![](https://sp-ao.shortpixel.ai/client/to_webp,q_glossy,ret_img/https://updatesatkhira.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
আব্দুল খালেক চৌধুরী :
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ বাহিনীর লোকজন সমাজের একশ্রেণির লোকের কাছে যেন এলার্জি। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ বাহিনীর লোকজনের খুঁত ধরার জন্য সব সময় ওঁত পেতে থাকেন। এ রকম যখনি কিছু পায় তৎক্ষনাত একটি শিয়াল যেমন ডাক দিলে অন্যরা হুক্কাহুয়া রবে একযোগে চিৎকার দিয়ে উঠে। তদ্রুপ ঐ শ্রেণির লোকেরা ও স্যোশাল মিডিয়ায় সমস্বরে চেঁচামেচি শুরু করে দেয় এবং ভাইরাল করে দেয়।
মুরুব্বিরা বলে থাকেন-একটি শিয়াল যেকোন কারণে ডাক দিলে অন্যান্য শিয়ালের অন্ডকোষে টনটন শুরু হয়। ফলে সবাইকে বাধ্য হয়ে চিৎকার করতে হয়। আমার প্রশ্ন জাগে এক্ষেত্রে ঐ শ্রেণির লোকজনের ও কি একই অবস্থা হয়?
সরকারের অনেক বিভাগ আছে। সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট থাকে। কিন্তু একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কয় টাকার বাজেট পায়। অথচ সবাইর নজর থাকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কি ভুল করল বা কয় টাকা মেরে দিল।
একজন পুলিশ কত টাকা ঘুষ খেল। এগুলো ধরার জন্যই যেন সকল আয়োজন। কিছুদিন আগে আমি এক লোকের অন্যায় কাজের জন্য তাকে বকাঝকা এবং গালমন্দ করেছি। কোন ফাঁকে কে বা কারা সেটা ভিডিও করে ফেসবুকে ছেঁড়ে দেয়।
মুহূর্তেই সেটা ভাইরাল হয়ে যায়। অথচ এর চাইতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভাইরাল হয় না। কয়দিন আগে দেখলাম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নবনিযুক্ত মান্যবর প্রশাসক সুজন ভাই অন্যায় কাজের জন্য এক লোককে গাল মন্দ করেছে।ভাগ্যিস সেটা ভাইরাল হয় নাই। কারণ তিনি নির্বাচিত নহেন।
মুলত নির্বাচিত হওয়ার মধ্যেই যত দোষ। কারণ নির্বাচনে পক্ষ বিপক্ষ থাকে। ফলে রেষারেষি সৃষ্টি হয়। এটাই একজন জনপ্রতিনিধির জন্য কাল। জানা থাকা দরকার-স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ বাহিনী সরাসরি আইন শৃঙ্খলার কাজে দায়িত্বশীল।
সমাজের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার তাগিদে তাদেরকে মাঝে মধ্যে কঠোর হতে হয়। আগেকার দিনে চেয়ারম্যান মেম্বারেরা সালিশ কার্যে বেত্রাঘাত করত। কারণ ছোট খাটো বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময় সাপেক্ষ। তাই অনেক কিছু সামারিভাবে করা না হলে এলাকার আইন শৃঙ্খলা ঠিক
রাখা যায় না।
কিন্তু আজকাল ভাইরালের ভয়ে জনপ্রতিনিধিরা বেত হাতে নিতে চায় না। তাছাড়া কোন বিষয় ভাইরাল হলে সরকার ও বাছবিচার না করে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য এ্যাকশন শুরু করে দেয়। তাই কোন জনপ্রতিনিধিরা এখন আর কঠোর হতে চায় না।
ফলে ছোটখাটো বিষয়ে ও থানা কোর্টে মামলা মোকাদ্দমার স্তুপ হচ্ছে এবং এলাকার আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। মূলত অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যারা পুলিশ বাহিনীর পিছনে লেগে থাকেন তাদের পাছায় হয়ত কোন সময় পুলিশের বেত্রাঘাত লেগেছে এবং যারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পিছনে লেগে থাকেন তারা বা তাদের কোন নিকটজন জনপ্রতিনিধি হতে না পেরেই মনের জ্বালায় এই সব অপ্রচারে ব্যস্ত থাকেন। তাদের এই সব অপপ্রচার আমলে না নেওয়ার জন্য জনস্বার্থে সর্বমহলের প্রতি অনুরোধ রহিল।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি নাহিদ সুলতানা জ্যুতি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, কিছুদিন আগে বৈশ্বিক মহামারি করোনা সঙ্কটকালে ডাক্তার ও সাংবাদিকদের মতো ফ্রন্টলাইনে থেকে কাজ করে বেশ সুনাম অর্জন করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। হঠাৎ করে এক প্রদীপের অন্ধকারে চারিদিকে সংক্রামক ব্যাধির মতো শুধু পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে। শত শত ফেক আইডি ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে কত কী সব ছাড়া হচ্ছে!
অথচ আমাদের বুঝা উচিত একজন ব্যক্তি অপরাধ করতেই পারে কিন্তু একজন ব্যক্তির অপরাধ কখনই একটি গোষ্ঠীর দায় হতে পারে না।
আমরা কি দেখি নাই? পুলিশ সেবা দিচ্ছে রোঁদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে, অপরাধীরা নিজে বাঁচতে পুলিশ অফিসারকে খুন করেছেন দিনে দুপুরে। আমরা কি দেখি নাই? বয়োজ্যেষ্ঠ কাউকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিচ্ছে পুলিশ?আমরা কি দেখি নাই? করোনায় বাংলাদেশ পুলিশ নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে খাবার পৌছে দিয়েছে।
আমরা কি দেখি নাই? টাকার অভাবে অসহায় মা তার নবজাতক শিশুকে নিয়ে ক্লিনিকে আটকা পড়ে আছে ৯৯৯ এ সংবাদ দিয়ে পুলিশ পকেটের টাকা দিয়ে সেই অসহায় মা ও তার শিশু কে বাড়ি তে পৌছে দিয়েছে।
আমরা কি দেখি নাই বুলবুলি বা আম্পান ঘূর্ণিঝড়ে রাস্তায় পড়ে থাকা বড় বড় গাছ পুলিশ কত কষ্ট করে সরিয়েছে। আমরা কি দেখি নাই? করোনায় মৃতদের জানাজার নামাজ আত্মীয় স্বজন পড়তে আসেনি অথচ পুলিশ এসে জানাজা/ সৎকার কাজ সম্পন্ন করেছেন।
কিন্তু আজ পুলিশকে বিব্রত করছেন অনেকেই।
হতে পারে ওসি প্রদীপ একটি কলঙ্ক কিন্তু ওসি প্রদীপ একটি গোষ্ঠী নয়। পুলিশ আর প্রদীপ এক নয়। প্রদীপ এর মতো মানুষ সব পেশাতেই আছে। পুলিশ দেশের একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। আসুন একটি মানুষের অপরাধকে ঘৃণা করি এবং সম্মান ও সহযোগিতা করি একটি বাহিনীকে।
লেখক : জনপ্রতিনিধি ও আইনজীবী, মহেশখালী, কক্সবাজার।