অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হওয়া এক শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিয়েছেন রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার। তাপস সরকার নামে ওই শিক্ষার্থী এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় ২৯তম স্থান অর্জন করেছেন। আর্থিক দীনতায় পরিবারের পক্ষে তার পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি পুলিশ সুপার বিপ্লবের নজরে আসে।
বৃহস্পতিবার তাপসের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নগদ অর্থ তুলে দেন বিপ্লব। এসময় তিনি তাপসের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সবধরনের সহায়তা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
জানা যায়, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার রহিমাপুর খিয়ারপাড়া গ্রামে বাড়ি তাপস সরকারের। লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করেন কৃষি ক্ষেতে। বাবা পুতুল চন্দ্র সরকার রংপুর শহরে রিকশা চালাতেন। কিন্তু তিন বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনি এখন কর্মোক্ষম। মা মালতী রানী অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। অভাবের সংসারে পড়াশোনার হাল ছাড়েননি তাপস। ২০১৬ সালে তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.৮৩ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এছাড়া ২০১৮ সালে বাণিজ্য বিভাগে থেকে একই পয়েন্ট পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। শত কষ্টেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ভর্তি ফরম তোলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ‘সি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা মেধা তালিকা ২৯তম স্থান লাভ করেন। ৫ জানুয়ারির মধ্যে ভর্তির সুযোগ থাকলেও অর্থ সংকটে তাতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরিবারের সদস্যরাও চেষ্টা করেও ভর্তির টাকা জোগাড়ে ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে জাতীয় একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে বিষয়টি নজরে আসে পুলিশ সুপার বিপ্লব সরকারের।
বৃহস্পতিবার বিকালে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ডেকে আনেন তাপসকে। ভর্তি বাবদ তুলে দেন নগদ ১৫ হাজার টাকা। এসময় পুলিশ সুপার তার পড়াশোনার সব দায়িত্ব নেন।
পুলিশ সুপারের কাছ থেকে এমন সহযোগিতায় খুশি তাপস। পুলিশ কর্মকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুলেননি। তাপস বলেন, ‘আমার পরিবারের সামর্থ্য ছিল না বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার। এখন আমি ভর্তি হতে পারব। … আমি অনেক খুশি।’
মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়াশোনা চালাতে এগিয়ে আসায় প্রশংসা কুড়িয়েছে রংপুরের পুলিশ সুপার। এ ঘটনায় ছবিসহ একটি পোস্ট ফেসবুকে ছাড়েন তিনি। বর্তমানে তিনি সোস্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছায় ভাসছেন। অনেকে লিখেছেন, ‘প্রতিটি জেলায় বিপ্লব কুমারের মতো একজন পুলিশ কর্মকর্তা দরকার। তাহলে পুলিশের প্রতি মানুষের ধারণা পাল্টাবে।’ কেউ লিখেছেন- পুলিশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করলেন বিপ্লব কুমার সরকার স্যার।
তাপসের কাছ থেকে তার জীবনের কষ্টের গল্প শুনে ব্যর্থিত হয়েছে পুলিশ সুপার নিজেও। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন রাতে অনলাইনে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পড়ি। হঠাৎ বুধবার বিষয়টি আমার নজরে আসে। সংবাদটি পড়ার পর আমার খুবই খারাপ লাগছিল। ভাবলাম মাত্র কিছু টাকার জন্য পড়াশোনা করতে পারবে না, তা তো হবে না। রাতেই স্থানীয় থানা তারাগঞ্জের ওসিকে বিষয়টি নিয়ে এসএমএম করি। পরের দিন ওসি সাহেব তাকে নিয়ে আমার অফিসে আসেন। তাপসের মুখ থেকে তার কষ্টের কথা শুনে আমি নিজেও আবেগ ধরে রাখতে পারিনি।’
‘আমি তাপসের ভর্তির জন্য যা প্রয়োজন ছিল দিয়েছি। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যে সহযোগিতা প্রয়োজন তা দেব। আমি চাই তার স্বপ্ন পূরণ হোক।‘
সমাজের অনেকের সামর্থ্যবান লোক আছে তাদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বিপ্লব। বলেন, ‘একটু একটু করে যদি আমরা ভালো কাজে জড়িয়ে যাই তাহলে সমাজ পরিবর্তন হয়ে যাবে; মানুষের কষ্টও পরিবর্তন হয়ে যাবে। ২০৪১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন, তা গড়বে তাপসের মতো মেধাবীরা। দোয়া করি তাপস সেই উন্নত বাংলাদেশ একজন কারিগর হিসেবে গড়ে উঠুক।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর রেকর্ডসংখ্যক ২৩ বার শ্রেষ্ঠ উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসেবে পুরস্কৃত হন তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার। ১৩ জুন তাকে রংপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে বদলি করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে।