কক্সবাজারের টেকনাফে দ্বিতীয় দফায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত আরও ২১ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছে।

সোমবার(০৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে টেকনাফ ডিগ্রি কলেজ মাঠে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে তারা।

এ সময় তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন অতিথিবৃন্দ। ২১ হাজার ইয়াবা ও ১০টি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের পর তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ আয়োজিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম-এর সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, মাদক নির্মূলে বাংলাদেশ পুলিশ বদ্ধ পরিকর। সুতরাং মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যে জিরো ট্লারেন্স ঘোষণা করেছেন তা বাস্তবায়নে পুলিশ কঠোরভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, যদি মাদক ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই তাহলে অতীতের ন্যায় সুযোগ দেয়া হবে। এখনও পর্যন্ত যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তাদের কঠোর কেসারত দিতে হবে। বাঁচতে হলে মাদক ছাড়তে হবে।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইমস) মো. জাকির হোসেন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কমিউনিটি পুলিশিং কক্সবাজার জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফায়েল আহমদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদ বাহাদুর, টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি নুরুল হুদা, টেকনাফ আল জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি মো. কিফায়ত উল্লাহ শফিক, টেকনাফ পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এ দিকে সোমবার যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তারা হলেন- টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ফুলের ডেইল গ্রামের ফকির আহমদের ছেলে নূর মোহাম্মদ, নূর কবিরের ছেলে ইমাম হোসেন, হোয়াইক্যং উত্তরপাড়ার মৃত আব্দুর শুক্কুরের ছেলে ফরিদ আলম, মহেশখালীয়াপাড়ার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে শাহাদাত হোছাইন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা হাজী ফজল আহমদের ছেলে মোহাম্মদ রিদওয়ান ও তার ভাই আবদুর রাজ্জাক, সুলতান আহমদের ছেলে বশির আহমদ, মৃত আমির হোসেনের ছেলে ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুল আমিন আবুল, মৃত লাল মিয়ার ছেলে আবুল কালাম, মৌলভীপাড়ার ছৈয়দ হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ রাসেল ওরফে হাজী রাসেল, রুহল আমিনের ছেলে ফজল করিম, সাবরাং ইউনিয়নের লেজিরপাড়ার মৃত হাজী মকতুল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ইদ্রিস, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরীপাড়ার জহির আহমদের ছেলে আবু তৈয়ুব ওরফে মধু, মাঠপাড়ার ফজলুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ জাহেদ, খয়রাতিপাড়ার আবুল কালাম সওদাগরের ছেলে মোহাম্মদ সাদ্দাম, টেকনাফ পৌরসভার পুরান পল্লানপাড়ার মৃত কামাল হোসেনের ছেলে আব্দুল নূর, লামাবাজারের আব্দুল জলিলের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাঈল, সাবরাং ইউনিয়নের সিকদারপাড়ার মৃত ছৈয়দুর হোসেনের ছেলে আবদুল গফুর, সাবরাং সিকদারপাড়া আমির হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন কালু, হ্নীলা ইউনিয়নের উলুচামোরি কোনারপাড়ার আবুল কালামের ছেলে মিজানুর রহমান।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারীদের কাছ থেকে ২১ হাজার পিস ইয়াবা, দেশীয় ১০টি এলজি, ৩০টি তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা রুজু করে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৯ মাদক কারবারী নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন রোহিঙ্গা। এর আগে ২০১৮ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় বিশেষ অভিযানে ৫৬ রোহিঙ্গাসহ ২০৯ জন ইয়াবা কারবারী ও ডাকাত-সন্ত্রাসী নিহত হয়।

গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করে। টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ইয়াবা ট্যাবলেট ও অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল তারা।

পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে একজনের মৃত্যু হলে ১০১ জন আত্মসমর্পণকারীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ।

এ দিকে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সোমবার বিকাল ৩টার দিকে টেকনাফ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে মাদক ব্যবসায়ীদের আনা হয়। তাদের দেখতে শত শত মানুষ ভিড় করেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন