গত বছর ঈদ করেছেন নদীর চরে কুঁড়েঘরে, আবার কেউ খোলা স্থানে। অনেকই ছিলেন অন্যের জায়গায়, কোন রকমে ঘর বেঁধে। একদিন পরেই ঈদ উল আজহা। এবার পরিবার নিয়ে ঈদ করবেন নতুন পাকাঘরে।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পাওয়া পাকাঘরে খুশির ঈদ করবেন জেলার দেড় হাজার পবিবারের প্রায় সাত হাজার সদস্য। এসব পরিবারের অনেকেরই গত ঈদে পাতে মাংস-পোলাওয়ের পরিবর্তে জুটেছিল মোটা চালের ভাত আর পোল্ট্রি মুরগির মাংস। এবার নতুন ঘরে অনেকের পাতেই হয়তো ঈদের ভালো খাবারও জুটবে। নতুন ঘরে সব কিছু পেয়ে ঈদের আনন্দ নতুন মাত্রা যোগ হবে আশ্রয়হীনদের।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানা যায়, জেলায় দুই দফায় ঘরের বরাদ্দ হয়েছে এক হাজার ৪৮৫টি। বরাদ্দকৃত ঘরের দলিল সম্পন্ন করে হস্তান্তর করা হয়েছে এক হাজার ৩১৯টি পরিবারকে। দলিল সম্পন্ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ১৬৬টি ঘরের।
সেখান থেকে আরও জানা যায়, প্রতি পরিবার পেয়েছে ২কাঠা জমিসহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা ঘর। সাথে একটি বাথরুম ও রান্না ঘর। রয়েছে প্রতি ১০ পরিবারের জন্য একটি নলকূপ সুবিধা। আরও জানায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় প্রথম ধাপে ঘরের বরাদ্দ করা হয় ২৯৮টি এবং ২য় ধাপে অনুমোদন করা হয় ১০০টি। এ উপজেলায় ৪০টি ঘরের দলিল সম্পন্ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কলারোয়া উপজেলায় প্রথম ধাপে ঘরের অনুমোদন করা হয় ১০০টি এবং ২য় ধাপে অনুমোদন করা হয় ১৭টি। এ উপজেলায় ৪৩টি ঘরের দলিল সম্পন্ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাল উপজেলায় প্রথম ধাপে ঘরের অনুমোদন করা হয় ১২৫টি এবং ২য় ধাপে অনুমোদন করা হয় ৫০টি। এ উপজেলায় ১২টি ঘরের দলিল সম্পন্ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশাশুনি উপজেলায় প্রথম ধাপে ঘরের অনুমোদন করা হয় ২৬৮টি এবং ২য় ধাপে অনুমোদন করা হয় ৬২টি। এ উপজেলায় ৫৫টি ঘরের দলিল সম্পন্ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
দেবহাটা উপজেলায় প্রথম ধাপে ঘরের অনুমোদন করা হয় ২৯টি এবং ২য় ধাপে অনুমোদন করা হয় ২০টি। এ উপজেলায় ১২টি ঘরের দলিল সম্পন্ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলায় প্রথম ধাপে ঘরের অনুমোদন করা হয় ৩৬টি এবং ২য় ধাপে অনুমোদন করা হয় ২০টি। এ উপজেলায় সকল ঘরের দলিল সম্পন্ন করে হস্তান্তর করা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় প্রথম ধাপে ঘরের অনুমোদন করা হয় ২৯০টি এবং ২য় ধাপে অনুমোদন করা হয় ৭০টি। এ উপজেলায় ৪টি ঘরের দলিল সম্পন্ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ জোহরা জানান, এ উপজেলা ৩৯৮টি ঘরের বরাদ্দ হয়েছে। এরমধ্যে থেকে ৩৫৮টি ঘর ইতোমধ্যে দলিল সম্পন্ন করে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৪০টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। শেষ হলে এগুলো হস্তান্তর কররা হবে। ইতোমধ্যে যারা ঘর পয়েছে তারা পরিবার নিয়ে বসবাস করছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, অসহায় ও দুস্থ পরিবারের সদস্যরা এবার ঈদ উদ্যাপন করছেন উপহারের বাড়িতে। এর আগে তাঁরা ঈদ করেছেন ভাঙা ঘরে। অনেকে খোলা স্থানেও বসবাস করাসহ ঈদ উদ্যাপন করেছেন। এবার তাঁরা পাকা বাড়িতে ঈদ করতে পারায় আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আনন্দও বাড়িয়ে দিয়েছে নিজের পাকা বাড়িতে ঈদ করতে পারায়।
ফিংড়ি ইউনিয়নের গাভার মরিচ্চাপ নদীর চরে নতুন ঘর পেয়ে তাদের অনুভূতির কথা বলেন চাষী মো: ইন্তাজ আলী গাজী ও রাজমিস্ত্রী মোশারফ হোসেন। তারা দু’জনই পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে নদীর পাড়ে কুঁড়েঘরে বসবাস করতেন। সেখানে ছিলোনা তাদের ঈদের আনন্দ। এবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকাঘর পেয়ে বেড়েছে ঈদের আনন্দ।
একই স্থানের বসবাসকারী সুমাইয়া খাতুন জানান, তিনি, তার মা, ছেলে, মেয়ে ও স্বামী নিয়ে বসবাস করছেন। পেশায় তিনি দর্জি। এখানেই তিনি সেই পেশাকেই আকড়ে ধরে থাকতে থাকতে চান। তিনি বলেন, আগে যেখানে থাকতাম সেখানে তেমন কাজ ছিলে না। এখানে এসে অনেকের সাথে নতুনভাবে পরিচয় হয়েছে। কাজও পাচ্ছি বেশ। তিনি আশা করছেন এবার ঈদেটা নতুন ঘরে বাড়তি আনন্দ নিয়ে করবেন।
ডেকোরেটর শ্রমিক মঈন উদ্দিন হাওলাদার ও শ্রমিক আব্দুল আওয়াল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা বাড়িতে এবার ঈদ করবেন। গত ঈদ করেছেন খোলা স্থানে। এবার পরিবার নিয়ে নিজের বাড়িতে ঈদ করতে ভালো লাগছে। জীবনে এ রকম ঈদ আনন্দ আর আসেনি বলে মন্তব্য করেন তারা।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা আশ্রয়হীনদের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনি নিজ ঘরে পরিবারকে নিয়ে ঈদ করতে পারাটাও অনন্দের। সেই আনন্দে যাতে কোন প্রকার ঘাটতি না হয় সে জন্য সরকারের করোনাকালীন যে প্রণোদনা আছে সেটি থেকে তাদের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
– পত্রদূত নেট।