করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্মুখযুদ্ধে থাকা পুলিশ সদস্যরা নিজেদের সুরক্ষিত রেখে যাতে দায়িত্ব পালন করেন সে বিষয়ে আরও সচেতন হতে বলেছেন বাহিনী প্রধান ড.বেনজীর আহমেদ বিপিএম(বার)। সুরক্ষা সামগ্রী কিনতে বিভিন্ন ইউনিটকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশের জন্য ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট কেনা হচ্ছে। শিগগিরই তা বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হবে।’
আসন্ন রমজানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বুধবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সকল রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন, বিশেষায়িত ইউনিট ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদেরকে সঙ্গে কথা বলেন আইজিপি। এসময় তিনি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।
করোনা পরিস্থিতিতে নিজেদের সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘পুলিশের প্রতিটি সদস্যদকে সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না। করোনা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশের কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া পুলিশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।’
পুলিশ সদস্যদের জন্য পাঁচটি বিভাগে চিকিৎসার চলছে জানিয়ে ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ঢাকায় যে চিকিৎসা দেয়া হবে একই চিকিৎসা বিভাগীয় হাসপাতালেও দেওয়া হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
পুলিশের যেসব সদস্য কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের নিয়মিত খোঁজখবর নেয়ার জন্য ইউনিট প্রধানদের বলেন আইজিপি। সেই সঙ্গে আক্রান্তদের প্রার্থনা, বিনোদন ও বই পড়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের পরিবারের খোঁজখবর নেয়ার নির্দেশ দেন।
রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে পুলিশ। আইজিপি বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজান একটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে পালিত হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা সীমিত রয়েছে। রমজানে ধর্মাচার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণের কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে পুলিশকে। যাতে কোনো কারণে পণ্যের দাম না বাড়ে। সেই সাথে পণ্যের কালোবাজারি ও ভেজাল দেওয়া বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসানোর নির্দেশ দেন আইজিপি।
পণ্যের পরিবহন স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে পুলিশপ্রধান বলেন, বর্তমানে অনেক জেলায় ত্রাণ নিয়ে ট্রাক যাচ্ছে। আসার সময় ওই ট্রাকগুলো খালি আসছে। এসব খালি ট্রাকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘রিলিফ ও টিসিবি পণ্য এবং ভিজিএফ ও ওএমএস সুবিধা যেন জনগণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে হবে।’
হাওরে ধান কাটার শ্রমিক পাঠানোর জন্য বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে আইজিপি বলেন, হাওরে হয়ত আরও শ্রমিক পাঠানোর প্রয়োজন হতে পারে। শ্রমিকদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার জন্য শ্রমিকবাহী গাড়ির সামনে ব্যানার এবং গাড়িতে শ্রমিকদের তালিকা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বার রাখার নির্দেশনা দেন।
ইফতারের নামে জনসমাগম না হয় সে বিষয় খেয়াল রাখার পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে তাগিদ দেন নতুন আইজিপি। সেই সঙ্গে রমজানে কোনোভাবেই ফুটপাতে ইফতার তৈরি ও বিক্রি না হয় সে ব্যাপারে সবাই তৎপর থাকারও আহ্বান জানান।
আইজিপি বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অনেকের মধ্যে লকডাউন ভাঙার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় চলাচল বন্ধ করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক প্রান্তিক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে। অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বাড়তে পারে। এ ধরনের অপরাধ দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ অনেক ভালো কাজ করছে, পুলিশের অনেক অর্জন রয়েছে। এ অর্জন কোনভাবেই ম্লান হতে দেয়া যাবে না।’
বর্তমান পরিস্থিতিতেও যেসব গার্মেন্টস মালিক শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছেন তাদের প্রতি আইজিপি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। আর যারা এখনও বেতন দিতে পারেননি, তাদেরকে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কোনো গার্মেন্টস চালু করলে যথাযথভাবে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করার পরামর্শ দেন আইজিপি।