মাদককে চিরতরে নির্মূল করতে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)।

ইতোমধ্যেই মাদকের বিরুদ্ধে নিজের শুন্য সহিষ্ণুতার নীতির বিষয়টি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরই জানিয়ে দিয়েছেন।

আইজিপি বলেছেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্য মাদকের সঙ্গে অথবা মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

দেশকে মাদকমুক্ত করতে পুলিশ প্রধানের এমন কঠিন বার্তার পর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ কর্মকর্তারা। গতি বেড়েছে মাদক বিরোধী অভিযানেও।

কেন্দ্র থেকে প্রান্ত সুচারু ও সমন্বিতভাবে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সর্বস্তরের কর্মকর্তারা। পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে দেশজুড়ে মাদক কারবারিদের নেটওয়ার্ক লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (২১ জুলাই) বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, ‘গত এক সপ্তাহে পুলিশ ১ হাজার ৭১৪ টি মামলায় ২ হাজার ৫৩০ জন মাদক কারবারী ও সেবনকারীকে গ্রেফতার করেছে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা কালের আলোকে জানান, ‘মাদকের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুন্য সহনশীলতা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে দেশব্যাপী চলমান পুলিশী কার্যক্রম নিরিবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে চলছে।

আইজিপি’র প্রাধিকারভুক্ত কার্যতালিকায় দেশমাতৃকাকে মাদকমুক্ত করা একটি অন্যতম প্রায়োরিটি।’

চলতি মাসের ১২ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের দায়েরকৃত এসব মামলায় ৩ লাখ ২ হাজার ২৫৯ পিছ ইয়াবা, ৫ হাজার ৮৪৯ বোতল ফেন্সিডিল, ২ কেজি ৪৬২ গ্রাম হেরোইন, ৮২০ কেজি গাঁজা, ২ হাজার ৬৮২ লিটার দেশি মদ এবং ২৯১ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার হয়েছে।

সূত্র মতে, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ড.বেনজীর আহমেদ পুলিশ কর্মকর্তাদের ৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।

নিয়মিতই তিনি পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। ৬৬০ থানার অফিসার ইনচার্জদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি কথা বলেছেন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেমন উচ্চকন্ঠ নীতি গ্রহণ করেছেন তেমনি মাদক নির্মূলেও সর্বাত্নক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ারও অঙ্গীকার করেছেন।

স্পষ্ট ভাষায় আইজিপি বলেছেন, ‘পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত থাকতে হবে। যারা অবৈধ অর্থ উপার্জন করে বড়লোক হতে চান, তাদের স্থান পুলিশে নয়। তারা পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিন। বাড়ি ফিরে ব্যবসা করে বড়লোক হন।’

সূত্র মতে, ড.বেনজীর আহমেদ ডিএমপি ও র‌্যাবে’র প্রধান থাকাকালীন সময়েও পুলিশের দু’টি ইউনিটে জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।

ওই সময় কঠিন এ চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পুলিশ প্রধান হিসেবেও মাদক অপরাধ নির্মূলে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ স্বপ্ন দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা দেবেন। সেই স্বপ্নপূরণে যুদ্ধ ঘোষণা করে বীরদর্পে হাঁটতে শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশ প্রধানের প্রাধিকারভুক্ত এ কার্যক্রম দিনের পর দিনে অধিকতর গতিশীলতার সুচারু ও সমন্বিতভাবেই কেন্দ্র থেকে প্রান্তে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রায় দুই সপ্তাহ আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বিশেষ অপরাধ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ।

সেদিন তিনি বলেন, ‘রাজারবাগ থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। মাদকের বিরুদ্ধে শেষ যুদ্ধও রাজারবাগ থেকেই শুরু হবে।’

সূত্র মতে, ওই সভাতেই ডিএমপি’র উপস্থিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঐকমত্যে পৌঁছান মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা মাদকবিরোধী কার্যক্রমকে প্রাধিকারভুক্ত করে ব্যবস্থা নিলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব।

ডিএমপি কমিশনার মোহা.শফিকুল ইসলাম পুলিশ প্রধানের দেওয়া নির্দেশনাকে ইবাদতের মতোন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেন।

রাজধানীর পুলিশ প্রধান ঘোষণা দেন- মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এ ঘোষণায় টনক নড়ে রাজধানীর থানার অফিসার ইনচার্জদের।

সূত্র জানায়, পুলিশ প্রধানের সঙ্গে সভার দু’দিন পরই ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ডিএমপির অপরাধ বিভাগের ও গোয়েন্দা (ডিবি) ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সব উপকমিশনারের কাছে মাদক নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণে আনতে দিকনির্দেশনামূলক চিঠি পাঠান।

সেই চিঠিতে বলা হয়েছে- ‘সমাজ থেকে মাদক নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার পাশাপাশি মাদক সংশ্লিষ্ট মামলা পেশাদারত্বের সঙ্গে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে।’

এ চিঠির পরপরই মাদকের বিরুদ্ধে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে পুলিশ।

জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা.শফিকুল ইসলাম কালের আলোকে বলেন, ‘মাননীয় পুলিশ প্রধানের নির্দেশে মাদক বিরোধী অভিযান জোরদার করার পাশাপাশি নানামুখী উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা পুরোমাত্রায় কাজ শুরু করেছি।’

তিনি বলেন, ‘মাদক ব্যবসায় প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।’





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন