মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত
মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২২ নভেম্বর
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ নভেম্বর

আপডেট ডেস্ক: আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিন রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তফসিল ঘোষণার সময় আবারও সব রাজনৈতিক দলকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত, তা বাছাই হবে ২২ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ নভেম্বর। তার ২৩ দিন পর হবে ভোটগ্রহণ। ৩০০টি আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচনে এবার ভোট দেবেন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ ভোটার। নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে মতানৈক্যের অবসান না ঘটার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তফসিল ঘোষণা পেছানোর উপায় ছিল না বললেও নূরুল হুদা ইতোপূর্বে বলেছেন, সব দল চাইলে সংবিধান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে থেকে কমিশন ভোটগ্রহণের সময়সূচি কয়েকদিন পেছানোর কথা ভাবতে পারে। তফসিল ঘোষণার ভাষণে সিইসি আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করে নিজেদের মতানৈক্যের অবসান আলোচনার মাধ্যমে ঘটাতে দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপটে একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করে আসছেন সিইসি। তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে মতবিভেদ কাটাতে দুই প্রধান রাজনৈতিক শিবিরে সংলাপ হলেও তাতে এখনও কোনো সমঝোতা হয়নি। বিএনপিকে নিয়ে গঠিত কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে, সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছে। অন্যদিকে সংবিধানের বাইরে কোনোভাবেই যেতে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুই দফা সংলাপ ব্যর্থ হওয়ার পর ফের আলোচনার আশা রেখে তফসিল পেছানোর আহ্বান ছিল ঐক্যফ্রন্টের; কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন পাওয়ার পর তফসিল ঘোষণার পথেই হাঁটে ইসি। তফসিল ঘোষণা করে বিরোধী শিবিরকে আশ্বস্ত করে সিইসি বলেছেন, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ইসি সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি জানালেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। সিইসি বলেছেন, আগের মতোই বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পক্ষে বলে তিনি শহরাঞ্চলে কিছু সংখ্যক কেন্দ্রে যন্ত্রে ভোটগ্রহণ হবে, তা ভাষণে স্পষ্ট করেননি নূরুল হুদা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে অবস্থান জানালেও তার ঘোর বিরোধিতা করছে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রশ্ন ওঠায় ইভিএম ব্যবহার এবার না করার পক্ষে মত জানিয়েছে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশ। প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ চলার মধ্যে গত কয়েকদিনে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিজেদের বৈঠকের প্রেক্ষাপটে সিইসি বলেছেন, সার্বিকভাবে দেশে ভোটের অনুকূল আবহ সৃষ্টি হয়েছে। সহিংসতা ও বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন প্রতিহিংসা ও সহিংসতায় পরিণত না হয়, সে দিকে দৃষ্টি দিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নূরুল হুদা।
সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন: নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশপাশি সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে জানান সিইসি। নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৭ লাখ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রার্থমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী এবং বিচারিক ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ৬ লক্ষাধিক পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যকে নির্বাচনের আগে ও পরে মোতায়েন করা হবে। সিইসি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হবে। তারা আইনানুগ ও নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে সুদৃঢ় থাকবে। তাদের দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও একাগ্রতার ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখা হবে। দায়িত্ব পালনে ব্যার্থতার কারণে নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হলে দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। কেএম নূরুল হুদা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে স্বতঃস্ফুর্তআগ্রহের জাগরণ ঘটে। তাদের বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা আর উচ্ছ্বাসে গোটা দেশ উজ্জীবিত হয়। রাজনীতিবিদদের কৌশল প্রণয়ন, প্রার্থীদের নির্ঘুম প্রচারণা, সমর্থকদের জনসংযোগ ভোটারদের হিসেব-নিকেশ সব কিছু নিয়ে একটি আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ভোটের দিনে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আবাল বৃদ্ধ-বনিতার মধ্যে সৃষ্ট আনন্দঘন ও উৎসবমূখর পরিবেশ রক্ষায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ হতে সব ধরনের সকর্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সাল সেই নির্বাচনের বছর, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। সুশীল সমাজ সু-চিন্তিত মতামত প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে। গণমাধ্যমে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত, বক্তব্য, প্রবন্ধ, প্রতিবেদন, আলোচনা-সমালোচনা ও সুপারিশ প্রকাশ করছে। নির্বাচন নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রতিনিয়ত টক-শো প্রচারিত হচ্ছে। সব সংবাদ মাধ্যমে বিশেষ খবর ও প্রতিবেদন প্রচার করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বহুসংখ্যক সংগঠন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সার্বিকভাবে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি অনুকূল আবহ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটার ও প্রার্থীদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, জাতির এমন উচ্ছ্বসিত প্রস্তুতির মধ্যখানে দাঁড়িয়ে আমি প্রত্যাশা করবো, অনুরোধ করবো এবং দাবি করবো; প্রার্থী এবং তাঁর সমর্থক নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি মেনে চলবেন। স্ব-স্ব এলাকার গণ্য-মান্য ব্যক্তি এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি ভোট কেন্দ্রে সুষ্টু পরিবেশ নিশ্চিত করণে সহায়তা করবেন। ফলাফলের তালিকা হাতে না নিয়ে পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্র ত্যাগ করবেন না। নির্বাচনী কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অটল থাকবেন। নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা আইনের প্রয়োগ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটার, প্রার্থী এবং ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। গণমাধ্যম কর্মী বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশ ও পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা মেনে দায়িত্ব পালন করবেন, প্রত্যাশা করেন সিইসি।
হয়রানি না করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় কাউকে বিনা কারণে হয়রানি না করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, ভোটার, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, প্রার্থীর সমর্থক ও এজেন্ট যেন বিনা কারণে হয়রানির শিকার না হন বা মামলা-মোকদ্দমার সম্মুখীন না হন তার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তৃপক্ষের ওপর বিশেষ নির্দেশ রইলো। দলমত নির্বিশেষে সকল সংখ্যালগু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টী ও নারী-পুরুষ নিবিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ; ভোট শেষে নিজনিজ বাসস্থানে নিরাপদে অবস্থান এবং নির্বাচনি প্রচারণায় সকল প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষে অভিন্ন আচরণ ও ‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করার সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সীমিত আকারে ইভিএমের ব্যবহার: নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সীমিত আকারে ব্যবহার হবে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কমিশনের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রার্থীদের তথ্য ব্যবস্থাপনা, নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি সংক্রান্ত সফটওয়্যার আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হয়েছে। সরাসরি মনোনয়নপত্র দাখিলের পাশাপাশি অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধানও রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, এ ছাড়া পুরাতন পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে সীমিত আকারে ভোটগ্রহণের উদ্যোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহারে সুফল পাওয়া গেছে। জনসাধারণকে ইভিএম ব্যবহারে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে ইভিএমের উপকারিতা সম্পর্কে ভোটারদের অবহিত করা হয়েছে। ইভিএম ব্যবহারে তাদের মধ্যে আগ্রহ আশাব্যঞ্জক। আমরা বিশ্বাস করি ইভিএম ব্যবহার নির্বাচনের গুণগত মান উন্নত করবে এবং সময়, অর্থ ও শ্রমের সাশ্রয় হবে।

সূত্রঃ দৈনিক প্রবাহ।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন