সাতক্ষীরায় প্রতিভার কোন অভাব নেই। সাংস্কতিক চর্চা বাড়াতে হবে। সাতক্ষীরা সংস্কৃতি চর্চার উর্বর ভূমি। এখানে অনেক ভালো ভালো কবি সাহিত্যিক আছেন।

যারা জাতীয় পর্যায়ে বিশেষভাবে পরিচিত। সাংস্কৃতিক কর্মীদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সাতক্ষীরার বিভীষিকাময় যে অতীত আছে তা সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মুছে ফেলতে হবে, উত্তরণের পথ বের করতে হবে। আর কবিতা কিভাবে লেখা হয় কেন লেখা হয়? যারা অনেকদিন ধরে লেখালেখি করেন, যারা কবি তারা ই জানেন।

ওই মহাসিন্ধুর ওপার হতে কী সংগীত ভেসে আসে। শুধু সংগীত নয়, আরো আরো যে সংস্কৃতি আছে, আরো যে শিল্প আছে তার সব প্রতিভা কবিতার ভেতর থেকে, মহাসিন্ধু থেকে আসে, সে সংগ্রহ করে।

প্রকৃতি থেকে সে উপাদান রস আস্বাদন করে, সংগ্রহ করে তার মধ্য দিয়েই একটা শিল্প, একটা সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। আর শিল্প হলো -আমরা যে কাজটা করি, সেই কাজটি যখন তার মাত্রাকে ছাড়িয়ে যায় তখন সেটি শিল্পে পরিনত হয়। সাতক্ষীরা এমন একটি জায়গা যেখানে প্রতিভার কোন অভাব নেই,

এখানে বেশি বেশি কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। যারা কবিতা লিখতে লিখতে বড় হয়েছেন, তারা জানেন কবিতা লেখার যে বেদনা, তা প্রসব বেদনার মতোই। যখন একটা কবিতা লেখা হয় তখন কাটা ছেঁড়া করতে করতে একটি কবিতা বের হয় তার যে একটা স্ফীত হাসি, তার যে একটা আনন্দ, বেদনার আনন্দ- কথা গুলো বলছিলেন সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ কবি শেখ মফিজুর রহমান।

পিন-পতন নিরবতায় দম ফেলানোর নেই সময়-‘সময় এখন দেশ গড়ার’ পিতার প্রতি প্রতিশ্রুতি’ ‘যত দুরে যাই’ শিঁকড়ের গন্ধ পাই- লাল সবুজের গল্প’- চাইনা শুনতে অল্প। ‘শুদ্ধ মানুষের জন্য যুদ্ধ’-আমরা নই অবরুদ্ধ। ‘ভালবাসার দাবি’ আমার রবীন্দ্রনাথ’ সূর্য এবং আমি’ লাল সবুজের গল্প’এ কার্তিকের হৈমন্তী সন্ধ্যায় হিমেল হাওয়ার পরশ পেয়ে কবিতারা ফিরে পেয়েছিল প্রাণ। শহরের ম্যানগ্রোভ সাহিত্যকানন সভাঘরে সহকারী জজ সালমা আক্তার ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার এর কন্ঠ থেকে মুহূর্তেই নেমে এসেছিল স্বর্গীয় ধারা। যেন মহাসিন্ধুর ওপার থেকে ভেসে ভেসে আসছিল অমীয় বানী। উপস্থিত কবিকুলের নিরব শ্রবণে সভাঘর পূর্ণতা পেয়েছিল সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। প্রকৃতির রূপ, রস, ঘ্রাণ আস্বাদনে ব্যস্ত তখন কবিতা প্রেমী অসংখ্য দর্শক-শ্রোতা। হৈমন্তী কবিতা সন্ধ্যা’য় হেমন্তের নবান্ন নিয়ে প্রশান্তির পারদ বিলিয়ে ধানের গায়ে শিশির জমিয়ে, মল্লিকার ঘ্রাণ বুকে আবির্ভাব হন বিদগ্ধ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। করতালির ধ্বনি যখন ম্যানগ্রোভ ছাপিয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল শহরের গলিতে গলিতে তখন বিভিষিকাময় অতীত মুছে দিতে গেয়ে ওঠেন নতুন গান। আহবান জানান নতুন প্রজন্মকে। নবান্নে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ্যে বিভোর কার্তিক সন্ধ্যায় আজমল স্মৃতি সংসদ শুক্রবারের সমস্ত আধাঁর কেটে আলোর বিচ্ছুরন ছড়াতে কবিতার উপরে কবিতা বিছিয়ে জাগিয়ে তোলেন লুপ্ত প্রায় হেমন্তকে। যিনি কবিতা ভালোবাসেন না তাকেও ভালো বাসতে হয়েছে কবিতা। বলতে হয়েছে অনেক ভালোলাগার কথা। মুগ্ধতার কথা। অবলীলায় স্বীকার করেছেন স্যোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে থাকা কবিতার নিখুঁত এবং সাবলীল শব্দের স্পষ্ট উচ্চারন, ধ্বনির চমৎকার ব্যবহার, শব্দের নিরেট গাঁথুনি বাচিকদের দরদী উপস্থাপনায় প্রতিটি কবিতা পেয়েছে প্রান। এমনতর ভাবাবেগ ঝরে পড়েছিল জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) আলোচনায়।

হৈমন্তি সন্ধ্যার এসময়কে স্মরণীয় করে রাখতে তিনি বলেছিলেন-আমরা এমন একটি সময়, একটি বছর পার করছি যা আমাদের জন্য অতি গৌরবের। আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করতে পারছি, আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী পালন করতে পারছি। এর ইতিহাস, এর প্রেক্ষাপট উঠে এসেছিল স্মরনীয়-বরণীয় আরো অনেক কথায়।

কবিতা পাঠের আনন্দ আয়োজন হৈমন্তী আসরের মধ্যমনি কবি শেখ মফিজুর রহমানের স্বশরীরে উপস্থিতি যেন ম্যানগ্রোভের দ্রুতি ছড়াচ্ছিল মুহুর্মুহ। আলোর দ্যুতি বিলিয়ে কবি শেখ মফিজুর রহমান যখন নিজের পরিবার, পরিজন বিশেষ করে পিতা-মাতাকে শীর্ষে তুলে ধরে সরল কন্ঠে আবৃত্তি করেন-নস্টালজিক। উপস্থিত দর্শক শ্রোতা, কবি, সাহিত্যিকরাও উপভোগের মাত্রা পেরিয়ে নস্টালজিক হয়ে যান মুহুর্তে। যোজন যোজন উচ্ছ্বাসের ¯ প্রবাহিত সভাঘরে কবি জীবন বিশেষ করে জন্ম, শৈশব, কৈশোর, শিক্ষা, পরিবার,পরিজন, সাফল্য, সম্ভাবনা, ঘাত-প্রতিঘাত, প্রিয়জনের ভালবাসা, আন্তরিকতা, কর্মক্ষেত্রে জীবনের বৈচিত্র্যময়তা সর্বোপরি জীবন চলার পথে কুড়ানো অভিজ্ঞতার অতি সুনিপন উপস্থাপন অন্যমাত্রা দান করেছিল। কবি শেখ মফিজুর রহমান এর কবিতা থেকে আবৃত্তি ‘হৈমন্তী কবিতা সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার), জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারন সম্পাদক শেখ মোসফিকুর রহমান মিলটন নাতি-দীর্ঘ আলোচনা করেন। সাহিত্যের রূপ রস গন্ধ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।

সাহিত্যের রূপ রস গন্ধ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন কবি শুভ্র আহমেদ, সাহিত্য বিষয়ে চমকপ্রদ গসপেল তুলে ধরে কবিতার ভাবার্থ বিশ্লেষন করেন ম্যানগ্রোভ সাহিত্যের সম্পাদক কবি স ম তুহিন। আবু আফফান রোজ বাবুর সঞ্চালনায় ‘হৈমন্তী কবিতা সন্ধ্যা’য় কবি শেখ মফিজুর রহমান এর কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন সাতক্ষীরার সহকারী জজ সালমা আক্তার, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার, আজমল স্মৃতি সংসদের সভাপতি কবি দিলরুবা রুবি, শেখ ফারুকুজ্জামান ডেভিড ও শামীমা পারভীন রত্না।

কবিতা আবৃত্তির হৈমন্তী সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা সরকারী মহিলা কলেজ’র অধ্যক্ষ বাসুদেব বসুসহ বিচারকবৃন্দ, প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ, সাহিত্যিক কিশোরী মোহন সরকার, কবি সালেহা আক্তার, শহিদুর রহমান, সৌহার্দ সিরাজ, আবৃত্তিকার মন্ময় মনির, হেনরী সরদার প্রমুখ।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন