ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণে তর্জনী উঁচিয়ে ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে। ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’ ধন্য সেই পুরুষের তর্জনীতে জেগে ওঠলো বাঙালি জাতির আশা-আকাক্সক্ষার মানচিত্র।

আঙুলের ইশারায় পুরো জাতিকে এক করে বজ্রকণ্ঠের ঘোষণায় ছিনিয়ে আনলেন স্বাধীনতা। বিশ্বের বুকে এনে দিলেন গর্বিত এক পরিচয়, স্বাধীন ভূখন্ড, একটি পতাকা আর জাতীয় সঙ্গীত। ইতিহাসের বিস্ময়কর নেতৃত্বের কালজয়ী স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই সাতই মার্চের অগ্নিঝরা ভাষণের প্রেক্ষাপটেই নির্মিত হয়েছে প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতার একটি ভাস্কর্য। নাম ‘বজ্রকন্ঠ’। এটির বেইজের উচ্চতা ৬ ফিট।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও বিরল ভালবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে সিলেট সেনানিবাসের মুজিব চত্বরে নির্মিত এই ভাস্কর্য। সুউচ্চ এই ভাস্কর্য বাড়িয়েছে স্থানীয় মুজিব চত্বরের গৌরব-অহংকার। ঐতিহ্যের ধারার সঙ্গে যুক্ত করেছে নতুন ঐতিহ্য। সিলেট-তামাবিল সড়ক থেকে দৃশ্যমান দৃষ্টিনন্দন এই ভাস্কর্যের আবেদনও যে কারণে বহুমাত্রিক।

মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষে এই ভাস্কর্য উদ্বোধনকে সৌভাগ্যের ব্যাপার বলেই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। রোববার (০৫ ডিসেম্বর) সকালে সিলেট সেনানিবাসের মুজিব চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ‘বজ্রকন্ঠ’ উদ্বোধন করে স্বভাবতই আবেগ-ভালোবাসা আর হৃদয়ের অতল শ্রদ্ধায় একাকার হয়েছেন সেনাপ্রধান।

বাঙালি জাতির চির আরাধ্য পুরুষের প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় আবেগমথিত উচ্চারণে জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠেই মানুষের মনে রোপিত হয়েছিল স্বাধীনতার বীজ। জাতির পিতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ।’

তিনি বলেন, ‘জাতির জনকের এই ভাস্কর্য শুধু প্রদর্শনের জন্যই নয়, স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসের প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ জন্মাবে। সেনা সদস্যদের পাশাপাশি বাইরের লোকজনও এই ভাস্কর্য দেখতে ও এর প্রতি সম্মান জানাতে পারবে। বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতা, অসাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলি, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, নীতি এবং আদর্শ ছড়িয়ে পড়বে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে’Ñ যোগ করেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তেই স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশে-বিদেশে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে সক্ষম। সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহযোগিতার জন্য সমরদ্ধ ধন্যবাদ জানাই। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে গর্বের জায়গায় দেখতে চান।’

মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, বাগ্মিতা, নি:স্বার্থ ভালোবাসা, সাহসিকতা, মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা ও ত্যাগ উজ্জীবিত করে সতের কোটির বাংলাদেশকে। উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে নতুন প্রজন্মকেও। সিলেট সেনানিবাসের মুজিব চত্বরে নির্মিত এই ভাস্কর্যটিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শ্বাশ্বত হাতছানি, জীবন সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকবর্তিকা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।

জাতীয় ইতিহাসের শৌর্য বীর্যের বহি:প্রকাশ ভাস্কর্যটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জাতির প্রতি তাঁর অবদানকে অবিস্মরণীয় করে রাখার অনবদ্য এক উপস্থাপন বলেও মন্তব্য করেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি ভাস্কর্যটি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত করবে। এছাড়া ভাস্কর্যটি নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে প্রস্ফুটিত করবে।

অনুষ্ঠানে সেনা সদর দপ্তরের অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও সিলেটের  এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল হামিদুল হকসহ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন