শিক্ষক দিবসে ভাবনা
শিক্ষকরা জাতির বিকাশের মূল অনুপ্রেরনা।
মানুষ জন্মের পর থেকেই শিখতে শুরু করে।
প্রথমে মা, পরিবার,পরিবেশ প্রতিবেশ এবং গুরত্বপূর্ন হচ্ছে প্রতিষ্ঠান।প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়।রাজনৈতিক দল,সাংস্কৃতিক সংগঠন সহ লাইব্রেরি,বই পড়া,সাহিত্য আলোচনা এবং পত্র পত্রিকা ,মিডিয়া থেকেও শিখন সম্ভব ।
শিক্ষকের দায়িত্ব পথ চিনিয়ে দেয়া।
প্রকৃত শিক্ষিত হতে হলে নিজেকেই সেই চেষ্ঠাব্রতী হতে হবে।
সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত— প্রমথ চৌধুরী।
অতীতকালে সেভাবে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না।
তখন গুরু গৃহই ছিল শিক্ষায়তন।শিক্ষার্থীরা গুরুর বাড়ীতে থাকতেন,খেতেন।গুরুর সাংসারিক কাজও করতেন।বিনিময়ে ছিল শিক্ষা লাভ।
মুসলমান পরিবারেও মৌলভী সাহেবকে রাখা হতো কোরআন ও হাদিস শিক্ষা দেয়ার জন্য।
ব্রিটিশ শাসনের সময় এ দেশীয়দের দাবীর প্রেক্ষিতে ১৭৮০ সালে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। উচ্চ বর্ণ হিন্দুরা ১৮১৭ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করে হিন্দু কলেজ।
বলা যেতে পারে সেই থেকে শুরু হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্খাপনের ।
এবার আসি আমার শিক্ষকদের সম্পর্কে কিছু কথায়ঃ
রানীগাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমি ভর্তি হই।শিক্ষক হিসেবে পাই মরহুম নুরুল হক স্যারকে। অত্যন্ত কঠোর।গনিত থেকে বাংলা পড়াতেন।বেতও মারতেন কিছু অন্যথা হলে।
তিনি খুব ধার্মিক ছিলেন ।ইমামতি করতেন স্থানীয় মসজিদে।
অন্য স্যার যারা ছিলেন শামসুল হক স্যার ,মেরাজ আলী স্যার ।
তারাগন্জ হাই স্কুলে অনেক শ্রেষ্ঠ শিক্ষককে পেয়েছি।
স্বর্গীয় নগেন্দ্রচন্দ্র পাল বিএ বিটি।আমাদের হেড স্যার।
স্যার নালিতাবাড়ীর বাতিঘর।আমার আব্বারও শিক্ষক তিনি।স্যারকে নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থের কাজ চলছে।
প্রিয় পাঠক একটু অপেক্ষা করবেন এই জ্ঞানতাপস
সম্পর্কে জানার জন্য।
আরো যাদের কাছ থেকে জানার সুযোগ পেয়েছিঃ
শ্রদ্ধায় উপেন স্যার।
কবিতা এ বিজ্ঞান প্রবন্ধটি তিনি পড়াতেন।এখনো স্যারের কথা গুলো কানে বাজে,
কবি পথের কথা ভাবেন না,বিজ্ঞানী পথটাকে উপেক্ষা করেন না।যেন নহে ,এই সেই।
কতযেগভীরতা ছিলে বিষয়বস্তু উপস্থাপনে।
বড় মৌলভী স্যার ইব্রাহিম খলিল দেওবন্দী।আমার দাদীর দিকে সম্পর্কে ফুপা। স্পষ্টভাষী মানুষ।
তাঁর পড়ানো ছিল আকর্ষনীয়।
আবুল হোসেন স্যার ইংরেজী পড়াতেন।কালা আবুল নামে পরিচিত।ক্লাশে খুব ছাত্র প্রিয়।
মো আব্দুল করিম বিএসসি বিএড।পদার্থবিদ্যাপড়াতেন।অসাধারন পড়াতেন। মেধাবী শিক্ষক,হাতে কলমে বুঝিয়ে দিতেন।ইলেকটিভ ম্যাথ খুব ভাল পড়াতেন।ক্লাশেরপরিবেশ থাকতো খুব সুশৃংখল ।
আশরাফ স্যার রসায়ন,জীববিদ্যা ও সাধারন গনিত পড়াতেন। আন্তরিকতায় পূর্ন ক্লাস।
কুদ্দুস স্যার ক্লাস সেভেনে বিজ্ঞান পড়াতেন।চমৎকার উপস্থাপন।দরদী মনের একজন শিক্ষক।
মরহুম সেকান্দর আলী তালুকদার স্যারের ক্লাস আমি পাইনি।আমার আব্বার শিক্ষক।বড়দের কাছে শুনেছি স্যারকে বলা হতো অংকের জাহাজ ।সব অংকের ফল স্যারের মুখস্ত।
পন্ডিত স্যার ।নালিতাবাড়ীর একজন মানুষ যদি বাছাই করা হয় যিনি শুদ্ধ কিংবা পরিমিত বাংলায় কথা বলতে পাড়েন তিনি পন্ডিত স্যার।ছয় কিমি হেঁটে বাড়ী থেকে স্কুলে যাওয়া এবং ছয় কিমি হেটে বাড়ীতে ফিরা আসা মানুষটি মধ্য নব্বই অতিক্রম করছেন।সুঠাম দেহের গৌর বর্নের এই ব্রাহ্মণকে ইউরোপীয় পোশাক পরালে ইংল্যান্ডের রাজকুমার মনে হতো।না থাক,তাহলে আমরা স্যারকে হারাতাম।
দারিদ্র্যতা তার জীবনসংগী।তবু হাসিমুখ সর্বদা।দারিদ্রতা দানিয়াছে তাঁকে খ্রিষ্টের সম্মান।
স্যারকে দেখলে ও শুনলে গুরুগৃহ সময়ের গুরুকে মনে হয়ে যায়।
নব যুগ আসে বড় দুঃখের মধ্য দিয়ে———
নবম শ্রেনীর ক্লাসে স্যারের সেই জলদগম্ভীর উচ্চারন মনে পড়লে প্রশান্ত সাগরের কলরোল হৃদয়কে উদ্ভাসিত করে।
রহমান স্যার,নরুল ইসলাম স্যার,বনভাসী রায়স্যার সবার সাথেই অনেক আনন্দ স্মৃতি আপাতত উল্লেখ করছি না।
ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে যাদের কথা মনে পড়ছেঃ
আবদুল্লা আবু সায়ীদ।পড়াতেন হৈমন্তী।
জৈষ্টের খররৌদ্রইতো জৈষ্টের অশ্রুশূন্য রোদন
কিংবা
পটের ছবিটি মনের আয়নায় পড়তেই দখিনা বাতাস বইতে লাগলো।
রবীন্দ্রনাথ জীবনশিল্পী।দার্শনিক কবি।রবীন্দ্রনাথের
কী যে বৈচিত্র ভরা উপস্থাপন।পিন পতন নিরবতা ক্লাশে।
মনে পড়ছে আকন্দ আবুল খায়ের লুৎফুজ্দামান স্যারের ক্লাস।গনিত পড়াতেন।গৌরাঙ্গ দেব রায়। সবুর চৌধুরী ,হাসেম স্যার।
নজীবউদদোলা স্যার পড়াতেন আমার পূর্ববাংলা।
রওশনআরা রহমান ম্যাডাম ,দিলারা ম্যাডাম।
ঢাকা কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ছিলেন প্রথম শ্রেনীতে প্রথম।প্রথম ক্লাশে তাদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউল্ড বলতেন।এ রকম রীতি ছিল।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদযালয়ের শিক্ষক যাদের কাছে ঋণীঃ
ডঃ মজিবুর রহমান বিশ্বাস
ডঃ মইনুল হোসেন
শওকত স্যার সহ অনেকে
সব কথা লেখা সম্ভব হচ্ছে না,অপাঠ্য মহাকাব্য হয়ে যাবে।
একদিন ছিল শিক্ষকরা কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই বা নামমাত্র সম্মানীতে শিক্ষকতা করতেন।
তাঁরা ছিলেন আলো হাতে আধাঁরের যাত্রী।
সালাম আর শ্রদ্ধা। সক্রেটিস ,প্লাটো ও এরিস্টটল দার্শনিক হলেও মূলত শিক্ষক ।
আজ শিক্ষা বিস্তৃত সারা দেশে।অগণিত স্কুল কলেজ মাদ্রাসা
বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষকের মান নেমেছে শিক্ষার মানও নেমেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের বিনিয়োগ বিপুল।শিক্ষা নিয়ে ব্যবসাও চলছে।সার্টিফিকেটের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু শিক্ষার্খীর গুন বাড়ে
নাই।শিক্ষকতা আজকে চাকরী হয়ে গেছে।ব্রতচারী মনোভাব নেই। সময় এসেছে মূল্যায়ন করার আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার মান ভারত,মালয়েশিয়া ,জাপান,উন্নত দেশের তুলনায় কোন পর্যায়ে??
এতো বেকার সৃষ্টির শিক্ষা দিয়ে ছাত্রের কিংবা দেশের লাভ কী??
অকার্যকর কিংবা জীবনমিমুখ শিক্ষার নামে উ্তপাদনশীলতাকে কেন ক্ষতি গ্রস্ত করছি?
তারুন্য ও যৌবনকে কেন পূর্ণ বিকাশ হতে দিচ্ছি না!
Demographic dividend অর্জনে দেশ যথেষ্ট এগোয়নি?
আমি আশাবাদী মানুষ ॥
এরমধ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন বহু শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।যারা প্রকৃত মানুষ তৈরীর কাজকে জীবন সাধনা হিসেবে গ্রহন করেছেন।
তাঁরাই আমাদের নমস্য।
বিশ্বন্ভরপুরে পেয়েছিলান দিলীপ বাবু।অসাধারন প্রাথমিক শিক্ষক।একটি মরা জনপদে স্বর্ণ চাষ করেছেন।
আজ এই মহতী দিবসে সকল শিক্ষককে শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।যাঁরা চলে গেছেন আল্লাহ মংগল করুন।
লেখক : মো: আবদুস সামাদ, এসডিএফ চোয়ারপার্সোন, সাবেক সিনিয়র সচিব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সাবেক সফল বিভাগীয় কমিশনার খুলনা।
।