সামনের কাতারে বসা ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডন, এমপি আবদুর রহমান বদির ঘনিষ্টজন এবং আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী সাবেক বিএনপি নেতা টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমদ।
ইয়াবা ডন হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জাফর আহমদের তিন পুত্রও ইয়াবা কারবারির তালিকায় রয়েছে। তবে জাফর আহমদ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তাই মন্ত্রী মহোদয়ের মতবিনিময় সভায় এসেছি। ’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য এমপি আবদুর রহমান বদিও হোটেলটিতে গিয়েছিলেন। এমপি বদি মন্ত্রী ও র্যাব মহা-পরিচালকের খাবারের সময় পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা নিশ্চিত করে বলেন যে, র্যাবের একজন শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তার বাঁধার মুখে এমপি বদি অনুষ্ঠানস্থলে না গিয়ে হোটেল ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
অনুষ্ঠানে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমদ বলেন, মাত্র ২৩ লাখ বাসিন্দার জেলা কক্সবাজার থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া ইয়াবা ট্যাবলেট দেশের ১৬ কোটি মানুষকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
তিনি দেশের স্বার্থে জেলাবাসীকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
র্যাব মহাপরিচালক কক্সবাজারের জনগণের কাছে জানতে চান, সীমান্ত এলাকায় আলীশান ভবনাদি কিভাবে তৈরি হয়? কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াই কারা এসব নির্মাণ করেন?
র্যাব মহাপরিচালক এ সময় বলেন, ইয়াবা পাচারের এমন একটি দুঃসময়েও গত ১০ বছরে কক্সবাজারের সংবাদকর্মীদের কোনো একটি ‘ইয়াবা পাচার সংক্রান্ত প্রতিবেদন’ দেখা যায়নি। র্যাব মহাপরিচালকের এমন বক্তব্যে উপস্থিত সংবাদকর্মীরা তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে জোর প্রতিবাদ জানান। সংবাদকর্মীরা বলেন, দিনের পর দিন ইয়াবা সংক্রান্ত প্রতিবেদন কক্সবাজারের সংবাদকর্মীরা গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করেছেন। সংবাদকর্মীরা টেকনাফে ইয়াবার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে যেসব ইয়াবা কারবারিদের পিটুনির শিকার হয়েছিলেন সেসব কারবারিরা এখনো ধরাও পড়েনি।
সংবাদকর্মীরা বলেন, আজকের এই মতবিনিময় সভায়ও সরকারের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি উপস্থিত রয়েছেন। সংবাদকর্মীরা এ বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। সময়ের অভাবে অবশ্য মন্ত্রী তাঁর বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার কথা জানান।
অবশ্য সংবাদকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে র্যাব মহা-পরিচালক পরে বলেন, তিনি ইয়াবা কারবারিদের ভয়ে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠাতে বিঘ্ন সৃষ্টি প্রসঙ্গেই এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ইয়াবা সংক্রান্ত প্রতিবেদন করতে সংবাদকর্মীদের কড়া নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। র্যাব মহা-পরিচালক ইয়াবা কারবারিদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘সাংবাদিকদের দিকে তাকালে ইয়াবা কারবারিদের চোখ তুলে নেওযা হবে। ’