ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) দেশের মধ্যে থাকা দেশ বিরোধী পরগাছাদের ষড়যন্ত্রের শিকল ভেঙ্গে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, যারা বিদেশ থেকে সাহায্য, অনুদান এনে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের জবাবদিহিতায় আনার সময় এসেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “বাংলাদেশের মাটি খুবই খাঁটি। এখানে সোনা ফলে।” সেই সঙ্গে পরগাছাও ফলে। অনেক সময় দেখা যায় ফসলের চেয়ে পরগাছা বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়। এ পরগাছারা আমাদের পেছন থেকে খামচে ধরার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের মানুষ সকল ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়েছে। আজকে এ পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। শীঘ্রই মধ্যম আয়ের দেশে আমাদের উত্তরণ হবে।
তিনি আজ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জুম বাংলা স্কুল প্রাঙ্গনে জুমবাংলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা। বক্তব্য রাখেন জুমবাংলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ মনিরুজ্জামান, সহ-সভাপতি জেরিন সুলতানা। সভাপতিত্ব করেন জুম বাংলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের সভাপতি রুহুল আমিন সেলিম।
আইজিপি বলেন, বাঙালি দেশপ্রেমিক জাতি। দেশের জন্য বাঙালি যতবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, ততবার বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আমার কোন সন্দেহ নেই দিন শেষে এ জাতি বিজয়ী হবে।
তিনি বলেন, এক সময় বাংলাদেশ ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের দেশ। অসুখ ও বঞ্চনা ছিল নিত্যসঙ্গী।
দারিদ্র্যকে মানুষ নিয়তি হিসেবে মেনে নিত। মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪০-৫০ বছর। এরকম একটা দেশকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন করেছিলেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের গরীবের হার ছিল ৮০ ভাগ। ২০০৯ সালে যখন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসে তখন দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৭ ভাগ। এখন দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগ। চরম দারিদ্র্যের নিচে বসবাস করে মাত্র ৯ ভাগ মানুষ। আজ আমরা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকে উন্নয়ন ও সামাজিক অনেক সূচকে পেছনে ফেলে দিয়েছি। অথচ এসব দেশ উন্নয়ন শুরু করেছিল আমাদের আগে।
তিনি বলেন, করোনাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুঃসাহসীক নেতৃত্ব ও প্রাজ্ঞ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ফলে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এ অগ্রগতি ধরে রাখতে পারলে আমরা চরম দারিদ্র্যকেও জয় করে দারিদ্র্যের শিকল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পারবো। দারিদ্র্যের শিকল ভাঙার উৎসব করতে পারব।
জুম বাংলার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আইজিপি বলেন, আমরা সবাই মিলে এ কাজটি করতে পারলে পথ শিশু নিয়ে কথা বলতে হতো না। তিনি বলেন, আজ আপনারা যে শিশুদের পরিচর্যা দিয়ে যাচ্ছেন একদিন তারা দেশের বোঝা না হয়ে পুঁজি হিসেবে বিকশিত হবে। আইজিপি বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যত এগিয়ে আসবেন ততই দেশের উন্নতি হবে।
আইজিপি এ সময় প্রতি মাসে তাঁর বেতনের একটি অংশ জুমবাংলাকে দেয়ার কথা ঘোষণা করেন।
পুনাক সভানেত্রী ফুলের মতো শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জুমবাংলাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি শিশুদের জন্য কমলা এবং চকলেট নিয়ে যান।
অনুষ্ঠানে জুম বাংলা স্কুলের কৃতি শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ, চার শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র, শিক্ষা উপকরণ এবং উন্নতমানের খাবার বিতরণ করা হয়।
এর আগে আইজিপি পুনাক সভানেত্রী ও অন্যান্য অতিথিদের সাথে নিয়ে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে জুমবাংলার শীত উৎসব ২০২১ উদ্বোধন করেন।
পরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জুম বাংলা স্কুলের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, জুম বাংলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক সামাজিক সংগঠন। সংগঠনটি পথ শিশু ও সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ, ইয়ুথ লিডারশিপ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, পরিবেশ সংরক্ষণ, ভলেন্টিয়ার ওয়ার্কশপ, আত্ম-কর্মসংস্থান, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ, দেশাত্মবোধ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
সংগঠনটি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ঢাকায় ছয়টি স্কুল পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে তিনটি আনুষ্ঠানিক এবং তিনটি অনানুষ্ঠানিক। এছাড়া, ঢাকার বাইরে গাইবান্ধায়ও সংগঠনটির একটি আনুষ্ঠানিক স্কুল রয়েছে। বর্তমানে ঢাকার বাইরে দশটি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে জুমবাংলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন।