নতুন নতুন অপরাধ বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, করোনাকালে অপরাধের ধরন কিভাবে পাল্টাচ্ছে তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। করোনাকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে পুলিশ বাহিনী আদর্শ স্থাপন করেছে।

করোনাকালে যখন কেউ লাশ দাফন করছে না, সেই সময়ও দায়িত্ব নিয়ে পুলিশ লাশ দাফন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অসহায় মানুষ পুলিশের কাছে যাচ্ছে। করোনার দুর্যোগে পুলিশের এসব মানবিক কর্মকাণ্ড সব মানুষের নজর কেড়েছে। ঘর থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পুলিশের মানবিকতার গল্প সবার মুখে মুখে। পুলিশ এখন মানুষের আস্থার ঠিকানা। কর্মহীন পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের সম্মুখযোদ্ধা পুলিশ বাহিনীর বহু সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মৃত্যুবরণও করেছেন।

গতকাল সোমবার রাতে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে গুজব রটায়। তাদের বিরুদ্ধেও পুলিশ ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগে সেল গঠন করে করোনা রোধে ভূমিকা রাখছে। করোনার এই দুর্যোগে এখনো আমরা নিয়মিত বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যাতে কোনো সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী সুবিধা নিতে না পারে। মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ছাড়াও এই দুই বিভাগের অধীন পুলিশ, বিজিবি, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, কারা অধিদপ্তর, পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সব বাহিনী ও বিভাগের সদস্যরা নিরলস কাজ করে চলেছেন। বিশেষ করে সাধারণ ছুটি শুরুর পর থেকে এই দুই বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী ও বাহিনীর সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এক শ্রেণির সুবিধাবাদী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নানা পাঁয়তারা শুরু করেছে। করোনা রোগী কিংবা মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আবার কেউ কেউ তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এসব রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। জ্বর নিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা যুবককে যখন কেউ ছুঁয়ে দেখছে না, সে সময় ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেছে পুলিশ। সমাজের পিছিয়ে পড়া হরিজন, কামার ও মুচি সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে মানবিক পুলিশ। এমনকি যখন করোনার কারণে কৃষক ধান কাটতে পারছিল না, তখন পুলিশ সদস্যরা কৃষকের ধান কাটতে সহায়তা করেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশজুড়ে প্রচারণা, ত্রাণ বিতরণ, অপরাধের প্রতিকার ও প্রতিরোধ সবই এখন সমানতালে করছে বাংলাদেশ পুলিশ। সমপ্রতি চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের বাড়িতে প্রবেশে বাধা দেওয়ার মতো অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে বাড়ির মালিককে বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘দেশব্যাপী কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সহায়তায় এসব মালামাল বহনকারী যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করা, মজুদদার ও কালোবাজারি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে পুলিশ। এ ছাড়া সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময় বিভিন্ন কম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, জরুরি প্রয়োজনে ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘করোনার সময় বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশে আগমনী ভিসা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মধ্যে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের ভিসা করে নিজ নিজ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে।’





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন