নাজমুল শাহাদাৎ (জাকির): কিছু মানুষকে প্রকৃতি দু-হাত ভরে দেয়। আর কিছু মানুষের সব কেড়ে নেয় চরম নিষ্ঠুরতায়। প্রকৃতির নির্মমতার শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ আলিপুরের শারীরিক প্রতিবন্ধী ও মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিয়া খাতুন সব প্রতিকুলতা ছাপিয়ে মাধ্যমিক স্তরে ভালো ফলাফল অর্জন করলেও উচ্চ শিক্ষার জন্য কলেজে ভর্তির টাকা যোগাঢ়ের বিষয়টি মাথায় আসতে যেনো উড়ে যায় সব উচ্ছ্বাস! উল্লাসের বদলে ভর করে দুশ্চিন্তা, অর্থাভাবে শেষমেষ ভর্তি না হওয়ার শঙ্কা আর বি.সি.এস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ভাঙ্গার দুর্ভাবনায় দিন গুনতে থাকে সাজিয়া।
পরবর্তীতে বিষয়টি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবু’র নজরে আসলে সাজিয়ার স্বপ্ন পূরণে সারথি হবেন জানান তিনি। এবার সেই সাজিয়ার অনলাইনে পড়াশুনার জন্য নতুন স্মার্টফোন, যাতায়াতের জন্য আধুনিক গাড়িসহ তার সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিবেন বলে জানিয়েছেন মো. আসাদুজ্জামান বাবু। সোমবার বিকালে সাজিয়া খাতুনের বাসায় তার শারিরীক খোঁজখবর নিতে গেলে একথা বলেন তিনি।
এবিষয়ে সাজিয়া খাতুনের মা শরিফা খাতুন বলেন, জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী সাজিয়া খাতুন। প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়ায় স্বামী আব্দুস সবুর সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে চলে যান। প্রতিবন্ধী মেয়ের ভবির্ষতের কথা চিন্তাকরে অনত্র বিয়ে করেননি জানিয়ে সাজিয়ার মা শরিফা খাতুন আরো বলেন, জীবনের সাথে যুদ্ধ করেই কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে সাজিয়াকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে তার নানা শামছুল আলমের বাড়ি থেকে তাকে পড়াশুনা করাতে থাকি। তবে দরিদ্রতার কাছে হার মেনে সাজিয়া খাতুনকে সু-চিকিৎসা সেবা দিতে না পারার কারনে সে হাটাচলা করতে পারতো না। একারনে, শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সাজিয়াকে কোলে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করেছি। পরবর্তীতে সাজিয়া খাতুন আলিপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তবে বাসা থেকে এতদূর মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসার জন্য সাইকেল চালানো শেখেন তিনি (শরিফা খাতুন)। এসএসসি পরীক্ষায় অভাব-অনটনের সাথে যুদ্ধ করেও জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেন সাজিয়া খাতুন। সব প্রতিকুলতা ছাপিয়ে সাজিয়া খাতুন ভালো ফলাফল অর্জন করলেও কলেজে ভর্তির টাকা জোগার করতে না পারায় সদর উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবগত করলে ঐসময় (৭ই অক্টোবর) তিনি সাজিয়ার লেখাপড়াসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ের জন্য সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করেন এবং মঙ্গলবার (২৩শে নভেম্বর) সাজিয়ার অনলাইন ক্লাসের জন্য নতুন স্মার্ট ফোনসহ পর্যায়ক্রমে আধুনিক গাড়িও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিবেন বলে জানিয়েছেন।
এবিষয়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, মেধাবী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সাজিয়া খাতুনের বাবা থেকেও নেই। খুব দরিদ্রতার মাঝে তার বেড়ে ওঠা। মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী। অর্থ-অভাবে যেনো তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে না যায় সেকারণে যতোদিন তার লেখাপড়া শেষ না হবে ততোদিন তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সাজিয়া খাতুনকে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন তিনি। সাজিয়ার স্বপ্ন বি.সি.এস ক্যাডার হওয়া। তবে অর্থঅভাবে মেয়েটির লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। তবে সে যেনো তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে সেকারনে সাজিয়াকে নিজ মেয়ের মতোকরে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুলবেন বলে জানান তিনি।