নদীমাতৃক এই দেশের নৌ পথের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য নৌ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় অত্যন্ত সফলতার সাথে নৌ পুলিশ আজ নবম বছরে পদার্পণ করেছে।বিশেষায়িত এই ইউনিটটি গৌরব, এতিহ্য ও সংগ্রামের নবম বর্ষ উদযাপন করছে।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল স্বাধীন সোনার বাংলা বিনির্মাণ। বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্ন বাস্তবায়ণে তাঁর সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবহমান বাংলার নৌ পথ সুরক্ষার জন্য ২০১০ সালে একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের ধারনা প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ পুলিশে নৌ পুলিশ নামে একটি বিশেষায়িত ইউনিট আত্মপ্রকাশ করে।

নৌ পুলিশের নবম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ। এই উপলক্ষ্যে আগামী ১৪ নভেম্বর (সোমবার) বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়াম রাজারবাগ ঢাকায় বর্ণিল আয়োজনে নৌ পুলিশের নবম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে। এই অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র  মন্ত্রণালয়ের  মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের  মন্ত্রী  শ ম রেজাউল করিম এম পি, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের  প্রতিমন্ত্রী  খালিদ মাহমুদ  চৌধুরী এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব  মোঃ আমিনুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম(বার),পিপিএম সহ নৌ নিরাপত্তা এবং মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।

নৌ পুলিশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে নৌ পথে নৌ চলাচলে শৃংখলা আনয়ন, মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণ অবৈধ কারেন্ট জালের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ,বানা/ঝোপ অপসারণ, নদী দূষণ রোধ,অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ, নৌ পথে চুরি ও ডাকাতি সহ অপরাধ নিয়ন্ত্রনের জন্য পেশাদারিত্বের  সাথে দায়িত্ব পালন করছে। নৌ পুলিশের এই কর্মতৎপতার জন্য দেশে জাতীয় মাছ ইলিশ সহ সকল প্রকার মাছের উৎপাদন বেড়েছে, নৌ দুর্ঘটনা কমাতে রাত্রিকালীন বাল্ক হেড চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বহুলাংশে কমেছে,বঙ্গবন্ধু হ্যারিটেজ নামে খ্যাত হালদা নদীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে হালদা নদীর জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধসহ ওই এলাকার অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে নৌ পুলিশ।

নৌ পুলিশের অধিক্ষেত্র পুরো বাংলাদেশ ব্যাপী। ২০২০ সালের ১০ ই মার্চ নৌ পুলিশের বিধিমালা প্রণয়নের পর হতে অদ্যাবধি নৌ পুলিশ ২৭২০ টি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে জনগনের কাংক্ষিত সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

নৌ  পথ বাংলাদেশের জনগনের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের অন্যতম  মাধ্যম। নৌ পথে  প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ যেকোন বিপদে জনগনের প্রয়োজনে সদা তৎপর নৌ পুলিশ । বৈরী আবহাওয়ার কারণে নৌকা ডুবি, নৌযান ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা, নৌ  পথে পথ হারানোসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা হতে নৌ পুলিশ এ পর্যন্ত  ৩৯০০ জন কে উদ্ধার করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় নৌ পুলিশ সক্রিয় ছিল।  সিলেটে বন্যার্তদের প্রাথমিক সাহায্য প্রদান সহ বন্যার গৃহবন্দীদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছে নৌ পুলিশ। এছাড়া  ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় নৌ পুলিশ আবহাওয়া বিজ্ঞপ্তি প্রতিটি নৌ অধিক্ষেত্রে প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে এবং  ১৪৫ জন সাধারন মানুষকে  ঘূর্ণিঝড় “সিত্রাং” কবলিত এলাকা হতে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছানো সহ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে ।

নৌ পুলিশ প্রধান বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম(বার),পিপিএম বলেন,” নৌ পথে জনগণকে নিরাপত্তা প্রদানে নৌ পুলিশ কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। দেশের মৎস্য সম্পদরক্ষার্থে নৌ পুলিশ প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে। দেশের অর্থনৈতিক  উন্নয়নের অন্যতম একটি উৎস হচ্ছে এই মৎস্য সম্পদ। এই মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষনের জন্য নৌ পুলিশ সারা বছরব্যপি বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে থাকে। পাশাপাশি মৎস্য পেশার সাথে জড়িত সকল সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতেও নৌ পুলিশ কাজ করে চলেছে। ফলশ্রুতিতে, বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমানে মাছের উৎপাদন ব্যপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, নদীতে নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করায় নৌ অধিক্ষেত্রে অপরাধের  পরিমান বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। নৌ পুলিশ প্রতিষ্ঠার নবম বছরের অগ্রযাত্রায় নৌ পুলিশ নৌ পথে জনগনের ভরসাস্থলে পরিনত হয়ে উঠেছে। “

-ডিএমপি নিউজ।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন