যারা অবৈধ অর্থ উপার্জন করে বড়লোক হতে চান, বাংলাদেশ পুলিশ তাদের স্থান নয় বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)।
মঙ্গলবার (১৬ জুন) পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
‘পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যরা কোনোভাবেই কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। যারা অবৈধ অর্থ উপার্জন করে বড়লোক হতে চান, বাংলাদেশ পুলিশ তাদের স্থান নয়। তারা পুলিশের চাকরি ছেড়ে বাড়ি গিয়ে ব্যবসা করে বড়লোক হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
দায়িত্বপালনকালে শারীরিক শক্তি নয়, আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষকে নির্মোহভাবে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে কোনো প্রকার নির্যাতন ও নিপীড়ন করা যাবে না। সব উপায়ে সর্বতোভাবে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
মাদকের প্রসঙ্গে পুলিশ প্রধান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। কোনো পুলিশ সদস্য মাদকের সঙ্গে অথবা মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, মানুষের দোরগোড়ায় পুলিশিংকে পৌঁছে দিতে হবে। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবখানে উন্নয়নমুখী উদ্ভাবনী পুলিশিং কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কেন্দ্রিক বিট পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বিট পুলিশিংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে তার দায়িত্বাধীন এলাকার প্রত্যেক নাগরিকের সুখ-দুঃখের খোঁজ নেবেন। বিপদে ও প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। এ বিষয়ে একটি এসওপি প্রণয়ণের কাজ চলমান রয়েছে। শিগগিরই সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনাসহ একটি এসওপি সব ইউনিটে পৌঁছে দেওয়া হবে।
পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ প্রসঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বেনজীর আহমেদ বলেন, পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্বরত অবস্থায় আহত, গুরুতর আহত ও নিহতের ক্ষেত্রে কল্যাণ সংক্রান্ত সুবিধাদি রয়েছে। এর পাশাপাশি চাকরিরত অবস্থায়ই সদস্যদের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, শাসন ও সোহাগের সমন্বয় করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ভালো কাজ করলে স্বীকৃতি ও উৎসাহের পাশাপাশি মন্দ কাজ করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্য করা হবে না।
পুলিশ সদস্যদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান করোনাকালে বাংলাদেশ পুলিশ যেভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ পুলিশের এ মানবিকতা দেশের মানুষের কাছে বাংলাদেশ পুলিশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। মানুষ পুলিশকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে, পুলিশকে ভালোবাসছে, শ্রদ্ধা করছে। মানুষের এ অভূতপূর্ব ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মর্যাদা আমাদের রাখতে হবে।
বেনজীর আহমেদ বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের এ অবস্থান ধরে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের পুলিশ হয়ে কাজ করতে হবে। দুনীতি ও মাদকসহ যে কোনো প্রকার পুলিশি মিসকন্ডাক্টকে কঠোর হাতে দমন করতে না পারলে জনগণের পুলিশ হয়ে ওঠা সহজ হবে না।
রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ এবং জাতীয় শুদ্ধাচারের আলোকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ পুলিশ শুরু থেকেই নিবেদিত হয়ে কাজ করছে। সেই গতিকে অধিকতর বেগবান করতে আরও বেশি নিষ্ঠা, সততা ও শতভাগ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান আইজিপি।
বেনজীর আহমেদ তার বক্তব্যের শুরুতে করোনায় দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। যারা অসুস্থ আছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি।