৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত বিজয়ের মাসের প্রথম দিন। আলোর খেলায় বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসের নান্দনিক উপস্থাপনের দৃশ্যপট। কাউন্ট ডাউনের অবসান ঘটিয়ে সুইচ চাপলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। পাশেই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠান মঞ্চে সারফি লাইটের মুগ্ধতার বিচ্ছুরণ। এলইডিতে থ্রিডি অ্যানিমেশন’র মাধ্যমে চোখের সামনে চলতি বছরের মহান বিজয় দিবসের লোগোর অবয়ব। শৈল্পিক কারুময়তায় প্রথমেই দেখা গেলো ৭ বীরশ্রেষ্ঠের ছবি, এর মধ্যে ৩ জন দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর। এরপর মাথা উঁচু করে ভেসে উঠলো দিগন্তজুড়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা স্বাধীনতার স্মারক জাতীয় স্মৃতিসৌধ; রক্তের দামে কেনা লাল-সবুজের মানচিত্র।

বাম পাশে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদের ছবি, ডান পাশে বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। ওপরের দু’দিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিবশতবর্ষের লোগো। সবার ওপরে ‘মহান বিজয় দিবস-২০২১’। ইলেকট্রিক কনফেটির মাধ্যমে উদযাপিত হলো মাহেন্দ্রক্ষণটি। তখন অমর স্বপ্নের জ্যোতি সবার চোখে।

বিজয়ের বৈজয়ন্তী উড়ানোর সূচনা দিনে বুধবার (০১ ডিসেম্বর) স্বপ্নিল-আলোকোজ্জ্বল এক মুহুর্তের স্বাক্ষী তখন ঢাকা সেনানিবাসের মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স। উন্মোচিত হলো সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ-২০২১’র লোগো।

অনুষ্ঠানে স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী সেনাবাহিনীর তৈরি অনবদ্য-অনিন্দ্য সুন্দর লোগো’র প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিজয় দিবসের লোগো’র মাধ্যমে দেশাত্নবোধ জাগ্রত হবে বলেও মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সম্পন্ন হচ্ছে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সহযাত্রী হতে পেরে তিনি গর্বিত বলেও উল্লেখ করেন।

মহান জাতীয় সংসদের এই অভিভাবক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ও যন্ত্রপাতি সংযোজন করে সশস্ত্রবাহিনীকে আরো সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। বর্তমানে সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে দূর্দান্ত কাজ করার মধ্যে দিয়ে জাতির আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রস্তুতকৃত মহান বিজয় দিবস লোগো’র মাধ্যমে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হবে দেশের প্রতিটি প্রান্তে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রাম ও স্বাধীনতা অর্জন ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে লোগোটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক আগ্রহে সেনাবাহিনী অভূতপূর্ব আধুনিকায়নের পথে
বাঙালির কাঙ্ক্ষিত মুক্তিসংগ্রামে বিজয় অর্জনের মাস ডিসেম্বরের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে সেনাপ্রধান জেনারেল ড. এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ’র। ১৯৬৩ সালের পহেলা ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ফলশ্রুতিতে এই দিনটি তাঁর জন্মদিনও।

বাঙালি জাতিসত্তা আর নিজস্ব ভূমির গৌরবদীপ্ত বিজয় ও অহংকারের মাসটিতে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই মহান আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আদায় করেন সেনাপ্রধান।

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তিনি বাঙালি জাতির চির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি হৃদয়ের অতল থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করে বলেন, ‘২০২১ সালটি বাংলাদেশের জন্য একটি এতিহাসিক বছর, কারণ এই বছরে আমরা একই সাথে উদযাপন করছি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী।

আর এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ-বাংলাদেশ।

সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমরদ্ধ ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর একান্তিক আগ্রহ এবং প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ অভূতপূর্ব আধুনিকায়নের পথে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকল সেনা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘যাঁরা শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধেই নয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশে ও বিদেশে দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন।’

এর আগে অনুষ্ঠানে মহান বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ-২০২১ লোগো’র পটভূমি বর্ণনা করেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক। অনুষ্ঠানে বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধান এবং সশস্ত্রবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন